শ্রীপুরে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক, উত্তপ্ত পরিস্থিতি

- আপডেট সময় ১২:২৪:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫
- / 9
গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত ডিবিএল গার্মেন্টসের শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জনের বেশি শ্রমিক আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত এক শ্রমিকের আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও সড়ক অবরোধ শুরু করলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, সম্প্রতি গার্মেন্টসের এক নারী শ্রমিক আত্মহত্যা করেন। সহকর্মীরা অভিযোগ করেন, অতিরিক্ত কাজের চাপ, বেতন অনিয়ম এবং কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতাই ওই শ্রমিকের আত্মহত্যার পেছনে মূল কারণ। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সকাল থেকেই কারখানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তারা সড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন।
বিক্ষোভের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শ্রমিকদের অভিযোগ, পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাধা দিয়েছে এবং রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। এতে বহু শ্রমিক আহত হন।
শ্রমিক আলমগীর হোসেন বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের সহকর্মীর মৃত্যুর বিচার ও শ্রমিকস্বার্থে দাবি জানাতে এসেছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের উপর চড়াও হয়, গুলি করে, গ্যাস ছোড়ে। অনেকেই গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।”
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল বারিক। তিনি বলেন, “শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে, তবে গুলি বা টিয়ারশেল ব্যবহারের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
ঘটনার পর থেকেই গার্মেন্টস এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গার্মেন্টস সংলগ্ন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যদিও সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়, তবুও শ্রমিকদের একাংশ এখনো বিভিন্ন দাবিতে অনড় রয়েছেন।
স্থানীয় একটি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষে আহত শ্রমিকদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অনেকেই রাবার বুলেটের মতো বস্তু দ্বারা আহত বলে দাবি করেছেন।
এই ঘটনায় গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি। তবে শ্রমিকদের দাবি এবং আন্দোলনের পেছনের কারণ তদন্তে একটি অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠনের দাবি উঠেছে।
এদিকে শ্রমিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে আন্দোলনের পরিধি আরও বিস্তৃত করা হবে। তারা আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান এবং শ্রমিকস্বার্থে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
শ্রীপুরের এই ঘটনা দেশের তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ নিয়ে আবারো প্রশ্ন তুলেছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন।