গোপালগঞ্জে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবেদন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের

- আপডেট সময় ০৩:৩৮:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
- / 10
গোপালগঞ্জে এনসিপি সমাবেশ ঘিরে হামলা-সহিংসতার ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবেদন দিয়েছে বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
আসক বলছে, গোপালগঞ্জে গত ১৬ জুলাই এনসিপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘাতের ঘটনার পর তাদের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ২১ ও ২২ জুলাই অনুসন্ধান করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে আসক বলেছে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্ব নির্ধারিত রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের হামলা চালানোর ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘বলপ্রয়োগে’ এখন পর্যন্ত ৫ জন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন বহু সংখ্যক।
সমাবেশে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের বরাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সেদিন আনুমানিক সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সমাবেশস্থলে গিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে সামনে রাখা চেয়ার ভাংচুর করতে থাকে ৫০-৬০ জন। এ সময় সমাবেশে যোগ দেওয়া আনুমানিক দেড় থেকে দুইশ এনসিপি সমর্থক সমাবেশস্থল ছেড়ে ডিসি অফিসের দিকে চলে যান।
এরপর সমাবেশে যোগ দেওয়া ব্যক্তিরা সংগঠিত হয়ে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় হামলাকারীদের ধাওয়া দিলে তারা ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত সরে পরে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সমাবেশস্থলের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়।
আনুমানিক দুপুর ১টার কিছু পরে পুলিশ এবং সেনা পাহারায় সমাবেশ স্থলে পৌঁছান এনসিপির জাতীয় নেতারা। তারা বক্তব্য শেষ করে মঞ্চ থেকে নেমে গাড়িতে ওঠার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থকেরা শহরের বিভিন্ন স্পটে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।
এক পর্যায়ে পুরো শহরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পরে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল এবং গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে গুলিতে আহত ব্যক্তিদের সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাদের মধ্যে চার জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
আসক বলছে, সমাবেশ শুরুর আগের হামলা এবং সমাবেশের পরবর্তী সময়ের সংঘর্ষের ঘটনায় হামলাকারীদের পক্ষ থেকে তীব্র ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনার কথা জানা গেছে। সে সময় কারো কারো হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল।
হামলার সময় ককটেল ফাটানো হলেও হামলাকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে–এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ‘নির্বিচারে গুলির ঘটনা ঘটেছে’ বলে আসকের ভাষ্য।
সংস্থাটি বলছে, “গোপালগঞ্জে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক সমাবেশে হামলার ঘটনা নাগরিকের সভা সমাবেশের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করেছে। আসক এ ঘটনার সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানায়।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যে জানা যায়, এনসিপির নেতৃবৃন্দ স্বল্প সংখ্যক সমর্থকদের উপস্থিতিতে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন। বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগকে লক্ষ্য করে কিছু আক্রমণাত্মক মন্তব্য করা হয়। এই মন্তব্যের পরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং পরবর্তীতে সংঘর্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
“প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানিয়েছেন, বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ‘সাধারণ জনতা’ রাস্তায় নেমে আসে, এক পর্যায়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।”
গোপালগঞ্জে কারফিউ ও ১৪৪ ধারা চলাকালে নির্বিচারে আটক ও গ্রেপ্তারের অভিযোগ থাকার কথা তুলে ধরে আসক বলছে, “এমনকি আটকের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের মত অভিযোগও উঠেছে। ভয়ে মানুষ নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে থাকতে হচ্ছে।
নিরাপরাধ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ‘এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি’ বিরাজ করছে এবং জেলার যেসব এলাকায় সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, সেসব এলাকাতেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ‘ধর- পাকড়ের’ অভিযোগ পাওয়ার কথা বলেছে আসক।
