ঢাকা ১০:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
ঈদের দিনেও গাজায় রক্তক্ষরণ: ইসরায়েলি হামলায় ৪২ ফিলিস্তিনি নিহত জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পবিত্র ঈদুল আযহায় স্বাস্থ্যসচেতনতা: সুস্থ থাকুন, নিরাপদে ঈদ করুন আর্জেন্টিনার জয় চিলিতে, গোল আলভারেজের ঈদুল আজহা উপলক্ষে ওমানে ৬৪৫ কারাবন্দিকে ক্ষমা দিলেন সুলতান হাইথাম দুবাইয়ে ঈদুল আজহার নামাজ সম্পন্ন, ঈদগাহে মুসল্লিদের ঢল বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ বিলিয়ন ডলারে ফের অন্তঃসত্ত্বা ‘দৃশ্যম’ অভিনেত্রী ঈশিতা দত্ত, প্রকাশ্যে বেবি বাম্প বেলুন, রশি আর জেদ, এই তিন দিয়েই ডুবন্ত যুদ্ধজাহাজ তুলল উত্তর কোরিয়া 🕋 পবিত্র হজ আজ

ভারত ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখার দুই পাশে আতঙ্কে জনজীবন, বাড়ছে বাস্তুচ্যুতি

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০১:০২:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫
  • / 32

ছবি: সংগৃহীত

 

নিয়ন্ত্রণরেখা ঘিরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাতে দিন কাটছে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোর সাধারণ মানুষের ভয় ও আতঙ্কে। গোলাবর্ষণ আর বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠছে গ্রাম থেকে শহর। প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, সীমান্তবর্তী বহু গ্রাম এখন প্রায় জনশূন্য, গোলায় ধ্বংস হয়েছে বহু ঘরবাড়ি।

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরি ও কুপওয়ারা ঘুরে বিবিসির সংবাদদাতা আমীর পীরজাদা জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষ গোলাগুলিতে অভ্যস্ত হলেও কুপওয়ারার ক্রালপোরা গ্রামের তনভির আহমেদ জানালেন, জীবনে এই প্রথম তাদের গ্রামে গোলা এসে পড়েছে। শুক্রবার ভোরে তার বাড়ির সামনে গোলা পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি ট্রাক ও মাটি কাটার যন্ত্র। তবে সৌভাগ্যবশত পরিবারটি সময়মতো ৫০০ মিটার দূরের আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গিয়েছিল। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ওই গ্রামে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য কোনো বাংকার ছিল না।

উরির আরেক বাসিন্দা নিসার হুসেইন বলেন, “রাতে মসজিদের বেসমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সকালে ফিরে দেখি বাড়ির পাশে তিনটি গোলা পড়েছে। বাড়ির একটি অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে।”

পুঞ্চ জেলার সুরানকোট ঘুরে বিবিসির ডেভিনা গুপ্তা জানিয়েছেন, পাকিস্তানে ভারতের সাম্প্রতিক হামলার পর সীমান্তজুড়ে গোলাবর্ষণ বেড়েছে বহুগুণ। স্থানীয় বাসিন্দা সোবিয়া জানান, “রাতে বিস্ফোরণের শব্দে এক মাসের শিশু সন্তানকে নিয়ে দৌড় দিই। কোনো যানবাহন না পেয়ে বহু দূর হেঁটে যেতে হয়েছে। ভয় আর কান্নায় রাস্তা পার হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল।”

অন্যদিকে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের চাকোঠি গ্রামের বাসিন্দা কিফায়াত হুসেইন জানান, “বাচ্চারা এত গোলাবর্ষণ জীবনে দেখেনি। ১৯৯৯ সালের যুদ্ধের সময় যা হয়েছিল, এবারও তেমন মনে হচ্ছে।” তিনি জানান, সিমেন্টের তৈরি একটি বাথরুমেই পরিবার নিয়ে রাত কাটিয়েছেন।

২০০৫ সালের ভূমিকম্পের পর ওই অঞ্চলের ঘরগুলোর ছাদে ব্যবহৃত টিন গোলাবর্ষণ প্রতিরোধে একেবারেই অকার্যকর। গোলা পড়ার পর বাসনপত্র ছিটকে পড়তে থাকে, বাচ্চারা ভয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।

