ঢাকা ১১:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পবিত্র ঈদুল আযহায় স্বাস্থ্যসচেতনতা: সুস্থ থাকুন, নিরাপদে ঈদ করুন আর্জেন্টিনার জয় চিলিতে, গোল আলভারেজের ঈদুল আজহা উপলক্ষে ওমানে ৬৪৫ কারাবন্দিকে ক্ষমা দিলেন সুলতান হাইথাম দুবাইয়ে ঈদুল আজহার নামাজ সম্পন্ন, ঈদগাহে মুসল্লিদের ঢল বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ বিলিয়ন ডলারে ফের অন্তঃসত্ত্বা ‘দৃশ্যম’ অভিনেত্রী ঈশিতা দত্ত, প্রকাশ্যে বেবি বাম্প বেলুন, রশি আর জেদ, এই তিন দিয়েই ডুবন্ত যুদ্ধজাহাজ তুলল উত্তর কোরিয়া 🕋 পবিত্র হজ আজ পুলিশের জন্য কেনা হচ্ছে ২০০ গাড়ি
জেনে নিন অজানা

শীতপ্রধান দেশে জমাট বরফের নিচে জলজ প্রাণী বাঁচে কীভাবে?

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৪:৫৯:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫
  • / 105

ছবি সংগৃহীত

 

ফেইসবুকে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে সামনে আসে একজনের স্টোরির একটা ছবি। ছবিটা ওইখানের ওয়েদার আপডেট এর, তাপমাত্রার শো করছে মাইনাস তেরো (-১৩) ডিগ্রি। এটা দেখেই মনের কোণে ভেসে উঠে বিজ্ঞান এর একটি জনপ্রিয় প্রশ্ন, শীতপ্রধান দেশে জমাট বরফের নিচে জলজ প্রাণী বাঁচে কীভাবে? জমাট বরফের নিচে কিভাবে তরল পানি থাকে এবং এই তরল পানিতে কিভাবে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী বেঁচে থাকে, এই নিয়ে সোজাসুজি উত্তর হলো পানির ব্যতিক্রমধর্মী গঠন বৈশিষ্ট্য। পানি একটা রহস্যময় বৈশিষ্ট্যের যৌগ। সাধারণত তরলকে তাপ প্রয়োগ করলে তার আয়তন বাড়ে আবার ঐ তাপ অপসারণ করলে আয়তন কমে। কিন্তু পানিকে 4°C তাপমাত্রায় ঠান্ডা বা গরম যাই করা হোক না কেন তা প্রসারিত হয়। এটি তরল পদার্থের প্রসারণের সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম। একে পানির ব্যতিক্রমী প্রসারণ বলে।

 

শীত এলেই শীতপ্রধান দেশগুলোতে খাল-বিল, নদী-নালা, সাগর বা হ্রদে বরফ জমাট বাঁধতে দেখা যায়। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এর মধ্যেও মাছ বা জলজ প্রাণীরা দিব্যি বেঁচে থাকে। উত্তরটা লুকিয়ে আছে পানির বিশেষ এক ধর্মের মধ্যে। সবাই নিশ্চয়ই জানেন, ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানি জমে বরফ হয়ে যায়। এখানে একটা বিশেষ ব্যাপার আছে। সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানে মনে হতে পারে, পানির চেয়ে বরফের ঘনত্ব বেশি। কারণ প্রায় বেশির ভাগ পদার্থের জন্যই কথাটা সত্যি। কিন্তু পানির জন্য তা আসলে সত্য নয়। শুরুতেই দেখেছি, বেশির ভাগ পদার্থ তরল অবস্থা থেকে জমাট বাঁধলে তার ঘনত্ব বাড়ে। কিন্তু পানির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ব্যতিক্রম। পানির এই বিশেষ ধর্মের কারণে শীতপ্রধান দেশের খাল-বিল, নদী-নালা বা হ্রদের পানি জমে বরফ হয়ে গেলেও তার নিচে তরল পানি থাকে। সেই পানিতে মাছ বা অন্য প্রাণীদের বেঁচে থাকতে কোনো সমস্যা হয় না। পানির ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। আর পানি জমে বরফ হয় প্রায় শূন্য ডিগ্রি তাপমাত্রায়। শীতকালে পানির তাপমাত্রা কমতে কমতে একসময় ০ ডিগ্রি তাপমাত্রা বা তার নিচে নেমে যেতে থাকে। কিন্তু ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পর তাপমাত্রা কমে গেলেও পানির ঘনত্ব আর বাড়ে না। বরং ঘনত্ব কমতে থাকে, কিন্তু আয়তন বাড়ে। অর্থাৎ একই পরিমাণ পানির চেয়ে বরফ বেশি জায়গা দখল করে। (পানি ছাড়াও এই ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য দেখা যায় সিলিকন, গ্যালিয়াম ও প্লুটোনিয়ামে মৌলে।)

বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা গেছে, ৪ ডিগ্রির চেয়ে শূন্য ডিগ্রি তাপমাত্রায় পানির আয়তন বাড়ে প্রায় ৯ শতাংশ। কাজেই পানি জমে বরফ হয়ে গেলেও তা স্বাভাবিকভাবে পানির ওপর ভেসে ওঠে। এ কারণেই বরফ পানিতে ভাসে। একই কারণে রেফ্রিজারেটরে বোতলে কানায় কানায় পানি ভরে রাখলে, তা জমে বরফ হলে বোতলটা ফেটেও যেতে পারে। পানির এই বিশেষ ধর্মের কারণে শীতপ্রধান দেশের খাল-বিল, নদী-নালা বা হ্রদের পানি জমে বরফ হয়ে গেলেও তার নিচে তরল পানি থাকে। সেই পানিতে মাছ বা অন্য প্রাণীদের বেঁচে থাকতে কোনো সমস্যা হয় না। পানির এই ধর্ম না থাকলে কী হতো? মানে তাপমাত্রা কমতে কমতে হিমাঙ্ক বা তার নিচে নেমে যে বরফ জমাট বাঁধত, তা যদি তরল পানির চেয়ে কম ঘনত্বের না হতো, তাহলে খাল-বিল, নদী-নালা, সাগর বা হ্রদের তলদেশে জমা হতো।এভাবে একসময় সাগর বা নদীর সব পানিই ধীরে ধীরে পরিণত হতো জমাট বরফে।তাতে পানির তলের কোনো প্রাণীই টিকে থাকতে পারত না।শুধু তাই নয়, পানির ধর্ম এমনটি হলে, পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশও কখনো সম্ভব হতো না।

নিউজটি শেয়ার করুন

জেনে নিন অজানা

শীতপ্রধান দেশে জমাট বরফের নিচে জলজ প্রাণী বাঁচে কীভাবে?

আপডেট সময় ০৪:৫৯:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫

 

ফেইসবুকে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে সামনে আসে একজনের স্টোরির একটা ছবি। ছবিটা ওইখানের ওয়েদার আপডেট এর, তাপমাত্রার শো করছে মাইনাস তেরো (-১৩) ডিগ্রি। এটা দেখেই মনের কোণে ভেসে উঠে বিজ্ঞান এর একটি জনপ্রিয় প্রশ্ন, শীতপ্রধান দেশে জমাট বরফের নিচে জলজ প্রাণী বাঁচে কীভাবে? জমাট বরফের নিচে কিভাবে তরল পানি থাকে এবং এই তরল পানিতে কিভাবে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী বেঁচে থাকে, এই নিয়ে সোজাসুজি উত্তর হলো পানির ব্যতিক্রমধর্মী গঠন বৈশিষ্ট্য। পানি একটা রহস্যময় বৈশিষ্ট্যের যৌগ। সাধারণত তরলকে তাপ প্রয়োগ করলে তার আয়তন বাড়ে আবার ঐ তাপ অপসারণ করলে আয়তন কমে। কিন্তু পানিকে 4°C তাপমাত্রায় ঠান্ডা বা গরম যাই করা হোক না কেন তা প্রসারিত হয়। এটি তরল পদার্থের প্রসারণের সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম। একে পানির ব্যতিক্রমী প্রসারণ বলে।