“তথ্য অনুসন্ধানকালে জানা যায়, সমাবেশের আগের দিন স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাবেশ স্থলের সন্নিকটের দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রশাসনের নির্দেশে দোকানপাট বন্ধ রাখেন দোকান মালিকেরা। সমাবেশস্থলের কাছাকাছি এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকে আরো জানান, সমাবেশের দিন সকালে প্রশাসনের লোকজন জোরপূর্বক দোকান বন্ধ করে দেয় এবং কোথাও কোথাও দোকানের শাটার নামিয়ে দোকানের ভেতরে থাকা মানুষদের আটকে রাখার ঘটনাও ঘটে।
“সমাবেশের দিনে সকাল থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং তাদের সমর্থকেরা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তাদের হাতে লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র ছিল।”
এই সহিংসতায় গুলিতে নিহত হন দীপ্ত সাহা (২৫), রমজান কাজী (১৮), ইমন তালুকদার (১৭) ও সোহেল মোল্লা (৩২)। পরে ১৮ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গুলিবিদ্ধ রমজান মুন্সী নামের আরও এক ব্যক্তি।
আসক বলছে, “নিহত ইমন তালুকদারের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার দিনে আনুমানিক দেড়টার দিকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে তারা হাসপাতালে ছুটে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিকেল ৫টার দিকে মরদেহ দ্রুত নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়ায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করতে বাধ্য হয়েছেন।
“এছাড়া তারা বলেন, ইমনের শরীরে গুলির চিহ্ন এবং শরীরের মুখমণ্ডলসহ নানা স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরিবারের সদস্যরা আরো দাবি করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছেলেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাস্তায় ফেলে মুখমণ্ডলে পা (বুট) দিয়ে আঘাত করছে, এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এই ভিডিওতে যে ছেলেটিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আঘাত করছিল সেই ছেলেটিই তাদের পরিবারের ইমন। ইমন কোনো রাজনীতির সংগে জড়িত ছিল না, সে একটি ক্রোকারিজের দোকানে কাজ করত।”
আসকর কাছে একই অভিযোগ করেছেন নিহত রমজান কাজী, দীপ্ত সাহা এবং সোহেল মোল্লার পরিবারের লোকজন। তারা বলেছেন, হাসপাতাল থেকে দ্রুত মরদেহ নিয়ে দাফন বা সৎকারের তাগিদ দেওয়া হয়, সে কারণে তারা লাশ নিয়ে এলাকায় চলে যান।
“গণমাধ্যমে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন ও সৎকারের বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে গত ২০ জুলাই পুলিশের পক্ষ থেকে দীপ্ত সাহার পরিবার ব্যতীত অন্য তিনটি পরিবারকে জানানো হয় পরিবারের সদস্যরা যেন ২১ জুলাই কবরস্থানে সকাল ১০টায় উপস্থিত থাকে এবং তাদের জানানো হয় যে মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হবে।
“এর পরিপ্রেক্ষিতে ২১ জুলাই কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়। রমজান কাজী ও ইমনের মরদেহ উত্তোলন ও সুরতহাল প্রক্রিয়ায় সরেজমিনে উপস্থিত ছিল আসক এর প্রতিনিধি দল। পরিবারগুলো এই প্রক্রিয়াকে নতুন এক ধরনের হয়রানি বলে মনে করেন। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা যথাযথ বিচার দাবি করেছেন।”
আহত ও গ্রেপ্তার
আসক বলছে, তাদের প্রতিনিধি দল গুলিতে আহত চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের সঙ্গে হাসপাতালে সাক্ষাৎ করেন। চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ একজন জানান, তার পেটে ও হাতে গুলি লেগেছে, হাতের একটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তিনি রিকশায় কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন, এমন সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে তিনি আহত হন। তিনি কোনো রাজনীতিতে যুক্ত নন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় ১৮ জন ‘শিশুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যাদের অনেককে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে আসক এর তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়। সংঘর্ষের ঘটনাগুলোর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন।
“সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় ২১ জুলাই পর্যন্ত মোট আটটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার মধ্যে ছয়টি মামলার কপি আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর তথ্য অনুসন্ধান দলের হাতে এসেছে। প্রাপ্ত মামলার কপিগুলো বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গোপালগঞ্জ সদর থানায় ৪টি, কোটালীপাড়া থানায় ১টি এবং কাশিয়ানি থানায় ১টি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাগুলোতে আসামি করা হয়েছে ৫৪০০। এর মধ্যে নামীয় আসামি ৩৫৮। এ সকল আসামিদের মধ্যে ৩ জন নারী এবং ৩২ জন সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক রয়েছেন।”
তথ্য অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের বরাতে আসক বলছে, সেদিনের ঘটনায় মোট ২৪ জনকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ২১ জন সাধারণ নাগরিক এবং দুইজন পুলিশ সদস্য। এছাড়া অন্যজন হামীম, যিনি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িচালক।
