চারগুণ মাশুল আদায়ে অনড় চট্টগ্রাম বন্দর, বিপাকে আমদানি-রফতানি খাত

- আপডেট সময় ১০:২২:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
- / 58
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কনটেইনার জট কমাতে চারগুণ হারে বাড়তি মাশুল আদায়ের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। এতে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে বড় ধরনের সংকটের আশঙ্কা করছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো, বিশেষত বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। সংগঠনটি বন্দরের কাছে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে।
ভোগ্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট ঠেকাতে কঠোর সিদ্ধান্ত
মূলত, আমদানি করা ভোগ্যপণ্য বন্দরে আটকে রেখে বাজারে দাম বাড়ানোর অপচেষ্টা নস্যাৎ করতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। মার্চের শুরুতে বন্দরে ৪৫ হাজারের বেশি কনটেইনার আটকে থাকলেও বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৬৫১ টিইইউএস-এ।
বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, “মাশুল বাড়ানোর ফলে প্রতিদিন অতিরিক্ত এক হাজার কনটেইনার বন্দরের বাইরে যাচ্ছে, যা ইতিবাচক।”
৯ মার্চ পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর ১০ মার্চ থেকে ২০ ফুট সাইজের কনটেইনারে প্রতিদিনের জন্য ৪৮ মার্কিন ডলার এবং ৪০ ফুট সাইজের কনটেইনারে ৯৬ মার্কিন ডলার মাশুল নির্ধারণ করা হয়।
বিজিএমইএ’র আপত্তি, বাড়তি খরচের শঙ্কা
এই সিদ্ধান্তে বিজিএমইএ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংগঠনের নেতারা বলছেন, পোশাকশিল্পের রফতানি ব্যয় বাড়বে এবং প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব বলেন, “বন্দর যদি অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে, তাহলে শুল্ক আদায়ের পরিমাণ কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।”
বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, “এটি ব্যবসায়ীদের জন্য বড় হুমকি। চারগুণ বাড়তি খরচ রফতানিকারকরা বহন করতে পারবে না, কারণ অর্ডার নেওয়ার সময় এ হিসাব করা হয়নি।”
বন্দরের যুক্তি ও বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ
বন্দর কর্তৃপক্ষের মতে, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা বন্দরে পণ্য ফেলে রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছিলেন, যা রমজানের বাজারকে অস্থির করতো। এই কঠোর অবস্থানের ফলে ভোগ্যপণ্য দ্রুত ডেলিভারি হচ্ছে এবং বাজারে স্বাভাবিক সরবরাহ বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে।
এদিকে, বিজিএমইএ কাস্টমস জটিলতার কারণে এফসিএল কনটেইনার বন্দরের ইয়ার্ডে আটকে থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে বন্দর চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে। তবে, বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্র-শনিবারসহ সরকারি ছুটির দিনেও চাল, ডাল, চিনি, ছোলার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ডেলিভারি অব্যাহত রাখা হবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের অবস্থান এখনো পরিবর্তন না হওয়ায় আমদানি-রফতানি খাতের ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তবে পরিস্থিতির উপর নজর রেখে প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।