ঢাকা ১০:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
কচুরিপানার নিচে শিশুর মরদেহ জয়পুরহাটে বজ্রপাতে কলেজছাত্রের মৃত্যু সারাদেশে ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩২১ জন সিলেট-সুনামগঞ্জ সীমান্ত ৫৫ বাংলাদেশিকে পুশ-ইন করলো বিএসএফ গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে: অন্তর্বর্তী সরকার ট্রাম্প প্রশাসন পুড়িয়ে ফেলছে ৫০০ টন জরুরি খাদ্য গোপালগঞ্জ যেন মুজিববাদীদের ঘাঁটি না হয়ে ওঠে: ঘোষণা নাহিদ ইসলামের গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে মশাল মিছিল ও দেশব্যাপী ব্লকেড কর্মসূচির ডাক এনসিপির উত্তেজনায় রণক্ষেত্রে পরিণত গোপালগঞ্জ, ১৪৪ ধারা জারি মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যা রাজনৈতিক নয়, ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে: ডিএমপি

আন্তর্জাতিক মহলে অকাস সাবমেরিন চুক্তি’ নিয়ে জোরালো আলোচনা শুরু

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০২:১১:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫
  • / 39

ছবি সংগৃহীত

 

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার বহুল আলোচিত অকাস সাবমেরিন চুক্তিটি নতুন করে পর্যালোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রতিরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, সাবেক প্রশাসনের নেওয়া এই চুক্তিটি বর্তমান প্রেসিডেন্টের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

২০২১ সালে চীনকে প্রতিহত করার কৌশলের অংশ হিসেবে স্বাক্ষরিত এই ত্রিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তির আওতায়, অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে পারমাণবিকচালিত সাবমেরিন পাবে। এছাড়া তিন দেশ মিলে একটি অত্যাধুনিক সাবমেরিন বহর গঠন করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রশাসন পরিবর্তনের ফলে এ ধরনের উচ্চমার্গের চুক্তি মূল্যায়ন করা স্বাভাবিক। তবে অগ্রাধিকার কি সাবমেরিন সরবরাহ থাকবে, নাকি দীর্ঘপাল্লার অস্ত্র প্রযুক্তি ভাগাভাগির দিকে যাবে—তা নিয়ে এখন আলোচনা চলছে।

চুক্তির পুনর্মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এলব্রিজ কোলবি নামের এক সাবেক কর্মকর্তাকে, যিনি অতীতে অকাসের সমালোচনা করে বলেছিলেন, “যখন আমাদের এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তখন কেন তা অন্যদের হাতে তুলে দিচ্ছি?”

এই সিদ্ধান্তে অস্বস্তিতে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা। যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে প্রতিরক্ষা বাজেট ২০২৮ সালের মধ্যে জিডিপির ২.৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে সম্মত হয়েছে এবং আগামী সংসদ মেয়াদে তা ৩ শতাংশে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়া এখনো ৩.৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অনাগ্রহী।

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস দেশটির গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি এখনো বিশ্বাস করেন যে চুক্তিটি বাস্তবায়িত হবে। তিনি বলেন, “দূরপাল্লার সাবমেরিন ক্ষমতা অস্ট্রেলিয়ার জন্য অপরিহার্য।”

চুক্তির আওতায়, ২০২৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কিছু পারমাণবিকচালিত সাবমেরিন অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরে মোতায়েন করা হবে। ২০৩০ সালের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনটি পুরনো ভার্জিনিয়া-শ্রেণির সাবমেরিন কিনবে এবং পরবর্তীতে আরও দুটি কেনার সুযোগ পাবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার জন্য নতুন একটি পারমাণবিক সাবমেরিন ডিজাইন করা হবে, যেখানে প্রযুক্তি তিন দেশ থেকেই আসবে।

তবে চীন শুরু থেকেই অকাস চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে। বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই চুক্তি অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং অঞ্চলের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলবে।

যুক্তরাষ্ট্রের থিঙ্কট্যাংক ‘ডিফেন্স প্রায়োরিটিজ’-এর বিশ্লেষক জেনিফার কাভানাঘ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব সাবমেরিন নির্মাণ সামর্থ্য সীমিত, তাই এই চুক্তি পর্যালোচনা করা যৌক্তিক। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া এসব সাবমেরিন কাঙ্ক্ষিতভাবে ব্যবহার করবে কি না, বিশেষ করে তাইওয়ান ইস্যুতে সংঘর্ষ শুরু হলে—সেই উদ্বেগও রয়েছে।

