যাকাতের সঠিক বণ্টন: শরিয়তের নির্দেশনা ও বাস্তব চর্চা
যাকাত ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত। এটি শুধু সম্পদের পরিশুদ্ধি নয়, বরং সমাজের দরিদ্র, অসহায় ও অধিকারবঞ্চিত শ্রেণির মাঝে সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মহান প্রক্রিয়া। পবিত্র কোরআনের সুরা তাওবা (আয়াত ৬০)-এ আল্লাহতায়ালা স্পষ্টভাবে যাকাত প্রদানের আটটি খাত নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
এই আট শ্রেণি হলো ফকির, মিসকিন, যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী, নতুন মুসলিম, দাস মুক্তিকরণ, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রামী এবং মুসাফির।
বর্তমানে অনেকেই না জেনে যাকাত এমন খাতে ব্যয় করেন, যেগুলো শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। যেমন কোনো প্রতিষ্ঠানে যাকাতের টাকা দিলে বা ঘর নির্মাণ, বিল পরিশোধ, স্কুল বেতন ইত্যাদি খাতে ব্যয় করলে যাকাত আদায় হয় না, কারণ এসব খাতে যাকাতগ্রহীতাকে ‘সম্পদের মালিক’ বানানো হয় না। যাকাতের মূল শর্ত হলো উপযুক্ত গরীব ব্যক্তিকে নিঃশর্তভাবে সম্পদের মালিক বানিয়ে দেওয়া।
নিজের বাবা-মা, সন্তান বা স্ত্রীর মতো ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন আত্মীয়দের যাকাত দেওয়া নিষিদ্ধ। তবে ভাই, বোন, চাচা, খালা, জামাই বা ভগ্নিপতিকে যাকাত দেওয়া যাবে, যদি তারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হন।
গরীব শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচ, দ্বীনি কাজ বা তাবলিগে পাঠাতে যাকাত ব্যবহার করা যায় যদি তাদের মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। অনেক আলেম বলেন, এতে দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যায়।
এছাড়া কোনো গরীব কর্মচারীকে যাকাত দেওয়া গেলেও, তার মূল বেতনের জায়গায় যাকাত ব্যবহার করা শরিয়তসম্মত নয়। কারণ, বেতন তার হক যা যাকাত দ্বারা পূরণ করা যায় না।
যাকাত সমাজে সাম্য ও সহানুভূতি প্রতিষ্ঠার একটি মহান হাতিয়ার। তাই যাকাত প্রদানে সতর্কতা জরুরি যেন তা শরিয়তের নির্ধারিত পথে ব্যয় হয় এবং প্রকৃত প্রাপকের হাতে পৌঁছে যায়। তবেই যাকাত হবে কবুল, সমাজ হবে ন্যায়ের প্রতিচ্ছবি।