জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে রুদ্ধদ্বার বৈঠক আজ

- আপডেট সময় ০৬:০০:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫
- / 17
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সাম্প্রতিক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সোমবার একটি রুদ্ধদ্বার পরামর্শসভা আয়োজন করতে যাচ্ছে। ইসলামাবাদের জরুরি বৈঠকের অনুরোধের পর গ্রিসের সভাপতিত্বে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে পাকিস্তান নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে একজন অস্থায়ী সদস্য হিসেবে রয়েছে। আর চলতি মে মাসে পরিষদের সভাপতিত্ব করছে গ্রিস। নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশ হলো চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। বাকি ১০টি অস্থায়ী সদস্য হচ্ছে আলজেরিয়া, ডেনমার্ক, গ্রিস, গায়ানা, পাকিস্তান, পানামা, দক্ষিণ কোরিয়া, সিয়েরা লিওন, স্লোভেনিয়া ও সোমালিয়া।
নয়াদিল্লি থেকে পিটিআই জানায়, ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নিয়ে ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের অনুরোধ জানানো হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রিস আজ বিকেলে এই বৈঠকের সময়সূচি নির্ধারণ করে।
২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জাতিসংঘে গ্রিসের স্থায়ী প্রতিনিধি ও নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি রাষ্ট্রদূত এভানজেলোস সেকেরিস বলেন, ‘যদি কোনো সদস্য বৈঠকের অনুরোধ করে, তবে সেই বৈঠক হওয়া উচিত। মতামত প্রকাশের সুযোগ থাকলে উত্তেজনা প্রশমনে সহায়ক হতে পারে।’
তিনি জানান, ‘আমরা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছি। বৈঠকটি খুব শিগগিরই অনুষ্ঠিত হতে পারে, আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
পিটিআইয়ের এক প্রশ্নের জবাবে সেকেরিস বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসবাদের যেকোনো ঘটনার নিন্দা জানাই। পেহেলগামে যেটি ঘটেছে, সেটি একটি ঘৃণ্য হামলা—যেখানে নিরীহ বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। আমরা ভারতের জনগণ ও সরকারের প্রতি সমবেদনা জানাই এবং এ ধরনের হামলার কঠোর বিরোধিতা করি।’
পেহেলগাম হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নিহত হওয়ার পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর নিরাপত্তা পরিষদের বিভিন্ন সদস্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তবে চীন ও পাকিস্তানকে তিনি এড়িয়ে যান। জয়শঙ্কর বলেন, ‘এই হামলার পরিকল্পনাকারী, পৃষ্ঠপোষক ও বাস্তবায়নকারীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
তিনি গ্রিসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ জেরাপেট্রিতিসের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা করেন এবং সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গ্রিসের কঠোর অবস্থানকে স্বাগত জানান। জয়শঙ্করের আলোচনার তালিকায় ছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, রাশিয়ার সের্গেই লাভরভ, যুক্তরাষ্ট্রের মার্কো রুবিও, যুক্তরাজ্যের ডেভিড ল্যামি, ফ্রান্সের জ্যাঁ-নোয়েল বারোসহ আরও কয়েকজন সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধি।
অন্যদিকে জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখার আহমদ গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা যখন প্রয়োজন মনে করব, তখনই বৈঠক ডাকার অধিকার রাখি।’
তিনি বলেন, ‘এই সঙ্কট শুধু আঞ্চলিক নয়, বরং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। এটি নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা হওয়ার বিষয়।’ তিনি জানান, জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গেও এ বিষয়ে তার সাক্ষাৎ হয়েছে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে পাকিস্তান নিবিড়ভাবে কাজ করছে।
এই উত্তেজনার আবহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আন্তর্জাতিক মহলে গভীরভাবে পর্যবেক্ষিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।