বিশ্ব শেয়ারবাজারে ধস: ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাব
বিশ্বের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতন দেখা দিয়েছে, যার অন্যতম কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি। বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাবের কারণে আমেরিকা ও এশিয়ার বাজারে এই ধস নামে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
এক টিভি সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এরপরই বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। ট্রাম্পকে যখন সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করতে অনীহা প্রকাশ করেন। তবে তার এই মন্তব্যের পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে, যা বাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
এশিয়ার বাজারে ধস আজ মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দিনের শুরুতেই জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ২.৫ শতাংশ কমে যায়, দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি সূচক ২.৩ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ার এসঅ্যান্ডপি/এএসএক্স ২০০ সূচক ১.৮ শতাংশ হ্রাস পায়। বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা, বিশ্বব্যাপী শুল্কনীতি কঠোর হলে ব্যবসায়িক পরিবেশ আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক প্রভাব নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জেও বড় ধরনের ধস নেমেছে। গতকাল (১০ মার্চ) এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ২.৭ শতাংশ, ডাও জোন্স ২ শতাংশ এবং প্রযুক্তি খাতের নাসডাক ৪ শতাংশ পতনের শিকার হয়। বিশেষত টেসলার শেয়ার ১৫.৪ শতাংশ কমে গেছে, আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপ নির্মাতা নাভিদিয়ার শেয়ার ৫ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া মেটা, অ্যামাজন এবং অ্যালফাবেটের শেয়ারও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতামত কেসিএম ট্রেডের প্রধান বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেছেন, “ট্রাম্প তার শুল্কনীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতাদের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছেন, কিন্তু বিনিয়োগকারীদেরও অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত।”
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টারা আশ্বস্ত করছেন যে, ট্রাম্পের নীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ বাড়ছে এবং উৎপাদন খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কুশ দেশাই বলেছেন, “শিল্প নেতারা ট্রাম্পের নীতির প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন এবং বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।”
তবে অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ এল-এরিয়ান বলেছেন, “শুরুতে বিনিয়োগকারীরা কর ছাড় ও নিয়ন্ত্রণ শিথিলের বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন, কিন্তু এখন তারা বাণিজ্য যুদ্ধের সম্ভাব্য নেতিবাচক দিকগুলো বুঝতে শুরু করেছেন।” অন্যদিকে, ট্রাম্পের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কেভিন হাসেট মনে করেন, শুল্কনীতি যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।