১০:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
শিরোনাম :
মোহাম্মদপুরে মা–মেয়েকে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হচ্ছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ঢাকা-১১ আসনে নির্বাচন করবেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম থাই–কাম্বোডিয়া সীমান্তে পুনরায় উত্তেজনা: অস্ত্রবিরতি ভেঙে বিমান হামলা, নিহত ১ সৈন্য ইসির সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধি দল জার্মান সেনাবাহিনী বাড়ছে: ২০৩৫ সালের মধ্যে ২,৬০,০০০ সক্রিয় সদস্যের লক্ষ্য অনুমোদন মধ্যপ্রাচ্যের কঠিনতম পানি প্রকল্প সম্পন্ন করল ইরান ফিনল্যান্ডে ডাটা সেন্টারের নির্গত  তাপে গরম হচ্ছে পুরো শহর চীন কোয়ান্টাম কম্পিউটারে সফলতা পেলে যুক্তরাষ্ট্রকে এক নিমেষে প্রস্তরযুগে পাঠিয়ে দেবে যুক্তরাষ্ট্রের F-35 যুদ্ধবিমান প্রকল্পে ফিরে আসার বিষয়ে আরো একধাপ এগিয়ে গেল তুরস্ক: এমনটাই জানিয়েছেন তুরস্কে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত টম ব্যারাক।

নওগাঁর রায়হান আলম: আমচাষে নবজাগরণ ঘটানো এক সাহসী কৃষক

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০১:৫৪:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫
  • / 202

ছবি সংগৃহীত

 

 

নওগাঁর পোরশা ও সাপাহার এলাকায় ২০০৪-০৫ সালের দিকে যখন ধান, গম ও সর্ষের আবাদই ছিল দিগন্তজোড়া মাঠের চিত্র, তখনই ভিন্ন স্বপ্ন দেখেছিলেন রায়হান আলম (৪২)। পরিবারের তেমন সহযোগিতা না থাকলেও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী অবস্থায় তিনি ঠিক করেছিলেন ফসলি জমিতে আমের বাগান গড়বেন।

বিজ্ঞাপন

ধান ও গরু বিক্রি করে পাওয়া মাত্র এক লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে ৮ বিঘা জমিতে তিনি আম্রপালি, ল্যাংড়া, মল্লিকা, সুবর্ণরেখা ও ফজলি জাতের দুই হাজার চারা রোপণ করেন। মাত্র দুই বছরের মধ্যে তাঁর আয় হয় তিন লাখ টাকা।

সেখান থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে বাগানের পরিসর বাড়িয়ে বর্তমানে প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে ছোট-বড় ১৬টি ফলদ বাগানের গর্বিত মালিক তিনি। বছরে এসব বাগান থেকে তাঁর আয় ৫০ লাখ টাকার বেশি।

সাপাহারের দোয়াশ গ্রামের মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্ম রায়হানের। বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে তিনি কৃষিকেই জীবনের সাধনার জায়গা করে নেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ২০১২ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করে ২০১৩ সালে আরও ৫০ বিঘা জমি ইজারা নেন। এখন তাঁর বাগানে দেশি-বিদেশি ২০-২৫ প্রজাতির আমের পাশাপাশি ড্রাগন ও পেয়ারা চাষও হচ্ছে।

সম্প্রতি পোরশার বন্ধুপাড়ায় মিশ্র ফলবাগান পরিদর্শনের সময় রায়হান বলেন, ‘প্রথমে পরিবার কেউই আমাকে সমর্থন করেনি। তবু চেষ্টা করেছি। এখন ২০–২৫ জন মানুষ আমার বাগানে নিয়মিত কাজ করে।’ তিনি জানান, গত বছর আম, ড্রাগন ও পেয়ারা মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার বিক্রি হয়েছে, যা থেকে শ্রমিক, সেচ, ওষুধের খরচ বাদে ৫০ লাখ টাকা লাভ করেছেন। এ বছর ৬০ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন।

নতুন চাষিদের জন্য তাঁর পরামর্শ, ‘একই জাতের আমগাছ না লাগিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পাকার মতো একাধিক জাতের আম চাষ করুন। এতে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাজারে আম সরবরাহ করা সম্ভব হয় এবং লোকসানের ঝুঁকি কমে।’

