এই শীতে গর্ভবতী মা ও শিশুর যত্নে করণীয় ও ঘরোয়া টিপস
শীতকাল আমাদের অনেকের কাছে আরামদায়ক হলেও গর্ভবতী মা এবং নবজাতক শিশুর জন্য এটি হতে পারে বিশেষ মনোযোগের সময়। শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়া, শুষ্ক বাতাস এবং রোগ-জীবাণুর সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা মায়ের স্বাস্থ্য এবং শিশুর স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় মায়েদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়, ফলে এই সময় সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে নবজাতক শিশুদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কম থাকে এবং তাদের ত্বক খুবই সংবেদনশীল হয়। তাই এই মৌসুমে মা ও শিশুর উভয়ের যত্নে কিছু সহজ ও কার্যকর ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করলে শীতকাল হতে পারে আরও আরামদায়ক। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস আলোচনা করা হলো, যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজে লাগবে।
গর্ভবতী মায়ের যত্নে করণীয়:
শীতকালে গর্ভবতী মায়েদের শরীরের উষ্ণতা ধরে রাখা, সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা এবং ত্বকের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঠান্ডা আবহাওয়া ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে সঠিক জীবনধারা মেনে চলাই মায়ের সুস্থতার মূল চাবিকাঠি। আসুন, জেনে নেই কিছু ঘরোয়া টিপসঃ
১. শরীর গরম রাখা:
গর্ভবতী মায়ের শরীর শীতে সহজেই ঠান্ডা হয়ে যায়। তাই উষ্ণ পোশাক যেমন সোয়েটার, জ্যাকেট ও শাল পরিধান করা উচিত। মাথা এবং পায়ের সুরক্ষার জন্য উলের টুপি ও মোজা ব্যবহার করুন।
২. পর্যাপ্ত পানি পান করা:
শীতকালে অনেকেরই পানি কম পান করার প্রবণতা থাকে, যা ডিহাইড্রেশন ঘটাতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় শরীর হাইড্রেট রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গরম পানীয় যেমন লেবু চা বা আদা চা পান করতে পারেন।
৩. পুষ্টিকর খাবার খাওয়া:
এই সময় গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টিকর এবং উষ্ণ খাবার খাওয়া উচিত। শাকসবজি, গরম স্যুপ, ডাল, মাছ এবং শুকনো ফল ইত্যাদি খাবার গ্রহণ করা উচিত। এছাড়া শরীরে শক্তি জোগাতে বাদাম, খেজুর এবং ঘি খাওয়া বেশ উপকারী।
৪. ত্বকের যত্ন:
শীতকালে ত্বক সহজেই শুষ্ক হয়ে যায়। ত্বকের শুষ্কতা এড়াতে অলিভ অয়েল, নারকেল তেল বা গ্লিসারিন ব্যবহার করুন। দিনে দু’বার ময়েশ্চারাইজার লাগাতে পারেন। তবে কোন এলার্জি সমস্যা থাকলে নারিকেল তেল ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
৫. বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত ঘুম:
গর্ভবতী অবস্থায় মায়েদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উষ্ণ বিছানায় আরামদায়ক পরিবেশে ঘুমানোর ব্যবস্থা করুন।
নবজাতক শিশুর যত্নে করণীয়:
শীতকালে নবজাতক শিশুর যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। সঠিক যত্ন তাদের সুস্থতা এবং আরাম নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। নবজাতক শিশুর যত্নে করনীও কিছু ঘরোয়া পরামর্শঃ
১. উষ্ণ পোশাক:
নবজাতক শিশুকে উষ্ণ রাখতে সোয়েটার, শীতের টুপি এবং মোজা পরিয়ে দিন। তবে বেশি গরম কাপড়ে শিশুকে জড়িয়ে ফেলা উচিত নয়, কারণ এটি শিশুর অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
২. ত্বকের সুরক্ষা:
শিশুর ত্বক খুবই কোমল। তাই শীতকালে ত্বক ফাটার হাত থেকে রক্ষা করতে বেবি ময়েশ্চারাইজার এবং অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন। কুসুম গরম পানিতে শিশুকে গোসল করান, তবে পানি খুব বেশি গরম না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৩. পর্যাপ্ত দুধ খাওয়ানো:
শিশুর সঠিক পুষ্টি ও সুরক্ষার জন্য মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শীতে শিশুর ঠান্ডা যেন না লাগে, সেদিকে খেয়াল রেখে দুধ খাওয়ানোর সময় উষ্ণ পরিবেশ তৈরি করুন।
৪. ঘরে বায়ু চলাচল নিশ্চিত করা:
শীতকালে ঘরের জানালা-দরজা বন্ধ রাখার প্রবণতা থাকে। তবে এটি শিশুর শ্বাস নিতে অসুবিধা করতে পারে। তাই হালকা বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন।
৫. ঠান্ডা ও সর্দি থেকে সুরক্ষা:
শিশুকে ঠান্ডা বা সর্দি থেকে রক্ষা করার জন্য সঠিক সময়ে গরম কাপড় পরান এবং ঘরের পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন। অপরিষ্কার স্থান থেকে শিশুকে দূরে রাখুন।
সাধারণ টিপস:
ভাপ নেওয়া: ঠান্ডার সমস্যা হলে ভাপ নেওয়া উপকারী। তবে গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য এটি অত্যন্ত সাবধানে করতে হবে।
বাড়ির তাপমাত্রা সঠিক রাখা: গৃহে হিটার বা ব্লোয়ার মেশিন ব্যবহার করতে পারেন, তবে তাপমাত্রা যেন খুব বেশি বেড়ে না যায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
হালকা ব্যায়াম: গর্ভবতী মায়ের জন্য হালকা ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম শরীরকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে এবং শীতের জড়তা দূর করে। তাই হালকা নিয়মিত যোগব্যায়ামের অভ্যাস করুন।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: শীতে ঘর বাড়িতে ধুলোবালি বাড়তে পারে, যা শিশু ও মায়ের জন্য ক্ষতিকর। তাই ঘরের পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে সচেতন থাকুন।
শীতকাল সুস্থতার সাথে উপভোগ করতে গর্ভবতী মা এবং নবজাতক শিশুর জন্য এই ছোট ছোট ঘরোয়া টিপসগুলো মেনে চলুন। সঠিক যত্ন ও সুরক্ষায় এই সময়ও হবে আনন্দময় এবং স্বাস্থ্যকর।