রোজার সময় সারাদিন এনার্জি পেতে গ্রহণীয় খাবার তালিকা
রমজান মাসে দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকা শরীরের জন্য এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার মাধ্যমে সারাদিন এনার্জি ধরে রাখা সম্ভব। রোজার সময় শরীরের পানিশূন্যতা ও দুর্বলতা এড়াতে চাই পরিমিত পানি পান, সুষম খাদ্য গ্রহণ ও নিয়মিত শরীরচর্চা। অনেকেই ইফতার ও সেহরিতে ভারী খাবার খেয়ে ফেলেন, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে, চিনি ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলা দরকার। এনার্জি ধরে রাখতে চাই এমন খাবার, যা দীর্ঘসময় শরীরে শক্তি সরবরাহ করবে। এ কারণে খাদ্য তালিকায় খেজুর, বাদাম, পানিযুক্ত ফল ও পুষ্টিকর শর্করা রাখা জরুরি। পাশাপাশি, শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে প্রচুর পানি পান করা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করাও গুরুত্বপূর্ণ। রমজানে সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকতে গেলে পরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করাই শ্রেয়। চলুন, জেনে নিই কীভাবে রোজার সময় এনার্জি ধরে রাখা সম্ভব।
১. খেজুর ও বাদাম খাওয়াঃ খেজুর রোজার অন্যতম উপকারী খাবার। এতে প্রাকৃতিক চিনি, ফাইবার, আয়রন ও খনিজ উপাদান থাকে, যা দীর্ঘসময় শরীরে শক্তি জোগায়। রোজার শুরুতে খেজুর খেলে তা দ্রুত রক্তে গ্লুকোজ সরবরাহ করে, ফলে ক্লান্তি দূর হয়। বাদামও দারুণ পুষ্টিকর, বিশেষ করে কাঠবাদাম, কাজু, আখরোট ও চিয়া সিড শরীরের জন্য উপকারী। বাদামে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা মেটাবলিজম বাড়িয়ে সারাদিন চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে। খেজুর ও বাদাম ইফতার ও সেহরিতে খেলে তা শরীরে দীর্ঘসময় শক্তি সরবরাহ করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এগুলো রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
২. পানি বা ডাবের পানি পান করা ও চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলাঃ রমজানে পানির ঘাটতি হলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে, মাথাব্যথা হতে পারে এবং ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। সারাদিন এনার্জি ধরে রাখতে ইফতার ও সেহরির মধ্যে প্রচুর পানি পান করা দরকার। বিশেষত, ডাবের পানি অত্যন্ত উপকারী, কারণ এতে ইলেকট্রোলাইটস থাকে, যা শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে। অনেকে ইফতারে কোমল পানীয় বা চিনি মিশ্রিত শরবত খান, যা শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি দিলেও দ্রুত রক্তে গ্লুকোজের ওঠানামা ঘটিয়ে ক্লান্তির কারণ হতে পারে। তাই চিনিযুক্ত পানীয় পরিহার করে বিশুদ্ধ পানি, ডাবের পানি, লেবু-পানি বা হালকা ভেষজ পানীয় পান করা উচিত।
৩. পানিযুক্ত ফল (কলা, পেঁপে, আনারস, তরমুজ, পেয়ারা, আপেল ও কমলা) বেশি খাওয়াঃ পানিযুক্ত ফল শরীরকে আর্দ্র ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে। তরমুজ, কমলা, আপেল, পেঁপে ও আনারস শরীরে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ সরবরাহ করে। কলা একদিকে শক্তি যোগায়, অন্যদিকে শরীরের পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে, যা ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। ইফতার বা সেহরিতে এই ফলগুলো খেলে তা শরীরে দীর্ঘসময় এনার্জি জোগাবে এবং পানিশূন্যতা দূর করবে। ফলগুলোতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার হজমের সমস্যা দূর করে এবং ত্বককে সতেজ রাখে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এগুলো রাখা জরুরি।
৪. ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত খাওয়াঃ অনেকেই সেহরিতে সাধারণ চালের ভাত খান, যা দ্রুত হজম হয়ে যায় এবং দ্রুত ক্ষুধা লাগে। ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত তুলনামূলক ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘসময় এনার্জি ধরে রাখে। এতে ফাইবার বেশি থাকায় হজম ভালো হয় এবং এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাতের সঙ্গে শাকসবজি ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেলে তা আরও বেশি পুষ্টি সরবরাহ করবে। তাই সারাদিন শক্তি ধরে রাখতে সেহরিতে এই ধরনের ভাত খাওয়ার অভ্যাস করা ভালো।
৫. ইফতার ও সেহরির মাঝামাঝি সময়ে কমপক্ষে ১০ গ্লাস পানি পান করাঃ শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। অনেকেই শুধু ইফতার ও সেহরিতে পানি পান করেন, যা যথেষ্ট নয়। সারাদিন শক্তি ধরে রাখতে ইফতার ও সেহরির মাঝামাঝি সময়ে অন্তত ১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম সচল রাখে, হজমশক্তি উন্নত করে এবং ত্বককে আর্দ্র রাখে। যেহেতু রোজার সময় দীর্ঘক্ষণ পানি পান করা সম্ভব হয় না, তাই পরিকল্পিতভাবে পরিমাণমতো পানি পান করা জরুরি।
৬. নিয়মিত ব্যায়াম করাঃ অনেকেই রোজার সময় ব্যায়াম এড়িয়ে চলেন, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। হালকা ব্যায়াম করলে শরীরের রক্তসঞ্চালন ঠিক থাকে এবং মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যায় না। ইফতারের পর হালকা হাঁটাহাঁটি বা স্ট্রেচিং করলে তা খাবার হজমে সহায়তা করে এবং শরীরকে ফিট রাখে। ব্যায়াম করলে শরীরে এন্ডরফিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মন ভালো রাখে ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়। তাই রোজার সময়ও প্রতিদিন অন্তত ২০-৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করা দরকার।
সারাদিন এনার্জি ধরে রাখতে চাইলে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা অনুসরণ করা জরুরি। সুষম খাদ্য গ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি পান এবং হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীর সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখা সম্ভব। রোজার সময় এসব বিষয় অনুসরণ করলে ক্লান্তি দূর হবে এবং সারা মাস সুস্থভাবে কাটানো যাবে।