পোরশার সাইদুর রহমান বলেন, ‘রায়হান ভাইয়ের দেখাদেখি আমিও নাবি জাতের বারি-৪ ও গৌড়মতি চাষ শুরু করেছি। মৌসুমের শেষ দিকে এগুলো বেশি দামে বিক্রি হয়।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, রায়হান আলমের মতো উদ্যোক্তারা প্রমাণ করেছেন ভিন্ন জাতের আম চাষ করে আরও বেশি আয় করা সম্ভব। এতে অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছেন এবং নওগাঁর আমশিল্প আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

নওগাঁর রায়হান আলম: আমচাষে নবজাগরণ ঘটানো এক সাহসী কৃষক

আপডেট সময় ০১:৫৪:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫

 

 

নওগাঁর পোরশা ও সাপাহার এলাকায় ২০০৪-০৫ সালের দিকে যখন ধান, গম ও সর্ষের আবাদই ছিল দিগন্তজোড়া মাঠের চিত্র, তখনই ভিন্ন স্বপ্ন দেখেছিলেন রায়হান আলম (৪২)। পরিবারের তেমন সহযোগিতা না থাকলেও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী অবস্থায় তিনি ঠিক করেছিলেন ফসলি জমিতে আমের বাগান গড়বেন।

বিজ্ঞাপন

ধান ও গরু বিক্রি করে পাওয়া মাত্র এক লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে ৮ বিঘা জমিতে তিনি আম্রপালি, ল্যাংড়া, মল্লিকা, সুবর্ণরেখা ও ফজলি জাতের দুই হাজার চারা রোপণ করেন। মাত্র দুই বছরের মধ্যে তাঁর আয় হয় তিন লাখ টাকা।

সেখান থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে বাগানের পরিসর বাড়িয়ে বর্তমানে প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে ছোট-বড় ১৬টি ফলদ বাগানের গর্বিত মালিক তিনি। বছরে এসব বাগান থেকে তাঁর আয় ৫০ লাখ টাকার বেশি।

সাপাহারের দোয়াশ গ্রামের মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্ম রায়হানের। বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে তিনি কৃষিকেই জীবনের সাধনার জায়গা করে নেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ২০১২ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করে ২০১৩ সালে আরও ৫০ বিঘা জমি ইজারা নেন। এখন তাঁর বাগানে দেশি-বিদেশি ২০-২৫ প্রজাতির আমের পাশাপাশি ড্রাগন ও পেয়ারা চাষও হচ্ছে।

সম্প্রতি পোরশার বন্ধুপাড়ায় মিশ্র ফলবাগান পরিদর্শনের সময় রায়হান বলেন, ‘প্রথমে পরিবার কেউই আমাকে সমর্থন করেনি। তবু চেষ্টা করেছি। এখন ২০–২৫ জন মানুষ আমার বাগানে নিয়মিত কাজ করে।’ তিনি জানান, গত বছর আম, ড্রাগন ও পেয়ারা মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার বিক্রি হয়েছে, যা থেকে শ্রমিক, সেচ, ওষুধের খরচ বাদে ৫০ লাখ টাকা লাভ করেছেন। এ বছর ৬০ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন।

নতুন চাষিদের জন্য তাঁর পরামর্শ, ‘একই জাতের আমগাছ না লাগিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পাকার মতো একাধিক জাতের আম চাষ করুন। এতে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাজারে আম সরবরাহ করা সম্ভব হয় এবং লোকসানের ঝুঁকি কমে।’

পোরশার সাইদুর রহমান বলেন, ‘রায়হান ভাইয়ের দেখাদেখি আমিও নাবি জাতের বারি-৪ ও গৌড়মতি চাষ শুরু করেছি। মৌসুমের শেষ দিকে এগুলো বেশি দামে বিক্রি হয়।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, রায়হান আলমের মতো উদ্যোক্তারা প্রমাণ করেছেন ভিন্ন জাতের আম চাষ করে আরও বেশি আয় করা সম্ভব। এতে অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছেন এবং নওগাঁর আমশিল্প আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে।