যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি, বিরল খনিজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত

- আপডেট সময় ১২:০৫:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫
- / 21
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। দুই দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মঙ্গলবার জানিয়েছেন, তারা একটি কাঠামোগত চুক্তিতে পৌঁছেছেন যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিরোধে সাময়িক সমাধানের পথ খুলে দেবে। এতে চীনের বিরল খনিজ রপ্তানিতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগ তৈরি হবে। তবে এই চুক্তি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
লন্ডনে অনুষ্ঠিত দুই দিনের বৈঠকের পর মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক জানান, “এই কাঠামোটি জেনেভায় স্বাক্ষরিত আগের সমঝোতার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের একটি ধাপ। এতে পাল্টা শুল্ক হ্রাসের পথ সুগম হবে।” তবে জেনেভার সেই সমঝোতা চীনের বিরল খনিজের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে আটকে যায়। জবাবে ট্রাম্প প্রশাসনও প্রযুক্তিপণ্যের রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করে, যার মধ্যে ছিল সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন সফটওয়্যার ও কিছু রাসায়নিক উপাদান।
লুটনিক জানান, লন্ডনের এই চুক্তির আওতায় কিছু মার্কিন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। তবে বিস্তারিত না জানালেও তিনি বলেন, “আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুমোদনের জন্য ফিরে যাবো, চীনের পক্ষও প্রেসিডেন্ট শি’র অনুমোদন নেবে। উভয়পক্ষ সম্মত হলে এই কাঠামো বাস্তবায়িত হবে।”
চীনের ভাইস কমার্স মন্ত্রী লি চেংগ্যাং বলেন, “দুই দেশই সাম্প্রতিক রাষ্ট্রপ্রধানদের ফোনালাপ এবং জেনেভা বৈঠকের আলোকে একটি কাঠামোগত সমঝোতায় পৌঁছেছে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন এই কাঠামো জেনেভার বোঝাপড়াকে টিকিয়ে রাখলেও, যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা শুল্ক আরোপ এবং চীনের রপ্তানিনির্ভর অর্থনৈতিক মডেল সংক্রান্ত অভিযোগের স্থায়ী সমাধান নয়।
চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও, উভয় দেশ যদি আগামী ১০ আগস্টের মধ্যে বিস্তৃত চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারে, তবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিদ্যমান শুল্ক যথাক্রমে ৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৪৫ এবং ১২৫ শতাংশে উন্নীত হবে। এতে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ক্রিস ওয়েস্টন বলেন, “চুক্তির বাস্তবায়ন নির্ভর করবে কতটা বিরল খনিজ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হবে এবং মার্কিন চিপস রপ্তানি কতটা সহজ হবে তার ওপর।”
লুটনিক আরও জানান, বিরল খনিজ ও চুম্বকের রপ্তানি ছিল চুক্তির মূল বিষয়। যখন এসব উপাদান চীন থেকে আসেনি, তখন যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে কিছু প্রযুক্তিপণ্যের রপ্তানি স্থগিত করে, যা এখন পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হবে। চীনের পদক্ষেপে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধাক্কা লাগে।
বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যে ২০২৫ সালের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ০.৪ শতাংশ কমিয়ে ২.৩ শতাংশ করেছে, যার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে শুল্ক বৃদ্ধি ও অনিশ্চয়তাকে দায়ী করা হয়েছে।
লুটনিক জানান, ট্রাম্প ও শির সাম্প্রতিক ফোনালাপের মাধ্যমেই লন্ডনের এই চুক্তি অগ্রগতি পায়। উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাসে চীনের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ৩৪.৫ শতাংশ কমেছে, যা মহামারির পর সর্বোচ্চ পতন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের একটি আপিল আদালত ট্রাম্পের একতরফা ৩৪ শতাংশ শুল্ক বহাল রেখেছে, যদিও নিম্ন আদালত এসব শুল্কের আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অব্যাহত রাখার কৌশলেরই অংশ।
সূত্র: রয়টার্স