দিনাজপুরে সমতল ভূমিতেও চা চাষে সাফল্য, কৃষকদের নতুন সম্ভাবনা

- আপডেট সময় ০২:২৪:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
- / 11
চা চাষ মানেই সাধারণত পাহাড়ি এলাকা বা সীমান্তবর্তী জেলা, যেমন পঞ্চগড়, সিলেট, মৌলভীবাজার কিংবা হবিগঞ্জ সেখানে চা বাগান গড়ে ওঠার চিত্রটা আমাদের পরিচিত। কিন্তু এবার সেই চিত্র বদলে দিচ্ছে দিনাজপুরের সমতল ভূমি। কৃষকের আগ্রহ, সরকারি সহায়তা এবং শ্রমিকের পরিশ্রমে এই জেলাতেও গড়ে উঠছে চা বাগান, যা এনে দিয়েছে কর্মসংস্থান ও নতুন সম্ভাবনার দুয়ার।
২০১৭ সালে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ঝাড়বাড়ী গ্রামের কৃষক আকতার আলী প্রথমবারের মতো চা চাষ শুরু করেন। পঞ্চগড় থেকে চা গাছের চারা সংগ্রহ করে দুই বিঘা জমিতে রোপণ করেন তিনি। প্রতি চারা চার টাকা দরে আনেন তিন হাজার চারা। মাত্র ছয় মাস পরই সংগ্রহ হয় ৫০ কেজি পাতা। এক বছরের মাথায় দেড় একর জমি থেকে সংগ্রহ করেন এক হাজার কেজি চা পাতা।
আকতার আলী বলেন, “একবার চারা রোপণ করলে ৬০-৭০ বছর পর্যন্ত সেই জমি থেকে চা উৎপাদন করা যায়। শুধু নিয়মিত পরিচর্যা করলেই হয়।” তার এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও কৃষক চা চাষে ঝুঁকছেন। বর্তমানে বীরগঞ্জে ১৩ হেক্টর জমিতে ১১ জন কৃষক চা বাগান করেছেন।
চা বাগান গড়ে ওঠায় স্থানীয় বেকার শ্রমিকদের জন্য নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিকরা জানান, আগে কাজের জন্য বাইরে যেতে হতো, এখন গ্রামেই কাজ মিলছে। আয় বাড়ছে, সংসার চলছে ভালোভাবে।
চাষিদের পাশে আছে কৃষি বিভাগও। বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, “সার, সেচ ও কীটনাশক ব্যবহারে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের, যাতে চা চাষ আরও ফলপ্রসূ হয়।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দিনাজপুর জেলায় ইতোমধ্যে ২৬ হেক্টর জমিতে ১৫টি চা বাগান গড়ে উঠেছে। শুধু চাষই নয়, এই নতুন উদ্যোগ দিনাজপুরের কৃষিকে এনে দিচ্ছে এক নতুন পরিচয় সমতলে সম্ভাবনার চা রাজ্য।
এই সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে দিনাজপুরের সবুজ মাটিতে, যেখানে প্রতিটি চা গাছই সাক্ষ্য দিচ্ছে গ্রামের মানুষের নতুন জীবনের, আয়ের এবং উন্নয়নের গল্প।