তিনি মনে করেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে পিছিয়ে আসে, তাহলে তা চীনের জন্য বড় কূটনৈতিক সাফল্য হবে।

ওকাস চুক্তি নিয়ে বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির এই প্রকল্প এখন নতুন করে অনিশ্চয়তার মুখে।

সূত্র: বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক মহলে অকাস সাবমেরিন চুক্তি’ নিয়ে জোরালো আলোচনা শুরু

আপডেট সময় ০২:১১:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫

 

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার বহুল আলোচিত অকাস সাবমেরিন চুক্তিটি নতুন করে পর্যালোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রতিরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, সাবেক প্রশাসনের নেওয়া এই চুক্তিটি বর্তমান প্রেসিডেন্টের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

২০২১ সালে চীনকে প্রতিহত করার কৌশলের অংশ হিসেবে স্বাক্ষরিত এই ত্রিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তির আওতায়, অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে পারমাণবিকচালিত সাবমেরিন পাবে। এছাড়া তিন দেশ মিলে একটি অত্যাধুনিক সাবমেরিন বহর গঠন করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রশাসন পরিবর্তনের ফলে এ ধরনের উচ্চমার্গের চুক্তি মূল্যায়ন করা স্বাভাবিক। তবে অগ্রাধিকার কি সাবমেরিন সরবরাহ থাকবে, নাকি দীর্ঘপাল্লার অস্ত্র প্রযুক্তি ভাগাভাগির দিকে যাবে—তা নিয়ে এখন আলোচনা চলছে।

চুক্তির পুনর্মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এলব্রিজ কোলবি নামের এক সাবেক কর্মকর্তাকে, যিনি অতীতে অকাসের সমালোচনা করে বলেছিলেন, “যখন আমাদের এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তখন কেন তা অন্যদের হাতে তুলে দিচ্ছি?”

এই সিদ্ধান্তে অস্বস্তিতে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা। যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে প্রতিরক্ষা বাজেট ২০২৮ সালের মধ্যে জিডিপির ২.৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে সম্মত হয়েছে এবং আগামী সংসদ মেয়াদে তা ৩ শতাংশে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়া এখনো ৩.৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অনাগ্রহী।

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস দেশটির গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি এখনো বিশ্বাস করেন যে চুক্তিটি বাস্তবায়িত হবে। তিনি বলেন, “দূরপাল্লার সাবমেরিন ক্ষমতা অস্ট্রেলিয়ার জন্য অপরিহার্য।”

চুক্তির আওতায়, ২০২৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কিছু পারমাণবিকচালিত সাবমেরিন অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরে মোতায়েন করা হবে। ২০৩০ সালের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনটি পুরনো ভার্জিনিয়া-শ্রেণির সাবমেরিন কিনবে এবং পরবর্তীতে আরও দুটি কেনার সুযোগ পাবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার জন্য নতুন একটি পারমাণবিক সাবমেরিন ডিজাইন করা হবে, যেখানে প্রযুক্তি তিন দেশ থেকেই আসবে।

তবে চীন শুরু থেকেই অকাস চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে। বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই চুক্তি অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং অঞ্চলের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলবে।

যুক্তরাষ্ট্রের থিঙ্কট্যাংক ‘ডিফেন্স প্রায়োরিটিজ’-এর বিশ্লেষক জেনিফার কাভানাঘ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব সাবমেরিন নির্মাণ সামর্থ্য সীমিত, তাই এই চুক্তি পর্যালোচনা করা যৌক্তিক। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া এসব সাবমেরিন কাঙ্ক্ষিতভাবে ব্যবহার করবে কি না, বিশেষ করে তাইওয়ান ইস্যুতে সংঘর্ষ শুরু হলে—সেই উদ্বেগও রয়েছে।

তিনি মনে করেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে পিছিয়ে আসে, তাহলে তা চীনের জন্য বড় কূটনৈতিক সাফল্য হবে।

ওকাস চুক্তি নিয়ে বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির এই প্রকল্প এখন নতুন করে অনিশ্চয়তার মুখে।

সূত্র: বিবিসি