ঢাকা ১১:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পবিত্র ঈদুল আযহায় স্বাস্থ্যসচেতনতা: সুস্থ থাকুন, নিরাপদে ঈদ করুন আর্জেন্টিনার জয় চিলিতে, গোল আলভারেজের ঈদুল আজহা উপলক্ষে ওমানে ৬৪৫ কারাবন্দিকে ক্ষমা দিলেন সুলতান হাইথাম দুবাইয়ে ঈদুল আজহার নামাজ সম্পন্ন, ঈদগাহে মুসল্লিদের ঢল বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ বিলিয়ন ডলারে ফের অন্তঃসত্ত্বা ‘দৃশ্যম’ অভিনেত্রী ঈশিতা দত্ত, প্রকাশ্যে বেবি বাম্প বেলুন, রশি আর জেদ, এই তিন দিয়েই ডুবন্ত যুদ্ধজাহাজ তুলল উত্তর কোরিয়া 🕋 পবিত্র হজ আজ পুলিশের জন্য কেনা হচ্ছে ২০০ গাড়ি

মানুষের ঢলে মুখরিত ৪০০ বছরের প্রাচীন কুলিকুন্ডার শুঁটকি মেলা

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৮:৫২:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • / 59

ছবি সংগৃহীত

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের কুলিকুন্ডা গ্রামে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি মেলা। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া এই মেলার শেষ দিন আজ বুধবার (১৬ এপ্রিল)। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ক্রেতা-বিক্রেতায় জমজমাট হয়ে উঠেছে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ।

স্থানীয়রা জানান, এক সময় সদ্যতোলা ফসলের বিনিময়ে শুঁটকি কেনাবেচা হতো। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় মুদ্রা প্রচলনের কারণে সেই বিনিময় প্রথার গুরুত্ব অনেকটাই হারিয়েছে।

মেলায় কথা হয় জেঠাগ্রাম গ্রামের জ্যোৎস্না চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি জানান, গত দুই দশক ধরে মেলায় অংশ নিচ্ছেন। আগে আলু, বেগুন, ঢেঁড়স, সিমের বিচির বিনিময়ে শুঁটকি বিক্রি করলেও বর্তমানে সেই প্রথা কমে গেছে। তবুও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে প্রতিবছরই তিনি অংশ নেন। এবারও কিছুটা বিনিময় হয়েছে, এতে তিনি সন্তুষ্ট।

৯০ বছর বয়সী আহাদ আলী বলেন, ‘আমাদের চার পুরুষ ধরে এই মেলা চলছে। মোগল আমল থেকেই এর প্রচলন। তখন কুলিকুন্ডার মানুষ ধান-তরিতরকারির বিনিময়ে শুঁটকি নিতো। এখন টাকায় কেনাবেচা হলেও ঐতিহ্যের ধারা এখনও বহমান।’

মেলায় বিক্রি হচ্ছে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি। যেমন বোয়াল ও শোল শুঁটকি ১৫০০-১৮০০ টাকা, কাইক্কা ৭০০-৮০০ টাকা, কাচকি ৪৫০-৫০০ টাকা, বাইম শুঁটকি ১৬০০-১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে সামুদ্রিক মাছের শুঁটকিও।

সুনামগঞ্জ থেকে আসা বিক্রেতা সুবল দাস জানান, হাওড়ের দেশীয় মাছের শুঁটকি এনেছেন এবং মেলা শুরুর মাত্র দুই ঘণ্টায় ৩০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যবসায়ী নিখিল দাস জানান, ‘বড় মাছ সংরক্ষণ করে শুঁটকি বানাই মেলার জন্য। চাহিদা থাকায় লাভের আশায় বড় মাছ এনেছি।’

শুঁটকি কিনতে আসা বিহাদ আলী জানান, তিনি ৫-৬ হাজার টাকার শুঁটকি কিনেছেন আত্মীয়স্বজনদের জন্য পাঠাতে। পছন্দের শুঁটকি পেয়ে তিনি আনন্দিত।

মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য ওহাব আলী জানান, চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ থেকে ব্যবসায়ীরা অংশ নিয়েছেন। দেশীয় শুঁটকির পাশাপাশি মেলায় স্থানীয় কুমারদের তৈরি মাটির হাঁড়ি, পাতিল, প্রদীপসহ নানা পণ্য বিক্রি হচ্ছে। মেলাটি ইজারামুক্ত এবং ব্যবসায়ীদের হয়রানি রোধে কঠোর নজরদারি রয়েছে।

মেলা কমিটির তথ্যমতে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

মানুষের ঢলে মুখরিত ৪০০ বছরের প্রাচীন কুলিকুন্ডার শুঁটকি মেলা

আপডেট সময় ০৮:৫২:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের কুলিকুন্ডা গ্রামে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি মেলা। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া এই মেলার শেষ দিন আজ বুধবার (১৬ এপ্রিল)। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ক্রেতা-বিক্রেতায় জমজমাট হয়ে উঠেছে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ।

স্থানীয়রা জানান, এক সময় সদ্যতোলা ফসলের বিনিময়ে শুঁটকি কেনাবেচা হতো। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় মুদ্রা প্রচলনের কারণে সেই বিনিময় প্রথার গুরুত্ব অনেকটাই হারিয়েছে।

মেলায় কথা হয় জেঠাগ্রাম গ্রামের জ্যোৎস্না চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি জানান, গত দুই দশক ধরে মেলায় অংশ নিচ্ছেন। আগে আলু, বেগুন, ঢেঁড়স, সিমের বিচির বিনিময়ে শুঁটকি বিক্রি করলেও বর্তমানে সেই প্রথা কমে গেছে। তবুও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে প্রতিবছরই তিনি অংশ নেন। এবারও কিছুটা বিনিময় হয়েছে, এতে তিনি সন্তুষ্ট।

৯০ বছর বয়সী আহাদ আলী বলেন, ‘আমাদের চার পুরুষ ধরে এই মেলা চলছে। মোগল আমল থেকেই এর প্রচলন। তখন কুলিকুন্ডার মানুষ ধান-তরিতরকারির বিনিময়ে শুঁটকি নিতো। এখন টাকায় কেনাবেচা হলেও ঐতিহ্যের ধারা এখনও বহমান।’

মেলায় বিক্রি হচ্ছে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি। যেমন বোয়াল ও শোল শুঁটকি ১৫০০-১৮০০ টাকা, কাইক্কা ৭০০-৮০০ টাকা, কাচকি ৪৫০-৫০০ টাকা, বাইম শুঁটকি ১৬০০-১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে সামুদ্রিক মাছের শুঁটকিও।

সুনামগঞ্জ থেকে আসা বিক্রেতা সুবল দাস জানান, হাওড়ের দেশীয় মাছের শুঁটকি এনেছেন এবং মেলা শুরুর মাত্র দুই ঘণ্টায় ৩০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যবসায়ী নিখিল দাস জানান, ‘বড় মাছ সংরক্ষণ করে শুঁটকি বানাই মেলার জন্য। চাহিদা থাকায় লাভের আশায় বড় মাছ এনেছি।’

শুঁটকি কিনতে আসা বিহাদ আলী জানান, তিনি ৫-৬ হাজার টাকার শুঁটকি কিনেছেন আত্মীয়স্বজনদের জন্য পাঠাতে। পছন্দের শুঁটকি পেয়ে তিনি আনন্দিত।

মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য ওহাব আলী জানান, চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ থেকে ব্যবসায়ীরা অংশ নিয়েছেন। দেশীয় শুঁটকির পাশাপাশি মেলায় স্থানীয় কুমারদের তৈরি মাটির হাঁড়ি, পাতিল, প্রদীপসহ নানা পণ্য বিক্রি হচ্ছে। মেলাটি ইজারামুক্ত এবং ব্যবসায়ীদের হয়রানি রোধে কঠোর নজরদারি রয়েছে।

মেলা কমিটির তথ্যমতে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়।