সংস্কৃতির অবিচল যাত্রা নিশ্চিত করলেই ভবিষ্যৎ হবে মুক্তময়: ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি

- আপডেট সময় ১১:২৭:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫
- / 57
বাংলাদেশের মানুষ এক হয়ে শান্তি, স্বস্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ধর্ম, জাতি ও আর্থিক বিভাজনকে অতিক্রম করে একটি সহিষ্ণু, উদার ও সম্প্রীতির সমাজ গড়বে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক সারওয়ার আলী। তিনি বলেন, ‘‘এই আলোকিত সমাজ গড়ার পথ আমাদের হৃদয়ে ধারণ করতে হবে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা এবং মুক্তচিন্তার সাহসিকতা দিয়ে।’’
আজ সোমবার ভোরে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে রাজধানীর রমনা বটমূলে ছায়ানট আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে শেষপর্বের বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সকাল সোয়া ছয়টায় শিল্পী সুপ্রিয়া দাশের ভৈরবী রাগালাপ দিয়ে শুরু হয় দিনবদলের এই আয়োজন। সকাল সাড়ে আটটায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান।
‘নববর্ষের কথন’ শীর্ষক লিখিত বক্তব্যে সারওয়ার আলী বলেন, “অর্ধশতাব্দীরও আগে বিপুল আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সেই সংগ্রামের নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের শিল্প, সাহিত্য, সংগীত, স্থাপত্যসহ নানা মাধ্যমে। সেই স্বাধিকার অর্জনের ইতিহাসকে বহন করে এই অসাম্প্রদায়িক নববর্ষও।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলার নতুন বছরকে বরণের এই আয়োজন আমাদের জাতীয় চেতনার অনন্য বহিঃপ্রকাশ। এটি কেবল উৎসব নয়, বরং মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ।”
সারওয়ার আলী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও আমরা প্রত্যাশা ও বাস্তবতার দ্বন্দ্বে দুলছি। একদিকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে সমাজে বাড়ছে বিদ্বেষ, বিভাজন ও সহিংসতা। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, অসহিষ্ণুতা, মানবাধিকারের লঙ্ঘন আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
তবে হতাশ না হয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রকে সমানভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি। তাঁর কথায়, “রাষ্ট্রের যেমন দায় রয়েছে নাগরিকদের সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করার, তেমনি সমাজকেও নিতে হবে মানবিক দায়িত্ব। আমাদের সবাইকে মিলে সংরক্ষণ করতে হবে ইতিহাস-ঐতিহ্য, উন্মুক্ত রাখতে হবে মুক্তচিন্তার পথ এবং নিরবিচারে ছড়িয়ে দিতে হবে সাংস্কৃতিক চেতনার আলো। তাহলেই সম্ভব হবে একটি আলোকিত ভবিষ্যতের দিগন্ত উন্মোচন।”
রমনার ছায়ানট মঞ্চ থেকে আজও যে কণ্ঠ উঠে এল, তা শুধুই গান নয় একটি জাতির আত্মপরিচয় ও সাম্য-সম্প্রীতির আহ্বান।