এআই দিয়ে ভুয়া তথ্যে প্রকাশে ফিলিপাইনে বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তেজনা

- আপডেট সময় ০১:৫২:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
- / 10
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) কর্তৃক ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে গ্রেপ্তারের পর দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে বিভ্রান্তিকর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কনটেন্টের বন্যা। গত মার্চে দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করে আইসিসির হাতে তুলে দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, বিশেষ করে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্ত করছে আদালত।
গ্রেপ্তারের পরপরই একটি হৃদয়বিদারক সাক্ষাৎকারে শিরা এসকুয়ের্দো নামের এক ব্যক্তি জানান, তার ১৮ বছর বয়সী ভাই ইব্রাহিমকে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে হত্যা করা হয়েছে। ভাইয়ের ছবি হাতে নিয়ে তিনি এর ন্যায়বিচার দাবি করেন। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই ফেসবুকে একটি এআই-জেনারেটেড ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে বলা হয়, ইব্রাহিম জীবিত এবং তার বোন মিথ্যা বলছে। ভিডিওতে এআই-প্রস্তুত কণ্ঠে বলা হয়, “আমি বেঁচে আছি, আমাকে মেরে ফেলা হয়নি। তোমায় কি কেউ টাকা দিয়েছে মিথ্যা বলার জন্য?” এই ভিডিওটি পোস্ট করেন দুতার্তেপন্থী এক ইনফ্লুয়েন্সার, যার ফলোয়ার সংখ্যা ১১ হাজারের বেশি। মুহূর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে মন্তব্যে ভরে ওঠে কটূক্তিতে।
এসকুয়ের্দো জানান, ‘প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে শত শত হুমকি ও বিদ্বেষপূর্ণ বার্তা দেখতে পাই।’
বর্তমান প্রেসিডেন্ট বংবং মার্কোস জুনিয়রের সঙ্গে দুতার্তে পরিবারের সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতার্তেকে অপসারণের চেষ্টার মধ্যেই দুই পক্ষ নিজেদের পক্ষে বিভ্রান্তিকর ডিজিটাল কনটেন্ট ছড়াচ্ছে।
তথ্য যাচাইকারী সংস্থা Tsek.ph জানায়, দুতার্তে গ্রেপ্তার সংক্রান্ত ভুয়া পোস্ট তাদের যাচাইকৃত ১২৭টি রিপোর্টের প্রায় এক-চতুর্থাংশ। অন্যদিকে, সারা দুতার্তের অভিশংসন সংক্রান্ত প্রতিবেদনের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৪টি।
সম্প্রতি সেনেটর রোনাল্ড ডেলা রোসা তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি এআই ভিডিও শেয়ার করেন, যেখানে দাবি করা হয় সারা দুতার্তের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক বিচার চলছে। ভিডিওটি প্রায় ৮.৬ মিলিয়ন ভিউ হওয়ার পর সরিয়ে ফেলা হয়।
সারা দুতার্তে মন্তব্য করেন, ‘আমার পক্ষে কেউ যদি এআই ভিডিও বানায়, তাতে সমস্যা নেই যদি সেটি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান না হয়।’ তবে গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে ভুয়া তথ্যকে স্বাভাবিক করা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।
‘রাইজ আপ’ নামে একটি সংগঠনের সদস্যরাও একই ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তারা আইসিসির কাছে বিচার চেয়েছেন, অথচ তাদেরকেই এখন অনলাইনে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। মূল লক্ষ্য আইসিসিকে হেয় করা এবং মাদকযুদ্ধের শিকারদের দোষী হিসেবে প্রমাণ করা।
গবেষক দানিলো আরাও বলেন, “এই ডিজিটাল প্রচারণার মূল লক্ষ্য নেতার ভাবমূর্তি ‘পবিত্র’ দেখানো এবং সত্যকে আড়াল করা।” এ ধরনের প্রচারণায় সাধারণ জনগণও বিভ্রান্ত হচ্ছে, যা ফিলিপাইনের গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য এক ভয়ংকর সংকেত।
সূত্র: আলজাজিরা