যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা ও তেল আমদানি বাড়াতে চায় বাংলাদেশ

- আপডেট সময় ০৭:৪৯:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
- / 29
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা ও জ্বালানি তেল আমদানি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের জবাবে ঢাকা এই কৌশল নিয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) জাপানের রাজধানী টোকিওতে আয়োজিত নিক্কেই এশিয়া ফোরাম-এর ফাঁকে জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়া-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান।
ড. ইউনূস বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেহেতু বিশ্বের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চান, তাই আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা ও তেল আমদানির প্রস্তাব দিয়েছি। এর ফলে আমেরিকান পণ্যের আমদানি বাড়বে এবং আমাদের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষা পাবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এখন প্রচুর তুলা কিনি ভারত, উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের মতো দেশ থেকে। ভবিষ্যতে এই আমদানি যুক্তরাষ্ট্র থেকে করলেই ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের কারণ হ্রাস পাবে।”
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৬.৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং আমদানি করেছে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এর মধ্যে তুলা ছিল ৩৬১ মিলিয়ন ডলারের, যা বাংলাদেশের মোট তুলা আমদানির একটি ছোট অংশ। অথচ বাংলাদেশ এ বছর ৭.৯ বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করেছে, যা দেশের মোট আমদানির ১২.৫ শতাংশ।
প্রফেসর ইউনূস জানান, জ্বালানি খাতে বাংলাদেশের নির্ভরতা এখনো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ওপর। তবে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র থেকেও তেল আমদানি করে আমদানির উৎস বহুমুখীকরণ এবং আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করার চিন্তা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের ওপর আপাতত স্থগিতাদেশ দিলেও, বাংলাদেশ এই হুমকিকে একটি কৌশলগত সুযোগ হিসেবে দেখছে। “আমরা চাই না এই ইস্যুতে বৈরিতা তৈরি হোক। বরং বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে চাই,” বলেন ইউনূস।
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, “সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এর মধ্যে ১১–১২ বিলিয়ন ডলার ইতোমধ্যেই শনাক্ত করে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।” তিনি জানান, এই অর্থ দিয়ে দুইটি পৃথক তহবিল গঠন করা হবে— একটি শিক্ষা এবং অপরটি স্বাস্থ্য খাতে ব্যবহারের জন্য। এছাড়া দরিদ্র মানুষদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতেও এই অর্থ ব্যবহার করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে পদত্যাগের গুঞ্জন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। তিনি বলেন, “আমি বাংলাদেশে এ নিয়ে কিছু বলিনি। জাপানে এ বিষয়ে মন্তব্য করলে তা আমার জন্য ঝামেলার সৃষ্টি করতে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক বিরোধ নিরসনে বাংলাদেশের এই কৌশল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে একটি বাস্তবমুখী সমঝোতার ইঙ্গিত দেয়। তবে কতটা ছাড় পাওয়া যাবে তা নির্ভর করবে ওয়াশিংটনের প্রতিক্রিয়ার ওপর।