তীব্র গরমে যে সমস্ত জটিল রোগের ঝুকি রয়েছে

- আপডেট সময় ০১:৫৫:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫
- / 13
বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত গ্রীষ্মকালে তীব্র গরমের সমস্যা বেড়েই চলেছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে। তাই এই তীব্র গরমে সুস্থ থাকার উপায় জানাটা একান্তই জরুরি হয়ে উঠেছে। এই গরম থেকে সুরক্ষা না পেলে স্বাস্থ্যের নানা ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের কার্যকারিতাও কমে যায়। প্রচন্ড গরমে অনেকেরই শরীর হঠাৎ করে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, যার কারণে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়।
অতিরিক্ত গরমে কি কি সমস্যা হয়, তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
★ হিটস্ট্রোক
তীব্র গরমের সময় আমাদের শরীর নানা ঝুকির মুখোমুখি হয়, যার মধ্যে হিটস্ট্রোক অন্যতম। হিটস্ট্রোক তখন ঘটে যখন শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে যায় এবং শরীর তাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এটি সাধারণত দীর্ঘ সময় ধরে সূর্যের তাপে থাকার কারণে ঘটে থাকে। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে মাথা ঘোরা, তীব্র মাথাব্যাথা, ত্বক শুকিয়ে যাওয়া এবং বোধশক্তি হারানো। শিশু, বৃদ্ধ এবং রোগাক্রান্ত ব্যক্তিরা এই ঝুঁকিতে বেশি থাকে। তাই গরমে যথাযথ পানি পান, ছায়ায় থাকা এবং অতি গরম থেকে বিরত থাকার উপায় অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
★ ডিহাইড্রেশন
গরমের মৌসুমে আমাদের শরীরে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পায়। তীব্র গরমে অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরের লবণ পানি বের হয়ে যায়। তা যদি যথাযথ সময়ে পূরণ না করা হয়, তাহলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। ডিহাইড্রেশনের ফলে শরীরে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়, যেমন: মাথাব্যথা, ক্লান্তি, বমি এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে এসমস্যা বেশি দেখা দেয়। তাই গরমের দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত এবং খুব বেশি গরমে সরাসরি রোদে না যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সচেতন থাকলে ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করা সম্ভব।
★ রক্তচাপ বৃদ্ধি
গরমের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে আমাদের শরীরের উপর বিভিন্ন প্রভাব পড়ে। তীব্র গরমের কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কেননা আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে হৃদপিণ্ডের কার্য ক্ষমতা বেড়ে যায়, যা রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে এবং রক্তচাপ বাড়ায়। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য এই গরমে সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও, তীব্র গরমে পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) হওয়ার ফলে রক্তের ঘনত্ব বাড়ে, যা রক্তচাপকে আরও বাড়াতে পারে।
★ ত্বকের সমস্যা
তীব্র গরমে ত্বকের সমস্যা বাড়তে পারে। সূর্যের তীব্র অতি বেগুনি রশ্মি ত্বক পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে, এছাড়া রসানবার্ন, র্যাশ এবং নানা ধরনের অ্যালার্জিও হতে পারে। অতিরিক্ত ঘামের কারণে ত্বকে একজিমা বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার ফলে ত্বকে চুলকানি ও লালচে দাগ দেখা দিতে পারে। গরম আবহাওয়ায় অপর্যাপ্ত পানি পান ত্বককে ভিতর থেকে ডিহাইড্রেটেড করে তোলে।
★ মানসিক চাপ
তীব্র গরম মানসিক চাপের একটি অন্যতম কারণ। গরমের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে আমাদের মনোযোগ কমে যেতে পারে এবং উদ্বেগ বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া, অতিরিক্ত গরমে ঘর থেকে বের হতে ইচ্ছা না করা, কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া, এবং সামাজিক যোগাযোগের অভাবও মানসিক চাপের ঝুঁকি বাড়ায়। গরম আবহাওয়ার ফলে ডিহাইড্রেশন, দুর্বলতা এবং ক্লান্তি দেখা দিতে পারে, যা মানসিক সুস্থতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
তীব্র গরমে কাদের ঝুঁকি বেশি?
তীব্র গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়ে বিশেষত কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠী। যেমন, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা বেশি বিপদে থাকেন। তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কমে যায়, ফলে ডিহাইড্রেশন বা তাপজনিত রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়া, যেসব লোক ক্রনিক রোগে ভুগছেন, যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা শ্বাসকষ্ট, তাদের জন্যও গরমের প্রভাব মারাত্মক হতে পারে। শ্রমজীবী মানুষ যারা বাইরে কাজ করেন, তাদেরও বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন, কারণ তারা তাপের প্রভাবের স্বীকার হয়। সুতরাং, গরমে নিরাপদ থাকতে পর্যাপ্ত পানি পান এবং ছায়ায় থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
তীব্র গরম থেকে বাঁচতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। প্রচন্ড গরমে সুস্থ থাকার উপায়গুলি মেনে চললে গরমের তীব্রতা থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আমাদের সবার উচিত গরমে সচেতন থাকা এবং তীব্র গরমে করণীয় বিষয়গুলি অনুসরণ করা।