হরমুজ প্রণালি বন্ধের আশঙ্কায় জ্বালানি ঘাটতির ঝুঁকিতে বাংলাদেশ, বিকল্প খোঁজার তাগিদ

- আপডেট সময় ১১:২৬:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
- / 5
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনার ফলে হরমুজ প্রণালি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য নতুন করে জ্বালানি সংকটের শঙ্কা তৈরি করেছে। বিশ্বে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই জলপথ দিয়ে প্রতিদিন পরিবাহিত হয় প্রায় ২০ শতাংশ জ্বালানি তেল, যার ৭০ শতাংশের গন্তব্য দক্ষিণ এশিয়া।
বাংলাদেশের আমদানিকৃত অপরিশোধিত তেল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) অর্ধেকের বেশি আসে কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে, যাদের জ্বালানি রপ্তানির একমাত্র রুট হরমুজ প্রণালি। যদি এই রুট বন্ধ হয়ে যায়, তবে কাতার থেকে এলএনজি আমদানি অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) জানিয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ ৪৮৭টি এলএনজি কার্গো আমদানি করেছে। এর মধ্যে ২৬৭টি এসেছে কাতার থেকে এবং ওমান থেকে ১২২টি। চলতি অর্থবছরেও এপ্রিল পর্যন্ত আমদানিকৃত ৫৬টি কার্গোর মধ্যে ৪৬টি এসেছে এই দুই দেশ থেকেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিকল্প রুটে এলএনজি পরিবহন যেমন সময়সাপেক্ষ, তেমনি ব্যয়বহুল। কনভেয়ার লজিস্টিক লিমিটেডের চেয়ারম্যান কবির আহমেদ জানান, “আগে কোনো সমস্যা হলে বিকল্প রুটে জ্বালানি আনতাম, কিন্তু এখন সেই অবস্থা নেই। বিকল্প রুটের অবকাঠামো প্রস্তুত নয়।”
এদিকে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তথ্যমতে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব থেকে বছরে প্রায় ১৪ লাখ টন অপরিশোধিত তেল আমদানি হয়। হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলেও সৌদি আরব লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগর হয়ে বিকল্প রুটে তেল পাঠাতে পারবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “দেশে এখনো নিজের উৎপাদন দিয়ে চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। এই সংকট আরও বাড়লে ফাইবারসহ বিভিন্ন কাঁচামালের দাম বাড়বে।”
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে জ্বালানির বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে হবে। অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা থেকেও এলএনজি আমদানি সম্ভব, তবে তাৎক্ষণিক সরবরাহ সম্ভব নয়। তাই কাতার-নির্ভর দেশগুলোর সঙ্গে যৌথ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজতে হবে।”
পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আগেই বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করছেন সংশ্লিষ্টরা।