ঢাকা ০৫:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পবিত্র ঈদুল আযহায় স্বাস্থ্যসচেতনতা: সুস্থ থাকুন, নিরাপদে ঈদ করুন আর্জেন্টিনার জয় চিলিতে, গোল আলভারেজের ঈদুল আজহা উপলক্ষে ওমানে ৬৪৫ কারাবন্দিকে ক্ষমা দিলেন সুলতান হাইথাম দুবাইয়ে ঈদুল আজহার নামাজ সম্পন্ন, ঈদগাহে মুসল্লিদের ঢল বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ বিলিয়ন ডলারে ফের অন্তঃসত্ত্বা ‘দৃশ্যম’ অভিনেত্রী ঈশিতা দত্ত, প্রকাশ্যে বেবি বাম্প বেলুন, রশি আর জেদ, এই তিন দিয়েই ডুবন্ত যুদ্ধজাহাজ তুলল উত্তর কোরিয়া 🕋 পবিত্র হজ আজ পুলিশের জন্য কেনা হচ্ছে ২০০ গাড়ি

নয় মাস পর পৃথিবীতে ফিরলেন নভোচারী সুনীতা ও বুচ

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১০:১৬:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
  • / 44

ছবি সংগৃহীত

 

আট দিনের জন্য মহাকাশে গিয়েছিলেন, ফিরে আসতে লেগে গেল দীর্ঘ নয় মাস। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আটকে পড়া মার্কিন নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনীতা উইলিয়ামস অবশেষে পৃথিবীতে ফিরেছেন। নাসার ক্রু-১০ মিশনের মাধ্যমে স্পেসএক্সের একটি ক্যাপসুলে চড়ে তারা নিরাপদে অবতরণ করেন।

গত বছরের ৫ জুন বোয়িং নির্মিত স্টারলাইনার রকেটে করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন এই দুই নভোচারী। তবে ক্যাপসুলে প্রযুক্তিগত জটিলতা দেখা দিলে তাদের পরিকল্পিত আট দিনের পরিবর্তে দীর্ঘ সময় মহাকাশে অবস্থান করতে হয়। স্টারলাইনার মহাকাশযানটি সেপ্টেম্বরে খালি অবস্থায় পৃথিবীতে ফিরলেও সুনীতা ও বুচকে মহাকাশে রেখে আসা হয়, কারণ নিরাপদে তাদের ফিরিয়ে আনার উপযুক্ত ব্যবস্থা ছিল না। অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পর ফ্লোরিডার উপকূলে স্প্ল্যাশডাউন করে তাদের বহনকারী ক্যাপসুল।

স্পেসএক্স ক্যাপসুল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পর চারটি প্যারাসুট খোলে, যা ধীরে ধীরে সমুদ্রপৃষ্ঠে অবতরণ নিশ্চিত করে। এরপর একটি উদ্ধারকারী জাহাজ ক্যাপসুলটিকে তুলে নেয়। ক্যাপসুলের দরজা খুলতেই দেখা যায় দুই নভোচারী হাত নাড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। দীর্ঘদিন শূন্য মাধ্যাকর্ষণে থাকার পর তারা স্ট্রেচারের সহায়তা নিয়ে বেরিয়ে আসেন। নাসার মেডিকেল টিম দ্রুত তাদের শারীরিক পরীক্ষা শুরু করে, যা মহাকাশ থেকে ফেরার পর নিয়মিত একটি প্রক্রিয়া।

নাসার বাণিজ্যিক ক্রু প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপক স্টিভ স্টিচ সংবাদ সম্মেলনে জানান, এটি নাসার জন্য একটি বড় সাফল্য। আট দিনের পরিকল্পিত মিশন দীর্ঘ হওয়ায় জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তবে ক্রুদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য তারা সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। নাসার মহাকাশ অপারেশন মিশনের ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জোয়েল মন্টালবানো একে ‘অসাধারণ’ ঘটনা বলে উল্লেখ করেন এবং স্পেসএক্সকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে প্রশংসা করেন।

দীর্ঘদিন মহাকাশে থাকার ফলে নভোচারীদের শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন হয়। শূন্য মাধ্যাকর্ষণের কারণে হাড়ের ঘনত্ব কমে যেতে পারে, পেশিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে এবং ভারসাম্য সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই পৃথিবীতে ফেরার পর নভোচারীদের বেশ কিছুদিন পুনর্বাসন ও চিকিৎসা পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

নভোচারীদের ফিরে আনার বিষয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন নাসাকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল, এমনকি স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কও অভিযানের ত্বরান্বিত হওয়ার পক্ষে ছিলেন। তবে ট্রাম্পের উপদেষ্টারা দাবি করেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সুনীতা ও বুচকে মহাকাশে ফেলে রেখেছিলেন, যদিও এ ধরনের দাবির কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি।

