ঢাকা ০৪:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ-চীন অংশীদারত্বে নতুন গতি: অবকাঠামো, স্বাস্থ্য ও বাণিজ্যে যুগান্তকারী সম্ভাবনা

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৯:৪৫:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫
  • / 40

ছবি সংগৃহীত

 

ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন রবিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন। এ বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সহযোগিতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

চীনা রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক চীন সফরের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং বলেন, “এখন সময় চুক্তির অপেক্ষা নয়, বরং তা বাস্তবায়নের।” তিনি জানান, চীনের শীর্ষ পর্যায়ে ইতোমধ্যে আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে এবং এ মুহূর্তে পারস্পরিক সম্পর্ককে বাস্তবভিত্তিক রূপ দেওয়াই মূল লক্ষ্য।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমাদের অগ্রাধিকার হলো পরিকল্পনার গতি ধরে রাখা। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, যা আলোচনা হয়েছে তা থেমে না গিয়ে বাস্তবে রূপ নিক।”

বৈঠকে মোংলা ও আনোয়ারা অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন, চীন থেকে চারটি নতুন জাহাজ কেনার অগ্রগতি, এবং স্বাস্থ্যখাতে ১ হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিশেষ করে চট্টগ্রামে একটি বার্ন ইউনিট স্থাপন এবং কুনমিং-চট্টগ্রাম সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়টি গুরুত্ব পায়।

চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী শিগগিরই বাংলাদেশ সফরে আসছেন এবং তাঁর নেতৃত্বে ১০০ সদস্যের একটি বিনিয়োগ প্রতিনিধি দল আসবে, যারা নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা যাচাই করবেন। বিডার চেয়ারম্যান আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, খাতভিত্তিক চীনা বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে একটি ক্ষুদ্র বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজন করা হবে।

বৈঠকে কৃষি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি খাতেও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়। চীনে এ বছর থেকেই বাংলাদেশের আম রপ্তানি শুরু হচ্ছে, আগামী বছর কাঁঠালও যুক্ত হবে। ইউনূস বলেন, “আমি নিজেই রাষ্ট্রপতি শি’র কাছে এক ঝুড়ি তাজা আম পাঠাব।”

তিনি চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুরে লোকোমোটিভ উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির কথাও তুলে ধরেন।

অধ্যাপক ইউনূস একটি চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন, যাতে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম সাংস্কৃতিক বন্ধনে আরও ঘনিষ্ঠ হতে পারে।

বৈঠকে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনায় ৫০ বছর মেয়াদী মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের বিষয়েও দুই পক্ষ প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিউর রহমান, মুখ্য সচিব সিরাজউদ্দিন মিয়া এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা।

বিষয় :

নিউজটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ-চীন অংশীদারত্বে নতুন গতি: অবকাঠামো, স্বাস্থ্য ও বাণিজ্যে যুগান্তকারী সম্ভাবনা

আপডেট সময় ০৯:৪৫:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

 

ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন রবিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন। এ বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সহযোগিতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

চীনা রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক চীন সফরের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং বলেন, “এখন সময় চুক্তির অপেক্ষা নয়, বরং তা বাস্তবায়নের।” তিনি জানান, চীনের শীর্ষ পর্যায়ে ইতোমধ্যে আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে এবং এ মুহূর্তে পারস্পরিক সম্পর্ককে বাস্তবভিত্তিক রূপ দেওয়াই মূল লক্ষ্য।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমাদের অগ্রাধিকার হলো পরিকল্পনার গতি ধরে রাখা। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, যা আলোচনা হয়েছে তা থেমে না গিয়ে বাস্তবে রূপ নিক।”

বৈঠকে মোংলা ও আনোয়ারা অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন, চীন থেকে চারটি নতুন জাহাজ কেনার অগ্রগতি, এবং স্বাস্থ্যখাতে ১ হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিশেষ করে চট্টগ্রামে একটি বার্ন ইউনিট স্থাপন এবং কুনমিং-চট্টগ্রাম সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়টি গুরুত্ব পায়।

চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী শিগগিরই বাংলাদেশ সফরে আসছেন এবং তাঁর নেতৃত্বে ১০০ সদস্যের একটি বিনিয়োগ প্রতিনিধি দল আসবে, যারা নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা যাচাই করবেন। বিডার চেয়ারম্যান আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, খাতভিত্তিক চীনা বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে একটি ক্ষুদ্র বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজন করা হবে।

বৈঠকে কৃষি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি খাতেও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়। চীনে এ বছর থেকেই বাংলাদেশের আম রপ্তানি শুরু হচ্ছে, আগামী বছর কাঁঠালও যুক্ত হবে। ইউনূস বলেন, “আমি নিজেই রাষ্ট্রপতি শি’র কাছে এক ঝুড়ি তাজা আম পাঠাব।”

তিনি চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুরে লোকোমোটিভ উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির কথাও তুলে ধরেন।

অধ্যাপক ইউনূস একটি চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন, যাতে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম সাংস্কৃতিক বন্ধনে আরও ঘনিষ্ঠ হতে পারে।

বৈঠকে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনায় ৫০ বছর মেয়াদী মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের বিষয়েও দুই পক্ষ প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিউর রহমান, মুখ্য সচিব সিরাজউদ্দিন মিয়া এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা।