সুনামগঞ্জ হাওরে ধান কাটা-মাড়াইয়ে জোর তৎপরতা, কৃষকের মুখে হাসি

- আপডেট সময় ১০:৫৭:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
- / ২৪ বার পড়া হয়েছে
সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে কয়েক দিনের টানা রোদে চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন কৃষকেরা। শস্যভরা মাঠে এখন চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম। শনিবার ও রোববার দিনের শুরু থেকেই রোদের দেখা মিলেছে, যা কৃষকের মনে নতুন আশার আলো জ্বেলেছে।
এর আগে ১৫ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত ও আগাম বন্যার শঙ্কায় হাওরের ধান দ্রুত কেটে নেওয়ার নির্দেশ দেয় জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে কৃষকের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ আধাপাকা ধান কেটে ফেলেন আতঙ্কে।
তবে বাস্তব পরিস্থিতি আলাদা। নির্দেশনার পর থেকে এখনো উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি হয়নি। উল্টো আকাশে রোদের তেজ বাড়ায় ধান কাটার জন্য আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন মাঠে ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর কাজে।
চলতি মৌসুমে জেলায় ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে, যার লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৩ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন। এর আনুমানিক বাজারমূল্য ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে প্রায় ৪৯ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে।
বিশ্বম্ভরপুরের কৃষক আবদুল গণি জানান, তাঁর জমির কিছু অংশের ধান পাকলেও বাকি অংশ এখনো পুরোপুরি পাকে নাই। অন্যদিকে কৃষক ইসমাইল আলী বলেন, “ধান এখনো কাঁচা, কিন্তু কাটতে চাপ দিচ্ছে। আমাদের কষ্ট বুঝে না ওরা।”
‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’-এর নেতা ওবায়দুল হক মনে করেন, আগাম ধান কাটার পেছনে দুটি উদ্দেশ্য কাজ করছে ফসলরক্ষা বাঁধ ও হারভেস্টর ব্যবসা। তিনি বলেন, “বৃষ্টি হলে বাঁধ ভেঙে ঢল নামবে, আর কাদাপানিতে হারভেস্টর চলবে না এমন ভাবনাতেই দ্রুত ধান কাটার প্রচারণা চালানো হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা কৃষকদের বলেছি আতঙ্কে পড়ে যেন কাঁচা ধান না কাটেন। কিন্তু কিছু কৃষক ভয়ে তা কেটেছেন।”
তবে কৃষকদের মতে, এ বছর হাওরের আবহাওয়া এখনো পর্যন্ত অনুকূলে রয়েছে। আরও দুই সপ্তাহ রোদ থাকলে প্রায় সব ধান ঘরে তোলা সম্ভব হবে। বর্তমানে নিচু জমির ধান কাটা চলছে, যা শেষ হলে কাটা হবে ওপরের জমির ধান, যেটি তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ।
পাউবো সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জে ৫০টি হাওরে ৬৮৭টি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫৯৬ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২৭ কোটি টাকা।
জেলা কৃষি অফিসের উপপরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ বলেন, “হাওরের পরিস্থিতি ভালো আছে। আশা করছি ৫ মে পর্যন্ত ধান কাটার কাজ নির্বিঘ্নে চলবে।”