এই মিশন বোয়িংয়ের জন্য এক বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ তাদের স্টারলাইনারের প্রথম ক্রু মিশন নানা জটিলতায় পড়েছে। বিপরীতে, স্পেসএক্সের ক্রু মিশন আবারও নিজেদের কার্যকারিতা প্রমাণ করল। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পৃথিবীতে ফিরে আসা দুই নভোচারীর জন্য এটি ছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতা, আর তাদের পরিবার ও সহকর্মীদের জন্য স্বস্তির মুহূর্ত।

নিউজটি শেয়ার করুন

নয় মাস পর পৃথিবীতে ফিরলেন নভোচারী সুনীতা ও বুচ

আপডেট সময় ১০:১৬:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

 

আট দিনের জন্য মহাকাশে গিয়েছিলেন, ফিরে আসতে লেগে গেল দীর্ঘ নয় মাস। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আটকে পড়া মার্কিন নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনীতা উইলিয়ামস অবশেষে পৃথিবীতে ফিরেছেন। নাসার ক্রু-১০ মিশনের মাধ্যমে স্পেসএক্সের একটি ক্যাপসুলে চড়ে তারা নিরাপদে অবতরণ করেন।

গত বছরের ৫ জুন বোয়িং নির্মিত স্টারলাইনার রকেটে করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন এই দুই নভোচারী। তবে ক্যাপসুলে প্রযুক্তিগত জটিলতা দেখা দিলে তাদের পরিকল্পিত আট দিনের পরিবর্তে দীর্ঘ সময় মহাকাশে অবস্থান করতে হয়। স্টারলাইনার মহাকাশযানটি সেপ্টেম্বরে খালি অবস্থায় পৃথিবীতে ফিরলেও সুনীতা ও বুচকে মহাকাশে রেখে আসা হয়, কারণ নিরাপদে তাদের ফিরিয়ে আনার উপযুক্ত ব্যবস্থা ছিল না। অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পর ফ্লোরিডার উপকূলে স্প্ল্যাশডাউন করে তাদের বহনকারী ক্যাপসুল।

স্পেসএক্স ক্যাপসুল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পর চারটি প্যারাসুট খোলে, যা ধীরে ধীরে সমুদ্রপৃষ্ঠে অবতরণ নিশ্চিত করে। এরপর একটি উদ্ধারকারী জাহাজ ক্যাপসুলটিকে তুলে নেয়। ক্যাপসুলের দরজা খুলতেই দেখা যায় দুই নভোচারী হাত নাড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। দীর্ঘদিন শূন্য মাধ্যাকর্ষণে থাকার পর তারা স্ট্রেচারের সহায়তা নিয়ে বেরিয়ে আসেন। নাসার মেডিকেল টিম দ্রুত তাদের শারীরিক পরীক্ষা শুরু করে, যা মহাকাশ থেকে ফেরার পর নিয়মিত একটি প্রক্রিয়া।

নাসার বাণিজ্যিক ক্রু প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপক স্টিভ স্টিচ সংবাদ সম্মেলনে জানান, এটি নাসার জন্য একটি বড় সাফল্য। আট দিনের পরিকল্পিত মিশন দীর্ঘ হওয়ায় জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তবে ক্রুদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য তারা সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। নাসার মহাকাশ অপারেশন মিশনের ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জোয়েল মন্টালবানো একে ‘অসাধারণ’ ঘটনা বলে উল্লেখ করেন এবং স্পেসএক্সকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে প্রশংসা করেন।

দীর্ঘদিন মহাকাশে থাকার ফলে নভোচারীদের শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন হয়। শূন্য মাধ্যাকর্ষণের কারণে হাড়ের ঘনত্ব কমে যেতে পারে, পেশিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে এবং ভারসাম্য সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই পৃথিবীতে ফেরার পর নভোচারীদের বেশ কিছুদিন পুনর্বাসন ও চিকিৎসা পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

নভোচারীদের ফিরে আনার বিষয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন নাসাকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল, এমনকি স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কও অভিযানের ত্বরান্বিত হওয়ার পক্ষে ছিলেন। তবে ট্রাম্পের উপদেষ্টারা দাবি করেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সুনীতা ও বুচকে মহাকাশে ফেলে রেখেছিলেন, যদিও এ ধরনের দাবির কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি।

এই মিশন বোয়িংয়ের জন্য এক বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ তাদের স্টারলাইনারের প্রথম ক্রু মিশন নানা জটিলতায় পড়েছে। বিপরীতে, স্পেসএক্সের ক্রু মিশন আবারও নিজেদের কার্যকারিতা প্রমাণ করল। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পৃথিবীতে ফিরে আসা দুই নভোচারীর জন্য এটি ছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতা, আর তাদের পরিবার ও সহকর্মীদের জন্য স্বস্তির মুহূর্ত।