 

শীত এলেই শীতপ্রধান দেশগুলোতে খাল-বিল, নদী-নালা, সাগর বা হ্রদে বরফ জমাট বাঁধতে দেখা যায়। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এর মধ্যেও মাছ বা জলজ প্রাণীরা দিব্যি বেঁচে থাকে। উত্তরটা লুকিয়ে আছে পানির বিশেষ এক ধর্মের মধ্যে। সবাই নিশ্চয়ই জানেন, ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানি জমে বরফ হয়ে যায়। এখানে একটা বিশেষ ব্যাপার আছে। সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানে মনে হতে পারে, পানির চেয়ে বরফের ঘনত্ব বেশি। কারণ প্রায় বেশির ভাগ পদার্থের জন্যই কথাটা সত্যি। কিন্তু পানির জন্য তা আসলে সত্য নয়। শুরুতেই দেখেছি, বেশির ভাগ পদার্থ তরল অবস্থা থেকে জমাট বাঁধলে তার ঘনত্ব বাড়ে। কিন্তু পানির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ব্যতিক্রম। পানির এই বিশেষ ধর্মের কারণে শীতপ্রধান দেশের খাল-বিল, নদী-নালা বা হ্রদের পানি জমে বরফ হয়ে গেলেও তার নিচে তরল পানি থাকে। সেই পানিতে মাছ বা অন্য প্রাণীদের বেঁচে থাকতে কোনো সমস্যা হয় না। পানির ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। আর পানি জমে বরফ হয় প্রায় শূন্য ডিগ্রি তাপমাত্রায়। শীতকালে পানির তাপমাত্রা কমতে কমতে একসময় ০ ডিগ্রি তাপমাত্রা বা তার নিচে নেমে যেতে থাকে। কিন্তু ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পর তাপমাত্রা কমে গেলেও পানির ঘনত্ব আর বাড়ে না। বরং ঘনত্ব কমতে থাকে, কিন্তু আয়তন বাড়ে। অর্থাৎ একই পরিমাণ পানির চেয়ে বরফ বেশি জায়গা দখল করে। (পানি ছাড়াও এই ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য দেখা যায় সিলিকন, গ্যালিয়াম ও প্লুটোনিয়ামে মৌলে।)

বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা গেছে, ৪ ডিগ্রির চেয়ে শূন্য ডিগ্রি তাপমাত্রায় পানির আয়তন বাড়ে প্রায় ৯ শতাংশ। কাজেই পানি জমে বরফ হয়ে গেলেও তা স্বাভাবিকভাবে পানির ওপর ভেসে ওঠে। এ কারণেই বরফ পানিতে ভাসে। একই কারণে রেফ্রিজারেটরে বোতলে কানায় কানায় পানি ভরে রাখলে, তা জমে বরফ হলে বোতলটা ফেটেও যেতে পারে। পানির এই বিশেষ ধর্মের কারণে শীতপ্রধান দেশের খাল-বিল, নদী-নালা বা হ্রদের পানি জমে বরফ হয়ে গেলেও তার নিচে তরল পানি থাকে। সেই পানিতে মাছ বা অন্য প্রাণীদের বেঁচে থাকতে কোনো সমস্যা হয় না। পানির এই ধর্ম না থাকলে কী হতো? মানে তাপমাত্রা কমতে কমতে হিমাঙ্ক বা তার নিচে নেমে যে বরফ জমাট বাঁধত, তা যদি তরল পানির চেয়ে কম ঘনত্বের না হতো, তাহলে খাল-বিল, নদী-নালা, সাগর বা হ্রদের তলদেশে জমা হতো।এভাবে একসময় সাগর বা নদীর সব পানিই ধীরে ধীরে পরিণত হতো জমাট বরফে।তাতে পানির তলের কোনো প্রাণীই টিকে থাকতে পারত না।শুধু তাই নয়, পানির ধর্ম এমনটি হলে, পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশও কখনো সম্ভব হতো না।