নীলাম উপত্যকা থেকে পরিবারসহ মুজাফফরাবাদে চলে আসা মুহাম্মদ শাগির জানান, “বাড়ির সামনে ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার পর আর দেরি করিনি। ছোট ছোট বাচ্চারা আতঙ্কে চিৎকার করছিল। সকালেই আমি ওদের নিয়ে বোনের বাড়িতে চলে আসি।”

এই সব কাহিনি কেবল যুদ্ধের নির্মমতার নয়, সাধারণ মানুষের অসহায়তার চিত্রও তুলে ধরে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ভারত ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখার দুই পাশে আতঙ্কে জনজীবন, বাড়ছে বাস্তুচ্যুতি

আপডেট সময় ০১:০২:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

 

নিয়ন্ত্রণরেখা ঘিরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাতে দিন কাটছে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোর সাধারণ মানুষের ভয় ও আতঙ্কে। গোলাবর্ষণ আর বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠছে গ্রাম থেকে শহর। প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, সীমান্তবর্তী বহু গ্রাম এখন প্রায় জনশূন্য, গোলায় ধ্বংস হয়েছে বহু ঘরবাড়ি।

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরি ও কুপওয়ারা ঘুরে বিবিসির সংবাদদাতা আমীর পীরজাদা জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষ গোলাগুলিতে অভ্যস্ত হলেও কুপওয়ারার ক্রালপোরা গ্রামের তনভির আহমেদ জানালেন, জীবনে এই প্রথম তাদের গ্রামে গোলা এসে পড়েছে। শুক্রবার ভোরে তার বাড়ির সামনে গোলা পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি ট্রাক ও মাটি কাটার যন্ত্র। তবে সৌভাগ্যবশত পরিবারটি সময়মতো ৫০০ মিটার দূরের আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গিয়েছিল। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ওই গ্রামে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য কোনো বাংকার ছিল না।

উরির আরেক বাসিন্দা নিসার হুসেইন বলেন, “রাতে মসজিদের বেসমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সকালে ফিরে দেখি বাড়ির পাশে তিনটি গোলা পড়েছে। বাড়ির একটি অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে।”

পুঞ্চ জেলার সুরানকোট ঘুরে বিবিসির ডেভিনা গুপ্তা জানিয়েছেন, পাকিস্তানে ভারতের সাম্প্রতিক হামলার পর সীমান্তজুড়ে গোলাবর্ষণ বেড়েছে বহুগুণ। স্থানীয় বাসিন্দা সোবিয়া জানান, “রাতে বিস্ফোরণের শব্দে এক মাসের শিশু সন্তানকে নিয়ে দৌড় দিই। কোনো যানবাহন না পেয়ে বহু দূর হেঁটে যেতে হয়েছে। ভয় আর কান্নায় রাস্তা পার হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল।”

অন্যদিকে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের চাকোঠি গ্রামের বাসিন্দা কিফায়াত হুসেইন জানান, “বাচ্চারা এত গোলাবর্ষণ জীবনে দেখেনি। ১৯৯৯ সালের যুদ্ধের সময় যা হয়েছিল, এবারও তেমন মনে হচ্ছে।” তিনি জানান, সিমেন্টের তৈরি একটি বাথরুমেই পরিবার নিয়ে রাত কাটিয়েছেন।

২০০৫ সালের ভূমিকম্পের পর ওই অঞ্চলের ঘরগুলোর ছাদে ব্যবহৃত টিন গোলাবর্ষণ প্রতিরোধে একেবারেই অকার্যকর। গোলা পড়ার পর বাসনপত্র ছিটকে পড়তে থাকে, বাচ্চারা ভয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।

নীলাম উপত্যকা থেকে পরিবারসহ মুজাফফরাবাদে চলে আসা মুহাম্মদ শাগির জানান, “বাড়ির সামনে ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার পর আর দেরি করিনি। ছোট ছোট বাচ্চারা আতঙ্কে চিৎকার করছিল। সকালেই আমি ওদের নিয়ে বোনের বাড়িতে চলে আসি।”

এই সব কাহিনি কেবল যুদ্ধের নির্মমতার নয়, সাধারণ মানুষের অসহায়তার চিত্রও তুলে ধরে।