তাদের মধ্যে গুরুতর আহত রমজান মুন্সী, আব্বাস আলী ও সুমন বিশ্বাস নামের তিন তরুণকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে রমজানের মৃত্যু হয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের বরাত দিয়ে আসক বলছে, সেদিন দুপুর থেকে মোট ৪ জনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। তাদেরকে ‘ব্রড ডেড’ ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
তাদের মধ্যে দীপ্ত সাহাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত দুইজন আসকের কাছে দাবি করেছেন, দীপ্তকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তখনও তিনি বেঁচে ছিলেন এবং স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ রকম অবস্থায় দীপ্তকে অপারেশন থিয়েটারেও নিয়ে যাওয়া হয়। কিছু সময় পরে ডাক্তার দীপ্ত সাহাকে মৃত ঘোষণা করেন। কাজেই ‘ব্রড ডেড’ ঘোষণা করার বিষয়টি ঠিক নয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে আসক প্রতিনিধিরা জানতে চেয়েছিলেন, আহতদের মধ্যে মোট কতজন গুলিবিদ্ধ ছিলেন।
এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ঠিক এভাবে বলা যাবে না, গুলির বিষয়টি বলতে হলে আরো ‘এক্সামিন’ এর ব্যাপার রয়েছে।’ তবে তিনি নিশ্চিত করেছেন, আহত পুলিশ সদস্য মিনহাজ সরদার ও মো. কাওছার হোসাইন এবং সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িচালক হামীম গুলিবিদ্ধ ছিলেন না।
কারাগার
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২১ জুলাই ২০২৫ তারিখে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে দায়িত্বরত জেল সুপার তানিয়া জামান এবং কারাগারে উপস্থিত এআইজি (প্রিজন) দেওয়ান মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম আসক প্রতিনিধিদের জানান, এ পর্যন্ত ১৮ জন শিশুকে আদালতের আদেশে যশোর (পুলেরহাট) শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া গোপালগঞ্জ কারাগার থেকে ১০০ বন্দিকে পিরোজপুর এবং ৫০ বন্দিকে বাগেরহাট কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।
অন্য জেলার কারাগারে বন্দি স্থানান্তরের কারণ জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ আসককে বলেছে, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বন্দি বেশি হয়ে গেলে বন্দিদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য এ রকম বিধান রয়েছে।
কারা কর্তৃপক্ষ আসক প্রতিনিধিদের বলেছেন, ১৬ জুলাই আনুমানিক দুপুর ৩টার দিকে ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতা’ কারাগারে হামলা করে। তারা কারাগারের সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলে, গার্ডরুম, গেস্ট ওয়েটিং রুমের ক্ষতি করে। কারাগারের প্রধান ফটক ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে। এছাড়া কারাগারের অস্ত্রভাণ্ডার ভাঙার চেষ্টা করে।
ওই ঘটনায় কারা পুলিশ ‘৮০ রাউন্ড মিসফায়ার’ করে জানিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ আসককে বলেছে, পরে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। কারা কর্তৃপক্ষ সমাবেশকে কেন্দ্র করে শহরের উত্তেজনা অনুধাবন করে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বন্দিদের লকআপে নিয়ে নেয়। পূর্ব সতর্কতার জন্য কারাগারে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
আসক প্রতিনিধিরা গোপালগঞ্জ সদর থানায় তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে থানার ওসি ‘অসৌজন্যমূলক আচরণ’ করেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করা হয়েছে।
পুলিশ সুপারকে উদ্ধৃত করে সেখানে বলা হয়েছে, “১৬ জুলাই সমাবেশকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা হয়েছে, তা এক কথায় তীব্র। পুলিশ কোনো মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নাই বরং সর্বোচ্চ ধৈর্য্য ধারণ করেছে। সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেছে হামলাকারীরা। এক পর্যায়ে এনসিপি নেতৃবৃন্দকে আমার কার্যালয়ে নিয়ে আসতে হয়েছিল নিরাপত্তার জন্য।
“সেনাবাহিনীর দুটি এপিসি আমার অফিসে নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করতে হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে। আমরা হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। ২০ জুলাই ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত ১৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে কিছু ব্যক্তিকে ৫৪ ধারাতেও আটক দেখানো হয়েছে। ২০ জুলাই তারিখ পর্যন্ত মোট ৮টি মামলা দায়ের হয়েছে। কারাগার এবং সরকারি সম্পত্তিতে হামলার ঘটনায় এখনো মামলা দায়ের হয় নাই, তবে কারাগার কর্তৃপক্ষ মামলা করবে।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আসক প্রতিনিধিরা গোপালগঞ্জে দায়িত্বরত সেনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাক্ষাৎ করতে পারেনি।
“তবে ২২ জুলাই গোপালগঞ্জ শহরের ডিসি অফিসের সন্নিকটে ডিউটিরত কোম্পানি কমান্ডার ক্যাপ্টেন সাকিব এর সঙ্গে আসক প্রতিনিধিরা কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি জানান, তিনি ভিআইপি ডিউটিতে আছেন, এখন কথা বলা সম্ভব নয়। ফোন নাম্বার দিয়ে তিনি পরে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন। আসক এর পক্ষ থেকে পরবর্তীতে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কথা বলা সম্ভব হয় নাই।”