লিবিয়ার সেনাপ্রধান বিমান দুর্ঘটনায় নিহত
- আপডেট সময় ১২:১৯:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
- / 44
লিবিয়ার সেনাপ্রধান মুহাম্মদ আলী আহমেদ আল-হাদ্দাদ তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার কাছে একটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে আঙ্কারার এসেনবোগা বিমানবন্দর থেকে ত্রিপোলির উদ্দেশে উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই তার বহনকারী প্রাইভেট জেটটি বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় সেনাপ্রধানসহ আরও চারজন উচ্চপদস্থ লিবীয় সামরিক কর্মকর্তা ও তিনজন ক্রু সদস্য নিহত হয়েছেন।
লিবিয়ার জাতিসংঘ–স্বীকৃত সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দবেইবা এক বিবৃতিতে আল-হাদ্দাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। তিনি ঘটনাটিকে ‘মহাবিপর্যয়কর’ উল্লেখ করে বলেন, আঙ্কারায় সরকারি সফর শেষে দেশে ফেরার পথেই এই দুর্ঘটনা ঘটে। দবেইবার ভাষায়, ‘এই মহাবিপর্যয় দেশ, সেনাবাহিনী ও জনগণের জন্য এক বিশাল ক্ষতি। আমরা এমন সব মানুষকে হারিয়েছি, যাঁরা আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের সেবা করেছেন এবং শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ ও জাতীয় অঙ্গীকারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।’
দুর্ঘটনায় নিহত অন্য সেনা কর্মকর্তারা হলেন স্থলবাহিনীর প্রধান আল-ফিতুরি ঘারিবিল, সামরিক বাহিনীর উৎপাদন কর্তৃপক্ষের পরিচালক মাহমুদ আল-কাতাওয়ি, সেনাপ্রধানের উপদেষ্টা মুহাম্মদ আল-আসাওই দিয়াব এবং সামরিক চিত্রগ্রাহক মুহাম্মদ ওমর আহমেদ মাহজুব।
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কমিউনিকেশনস ডিরেক্টরেটের প্রধান বুরহানেত্তিন দুরান জানান, দাসো ফ্যালকন–৫০ মডেলের জেটটি বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে জরুরি অবতরণের অনুরোধ করেছিল। বিমানটি আঙ্কারায় ফেরার প্রস্তুতির সময় অবতরণ পর্যায়ে রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়েরলিকায়া জানান, স্থানীয় সময় রাত ৮টা ১০ মিনিটে উড্ডয়নের পর রাত ৮টা ৫২ মিনিটের দিকে নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে বিমানটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে আঙ্কারার হায়মানা জেলার কেসিককাভাক গ্রামের প্রায় দুই কিলোমিটার দক্ষিণে ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়, যা রাজধানী থেকে প্রায় ৭৪ কিলোমিটার দূরে।
তুরস্কের কর্মকর্তারা আল–জাজিরাকে জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে নাশকতার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তাদের ভাষায়, দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ প্রযুক্তিগত ত্রুটি। এ ঘটনায় আঙ্কারার প্রধান প্রসিকিউটর কার্যালয় আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে। লিবিয়ার সরকারও তদন্তে সহযোগিতার জন্য একটি প্রতিনিধি দল আঙ্কারায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
লিবিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার হিসেবে পরিচিত আল-হাদ্দাদ ২০১১ সালে মুয়াম্মার গাদ্দাফিবিরোধী বিদ্রোহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ২০২০ সালের আগস্ট থেকে সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। পশ্চিম লিবিয়ায় তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ছিল এবং দেশটির বিভক্ত রাজনৈতিক বাস্তবতায় জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
দুর্ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটল, যখন এর এক দিন আগে তুরস্কের পার্লামেন্ট লিবিয়ায় নিজেদের সেনা মোতায়েনের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৪ সাল থেকে লিবিয়ায় সমান্তরাল দুই সরকার বিদ্যমান। ত্রিপোলিভিত্তিক দবেইবা সরকারের সঙ্গে আঙ্কারার ঘনিষ্ঠ সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ২০২০ সালে তুরস্ক প্রথমবারের মতো লিবিয়ায় সেনাসদস্য পাঠায় এবং পরবর্তী সময়ে দুই দেশের মধ্যে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ ও জ্বালানি অনুসন্ধান–সংক্রান্ত একাধিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আল-হাদ্দাদের এই সফরে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা খাতে ‘দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা’ নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তার আকস্মিক মৃত্যুতে লিবিয়াজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে; সব সরকারি ভবনে অর্ধনমিত রাখা হয়েছে জাতীয় পতাকা এবং স্থগিত করা হয়েছে সব ধরনের আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান।



















