খুলনার দাকোপে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ৯

- আপডেট সময় ০২:১৩:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
- / 8
খুলনার দাকোপে খাল ইজারা ও ছাত্রদল কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত এক পুলিশ কর্মকর্তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ উভয় পক্ষের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সোমবার বিকেলে চালনা পৌর এলাকার চালনা বাজারে এ সংঘর্ষ ঘটে। পুলিশ জানায়, সংঘর্ষ থামাতে গেলে দাকোপ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আজাহার উদ্দিন মাথায় ইটের আঘাত পান, এতে তাঁর মাথার হাড় ভেঙে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় আজ মঙ্গলবার ভোরে তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়। আহত অন্য দুই পুলিশ সদস্য হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) মনোয়ার তালুকদার ও কনস্টেবল শুভ চৌধুরী বিশ্বাস।
এ ছাড়া বিএনপির দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ইব্রাহীম বিশ্বাস, সোহেল সরদার, বাচ্চু ফকির, মিজানুর রহমান, মাহাবুর শেখ ও রতন রায় আহত হন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দাকোপ উপজেলা বিএনপি বর্তমানে দুটি গ্রুপে বিভক্ত। এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন চালনা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মোজাফফর হোসেন, উপজেলা আহ্বায়ক অসিত কুমার সাহা ও সদস্যসচিব আবদুল মান্নান খান। অন্যপক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শাকিল আহমেদ, চালনা পৌর বিএনপির সদস্যসচিব আল আমিন সানা ও যুগ্ম আহ্বায়ক আইয়ুব আলী কাজী।
সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় সোমবার দুপুরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে। বাজুয়া ইউনিয়নের বিল ডাকাতিয়া ও খলিশা খালের ইজারা সংক্রান্ত বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে তা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় রূপ নেয়। পরিস্থিতি সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রণে এলেও বিকেলে আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এ প্রসঙ্গে দাকোপের সহকারী কমিশনার (ভূমি) জুবায়ের জাহাঙ্গীর জানান, দাকোপের সব খাস খালের উন্মুক্ত ডাক অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। ডাকাতিয়া খালের ইজারাকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় আপাতত ইজারা কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, সোমবার দিনভর বাজুয়া এসএন কলেজে ছাত্রদলের পাঁচটি কলেজ কমিটি গঠনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচন নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হয়। নির্বাচন শেষে নেতা-কর্মীরা চালনায় ফিরলে ফের সংঘর্ষ বাধে এবং তা রক্তক্ষয়ী রূপ নেয়।
এ বিষয়ে মোজাফফর হোসেন অভিযোগ করে বলেন, “শাকিল আহমেদ আওয়ামী লীগের লোকদের আমাদের দলে ঢুকিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করছেন। তাঁর ভাইও আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান।”
অন্যদিকে শাকিল আহমেদ বলেন, “দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষ শুরু হয়। আমরা তা ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলাম। পরে মোজাফফর হোসেন তাঁর সমর্থকদের নিয়ে ছাত্রদল নেতাদের ফেরার পথে ব্যারিকেড দেন। এরপর সংঘর্ষ শুরু হয়। সবকিছুর ভিডিও ফুটেজ আছে।”
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু জানান, “ঘটনা নিয়ে আমরা আলোচনায় বসেছি। দলীয় সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।”
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সি সার্কেল) মফিজুর রহমান বলেন, থানায় মামলা হয়েছে। আজাহার উদ্দিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।