রংপুরের শতরঞ্জি: ঐতিহ্যের বুননে স্বনির্ভরতা, রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ৩৬ দেশে

- আপডেট সময় ১১:১৪:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫
- / 48
সময়ের আবর্তে হারিয়ে গেছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী মসলিন, কিন্তু টিকে আছে রংপুরের শতরঞ্জি শিল্প। ২০২১ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার জিআই স্বীকৃতি পাওয়া এই শিল্প আজ রংপুরের প্রায় ২০ হাজার নারীকে এনে দিয়েছে স্বনির্ভরতার আলো। দেশীয় বাজার ছাড়িয়ে শতরঞ্জি রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার ৩৬টিরও বেশি দেশে। বছরে এই শিল্প থেকে আয় হচ্ছে প্রায় ৪০ লাখ মার্কিন ডলার।
রংপুর নগরীর পশ্চিম প্রান্তে ঘাঘট নদীর তীর ঘেঁষে নিশবেতগঞ্জ গ্রাম, যেখানে প্রতিদিন খটখট শব্দে বোনা হয় শতরঞ্জি। যন্ত্রের ব্যবহার ছাড়াই বাঁশ, কাঠ ও রশির মাধ্যমে তৈরি হয় এই হস্তশিল্প। মূল উপকরণ পাট হলেও বর্তমানে গার্মেন্টসের ঝুট থেকে তৈরি সুতা ব্যবহার করা হচ্ছে। শিল্পের প্রসারে নগরীর রবার্টসনগঞ্জ, সদর, বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে গড়ে উঠেছে নতুন কারখানা।
নিশবেতগঞ্জের শতরঞ্জিপল্লিতে ব্যস্ত নারী কারিগরদের চোখেমুখে তৃপ্তির হাসি। শেফালি বেগম বলেন, “২০ বছর ধরে কাজ করছি, ছেলেমেয়েকে পড়িয়েছি, জমিও কিনেছি। এই শিল্পের কারণে সংসার ভালোই চলছে।” আট বছরের অভিজ্ঞ রাশেদা বেগম বলেন, “আয়ের একটা অংশ সঞ্চয় করি, বাকিটা সংসারের জন্য রাখি।” প্রতিদিন একজন শ্রমিক ১০-১৫ বর্গফুট শতরঞ্জি বুনতে পারেন এবং প্রতি বর্গফুটে পান ১৫ টাকা মজুরি।
শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আধুনিক পরিকল্পনা। শতরঞ্জিপল্লির উদ্যোক্তা মনিরা বেগম জানান, দক্ষ কারিগরের সংকট প্রকট। বিসিকের প্রশিক্ষণ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। চারুশী প্রতিষ্ঠানের তহুরা বেগম বলেন, “শতরঞ্জি রপ্তানি থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হলেও সরকারি নজর কম। এসএমই ও বিসিকের সঠিক উদ্যোগ দরকার।”
অর্থনীতিবিদ সাইফুদ্দীন খালেদ মনে করেন, “জিআই স্বীকৃত শিল্পের উন্নয়নে প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণ ও কাঁচামালের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
শতরঞ্জির বৈচিত্র্য ও পরিবেশবান্ধব বৈশিষ্ট্য বৈশ্বিক বাজারে জনপ্রিয়তা বাড়াচ্ছে। যথাযথ পরিকল্পনা ও সরকারি সহযোগিতা পেলে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প আরও বিস্তৃত হবে, বাড়বে কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রার আয়।