শুল্ক যুদ্ধের ঘূর্ণিতে ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের

- আপডেট সময় ১২:৪০:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
- / 3
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে আবারো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক খোলা চিঠির মাধ্যমে ট্রাম্প এ সিদ্ধান্ত জানান, যা দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার ব্রাজিলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
চিঠিতে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ব্রাজিল সরকার মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর বিচার প্রক্রিয়াকে ‘উইচ হান্ট’ হিসেবে পরিচালিত করছে। উল্লেখ্য, বোলসোনারোর বিরুদ্ধে ২০২২ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগে মামলা চলছে।
ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা কড়া প্রতিক্রিয়ায় জানান, যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করলে ব্রাজিলও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। একইসঙ্গে তিনি ব্রাজিলের বিচার ব্যবস্থায় কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন। লুলা বলেন, “ব্রাজিলে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”
এই সপ্তাহেই ট্রাম্প ও লুলার মধ্যে বোলসোনারোর বিচার নিয়ে প্রকাশ্যে তীব্র মতবিরোধ দেখা দেয়। ট্রাম্প সাবেক ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে বিচারকে ‘আন্তর্জাতিক কলঙ্ক’ বলে মন্তব্য করেন। চিঠিতে তিনি আরও জানান, ব্রাজিল থেকে তামা (Copper) আমদানির ওপরও ৫০ শতাংশ শুল্ক ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। তার দাবি, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য জরুরি।
এই সপ্তাহে ট্রাম্প বিশ্বের ২২টি দেশকে চিঠি পাঠিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও শ্রীলঙ্কার মতো গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। তবে ব্রাজিলকে পাঠানো চিঠিটি ছিল সবচেয়ে আক্রমণাত্মক। যেখানে স্পষ্টভাবে ১০ শতাংশ থেকে এক লাফে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
চিঠিতে ট্রাম্প জানান, মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরকে ৩০১ ধারা অনুসারে ব্রাজিলের ডিজিটাল বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেওয়া হবে। অতীতেও এই ধারার মাধ্যমে ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপ করেছিলেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ব্রাজিল সরকার মার্কিন নাগরিকদের বাকস্বাধীনতা ও নির্বাচনী স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করছে। তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘ট্রাম্প মিডিয়া’ বর্তমানে ব্রাজিলের আদালতের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে রয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি ব্রাজিল এক্স (সাবেক টুইটার)-কে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছিল কারণ তারা ভুল তথ্য ছড়ানো অ্যাকাউন্ট বন্ধে ব্যর্থ হয়েছিল।
এদিকে, ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলো তাদের প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত কনটেন্টের জন্য দায়ী থাকবে। ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছেন।
রিও ডি জেনেইরোতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলন নিয়েও ট্রাম্প ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই জোট ‘অ্যান্টি-আমেরিকান’ মনোভাব পোষণ করে। তিনি ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। জবাবে প্রেসিডেন্ট লুলা বলেন, “ট্রাম্প বুঝতে পারছেন না যে, পৃথিবী বদলে গেছে। আমরা কোনো সম্রাট চাই না।”
ট্রাম্প চিঠিতে বোলসোনারোকে ‘অত্যন্ত সম্মানিত নেতা’ বলে উল্লেখ করে বলেন, “রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতেই এই বিচার প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে, যা আমি নিজেও অভিজ্ঞতা থেকে জানি।” জবাবে বোলসোনারো ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।