দেশে মামলার শীর্ষে মাদক, ধর্ষণের বৃদ্ধির পেছনেও রয়েছে সংযোগ
দেশজুড়ে ধর্ষণের ঘটনায় যে উদ্বেগজনক মাত্রা দেখা যাচ্ছে, তার পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে মাদক। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও বিশেষজ্ঞদের মতে, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার অন্তত ৬০ শতাংশ ঘটনায় মাদকের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। শুধু ধর্ষণ নয়, মাদক গ্রহণের পর মানুষ জড়িয়ে পড়ছে চুরি, ছিনতাই, খুনসহ ভয়াবহ অপরাধে।
মাগুরায় শিশু আছিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা সারা দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের একজন আদালতে ধর্ষণের দায় স্বীকার করেছে। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে মাদক সেবনের অভিযোগ।
ঢাকার আশুলিয়ায় আট বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া তরুণটি নিয়মিত মাদক সেবন করত। এমনকি বহুল আলোচিত ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণ মামলার আসামি মজনুও ছিল মাদকাসক্ত। ইয়াবা ও হেরোইনের প্রভাবে বিবেকহীন হয়ে একের পর এক ধর্ষণ ঘটিয়ে গেছে সে।
সিলেটে স্বামীর সামনে স্ত্রীকে তুলে নিয়ে গেস্টরুমে ধর্ষণের ঘটনাও ছিল মাদকসেবী অপরাধীদের হাতে। গ্রেপ্তার আটজনের সবাই পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে মাদক সেবনের পরই এই ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হয়েছিল তারা।
মাদক বিশেষজ্ঞ ডা. অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, “মাদক সেবনে মনুষ্যত্ব বিলুপ্ত হয়। ইয়াবা গ্রহণের পর যৌন উত্তেজনা চরমে ওঠে, নিয়ন্ত্রণ থাকে না এটাই অনেককে ধর্ষকে পরিণত করে।” তিনি মাদকসেবীদের পুনর্বাসনের উপর জোর দিয়ে বলেন, দেশে সুষ্ঠু রিহ্যাব সেন্টারের অভাব রয়েছে।
মাদকের ভয়াবহতার চিত্র আরও স্পষ্ট পুলিশ পরিসংখ্যানে। ফেব্রুয়ারি মাসেই দেশে ৩ হাজার ৬০০–এর বেশি মাদক মামলা হয়েছে, যা ডাকাতি, খুন, নারী নির্যাতনসহ সব অপরাধকে ছাড়িয়ে গেছে।
২০২৩ সালে ৭৬ হাজার এবং ২০২৪ সালে ৫২ হাজারের বেশি মাদক মামলা হয়েছে দেশে। চলতি বছরের শুরুতেই এই সংখ্যা ছুঁয়েছে কয়েক হাজারে।
এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে, ধর্ষণসহ অন্যান্য সামাজিক অপরাধ রোধ করতে হলে মাদকের ভয়াবহতা ঠেকানো এখনই সময়ের দাবি। তা না হলে প্রতিদিনই বাড়বে নতুন নতুন বিভীষিকার গল্প।