গাজায় বোমা বর্ষণ: এক ঘণ্টায় ইসরায়েলি বিমান থেকে ৩০ বার হামলা

- আপডেট সময় ১০:২৮:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
- / 17
বর্বর ইসরায়েলি বাহিনী অবরুদ্ধ গাজায় স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা শুরু করেছে। গত সপ্তাহের শেষ দিক থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের এই আগ্রাসন আরও জোরদার করেছে। ট্যাংক, বিমান ও কামানসহ অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র ব্যবহার করে তারা জনাকীর্ণ ও অসহায় গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে। দিন-রাত, মধ্যরাত থেকে ভোর, সকাল থেকে সন্ধ্যা এবং দুপুর থেকে বিকেল—পুরো ২৪ ঘণ্টাই এই হামলা অব্যাহত রয়েছে।
পৃথিবীর বুক থেকে বিধ্বস্ত গাজাকে নিশ্চিহ্ন করতে চাইছে বর্বর ইসরায়েল। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬০ টার্গেটে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। নিহত হয় ১৪৪ জন। খবর আল-জাজিরা ও এএফপির।
সোমবারও এক ঘণ্টায় ৩০ বার বিমান হামলা চালিয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ৪৬ জন নিহত হয়েছে।
গাজার বেসামরিকদের অবিলম্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খান ইউনুস ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলের আবাসন এবং বানি সুহাইলাপাড়ায় বসবাসকারীদের জন্য নতুন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির আদেশ জারি করেছে।
এমনকি সেখানে এ যাবতকালের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালানো হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে। একইসঙ্গে বাস্তুচ্যুত শিবিরগুলোতেও হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি সেনারা।
সোমবার নুসিরাতের বাস্তুচ্যুতদের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে হামলা চালায়। সেই হামলায় পাঁচজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আবার ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা মেডিকেল এইড ফর প্যালেস্টাইনস জানিয়েছে ইসরায়েল রাতের বেলায় দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে অবস্থিত নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহের গুদামে আঘাত করেছে। অন্যান্য হামলায় নিহত ও আহত ফিলিস্তিনিদের হাসপাতালে আনার সময়ই এ ঘটনা ঘটেছে।
চলমান হামলার মাঝেই সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, পুরো গাজার নিয়ন্ত্রণ করবে ইসরায়েল। ইসরায়েলের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন ধরে রাখতে গাজায় মানবিক বিপর্যয় ঠেকানোর উদ্দেশে সীমিত আকারে খাদ্য প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
এদিকে ইসরায়েলি জিম্মিকে ফেরতের বিনিময়ে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল। কাতারের দোহায় আলোচনার সময় এই প্রস্তাব দেওয়া হয়।
ইসরায়েল ধারণা করছে, গাজায় এখনো ৫৮ জন জিম্মি রয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ জনকে জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, চলমান সংঘাতে কমপক্ষে ৫৩ হাজার ৩৩৯ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১ লাখ ২১ হাজার ৩৪ জন আহত হয়েছেন। তবে, সরকারি মিডিয়া অফিসের দাবি অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে, গাজার প্রায় ৯২ শতাংশ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সংস্থাটি তাদের এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে উল্লেখ করেছে, গাজা উপত্যকার পরিবারগুলো যে ব্যাপক ধ্বংসলীলার শিকার হচ্ছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। অসংখ্য মানুষ বহুবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং তাদের জন্য কোনো নিরাপদ আশ্রয় অবশিষ্ট নেই।