বাংলাদেশ ব্যাংকে ভুয়া পরিচয়ে এক যুগের চাকরি: চাচা-ভাতিজার চাঞ্চল্যকর প্রতারণা ফাঁস

- আপডেট সময় ১২:৪৮:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
- / 3
বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে নজিরবিহীন প্রতারণার ঘটনা ফাঁস হয়েছে। ভুয়া পরিচয়ে দীর্ঘ ১২ বছর বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করেছেন মো. আবদুল ওয়ারেশ আনসারী নামে এক ব্যক্তি, যিনি আদতে প্রকৃত ওয়ারেশ নন। বিষয়টি ধরা পড়ে সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ তদন্তে। এই ঘটনায় প্রতারক ব্যক্তি এবং তার চাচা—তৎকালীন নিয়োগ শাখার উপপরিচালক মো. শাহজাহান মিয়াকে বরখাস্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০১৩ সালের ৩১তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হন প্রকৃত মো. আবদুল ওয়ারেশ আনসারী। একই বছর তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদেও উত্তীর্ণ হন। বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার বেছে নেওয়ায় তিনি ব্যাংকের চাকরিতে যোগ দেননি। কিন্তু তার নিয়োগপত্র, পরীক্ষার খাতা ও পরিচয় ব্যবহার করে এক প্রতারক বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি পেয়ে যান এবং যোগ দেন ২২ জুলাই ২০১৩ সালে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, এই প্রতারণার মূল কারিগর ছিলেন শাহজাহান মিয়া যিনি নিয়োগ শাখায় কর্মরত ছিলেন এবং ওই প্রতারকের সরাসরি চাচা। এখন তিনি অতিরিক্ত পরিচালক পদে রয়েছেন।
তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলায় প্রতারক আনসারীকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এ সময় তিনি রাজশাহী অফিসে যুগ্ম পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একইসঙ্গে শাহজাহান মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্তে প্রমাণ মিললে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “এটি অত্যন্ত গুরুতর একটি প্রতারণা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৃত ওয়ারেশ আনসারী, যিনি বর্তমানে একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি), বলেন, “আমি কখনো বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করিনি। এমনকি জানতামও না যে কেউ আমার পরিচয় ব্যবহার করে এত বছর ধরে চাকরি করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানালে বিষয়টি প্রথম জানতে পারি। এটা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর প্রতারণা।”
তিনি আরও বলেন, “২০১৩ সালে নিয়োগপত্র পেয়েছিলাম, কিন্তু বিসিএসে যোগ দেওয়ায় ব্যাংকে যাইনি। এখন জানতে পারছি, আমার পরীক্ষার খাতা পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে। এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।”
প্রতারক আনসারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। শাহজাহান মিয়া কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এত বড় প্রতারণা ঘটতে পারে এটাই বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। নিয়োগ ব্যবস্থার এমন দুর্বলতা, যা দীর্ঘ ১২ বছরেও ধরা পড়েনি, তা তদন্ত ও সংস্কারের দাবি রাখে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো দেশের কেন্দ্রীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এত বড় প্রতারণা দীর্ঘদিন ধরা না পড়া শুধু দুর্বল তদারকি নয়, বরং নিয়োগ ব্যবস্থার গভীর সংকটের দিকেও ইঙ্গিত দেয়। এই ঘটনায় শুধু অর্থ নয়, বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন প্রকৃত প্রার্থী, প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা।
এখন সময় এসেছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নিয়োগ পদ্ধতির পূর্ণ সংস্কারের যাতে ভবিষ্যতে এমন প্রতারণা আর কখনো না ঘটে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য এই ঘটনা সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করা উচিত বলে মনে করেন কতৃপক্ষ।