রাজনৈতিক পরিবর্তন ছাড়া কোনো নীতিই ব্যাংক খাতকে শক্তিশালী করতে পারবে না: গভর্নর

- আপডেট সময় ০৮:২৫:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
- / 0
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, দেশের ব্যাংক খাতের তদারকিতে সময়োপযোগী ও মৌলিক পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি (রিস্ক বেসড সুপারভিশন) পদ্ধতি ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হবে। তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং গুণগত পরিবর্তন ছাড়া কোনো নীতিই ব্যাংক খাতকে যথাযথভাবে শক্তিশালী করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গভর্নর জানান, ২০টি ব্যাংকে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ হয়েছে এবং আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৬১টি ব্যাংকেই এই পদ্ধতি চালু হবে। তদারকির জন্য ১২টি ভাগে ১২টি কমিটি থাকবে, যারা ৩৬০ ডিগ্রি পর্যবেক্ষণ করবে।
তিনি বলেন, “আমরা চাই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজে কোনো হস্তক্ষেপ না হোক এবং প্রতিষ্ঠানটিকে নিজের নীতি অনুযায়ী পরিচালিত হতে দেওয়া হোক।”
ব্যাংক মার্জার প্রসঙ্গে গভর্নর জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ছয়টি ব্যাংকের বিষয়ে নতুন করে আলোচনা হবে এবং যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারলে তাদের মার্জ বন্ধ রাখা হতে পারে। তবে তাদের অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল হওয়ায় মার্জার প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে, দুর্বল পারফরম্যান্সের কারণে কিছু ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন হয়েছে এবং প্রয়োজনে আরও বোর্ড পরিবর্তন করা হবে বলে জানান তিনি। একইসঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও কার্যক্রমের যৌক্তিকতা প্রমাণে বলা হয়েছে, নাহলে কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ঝুঁকিনির্ভর তদারকি কাঠামোর আওতায় প্রতিটি ব্যাংকের আর্থিক, বাজার, আইনগত ও পরিচালনাগত ঝুঁকি চিহ্নিত করা হবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকগুলো দ্রুত শনাক্ত করে হস্তক্ষেপ করা সহজ হবে।
এ লক্ষ্যে নতুনভাবে গঠন করা হচ্ছে একাধিক তদারকি বিভাগ, যেমন নীতিমালা ও সমন্বয়, তথ্য বিশ্লেষণ, প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ব্যাংকিং তদারকি এবং অর্থপাচার প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিভাগ। প্রতিটি ব্যাংকের জন্য থাকবে আলাদা তদারকি দল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও জানিয়েছে, দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যাতে ঝুঁকিনির্ভর তদারকি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।
তথ্যভিত্তিক তদারকির জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্ম, যা ব্যাংক খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
গভর্নর আশা প্রকাশ করেন, এই উদ্যোগের ফলে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা ও টেকসই প্রবৃদ্ধি আরও মজবুত হবে এবং প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবে।