মেসি-রোনালদো-এমবাপ্পের গণ্ডী ভেঙে হালান্ডের উত্থান:

- আপডেট সময় ১২:৩১:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
- / 7
আর্লিং হালান্ডকে আধুনিক ফুটবলের “গোলমেশিন” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তার শক্তিশালী শারীরিক গঠন, অবিশ্বাস্য গতি, এবং ঠান্ডা মাথার ফিনিশিং ক্ষমতা তাকে প্রতিপক্ষের জন্য এক দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তিনি গোলের পর গোল করে চলেছেন এবং অল্প বয়সেই এমন সব রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছেন, যা ভাঙতে মেসি, রোনালদো বা এমবাপ্পের অনেক বেশি সময় লেগেছিল।
হালান্ডের অন্যতম বড় কীর্তি হলো দ্রুততম ৩০০ ক্লাব গোলের মাইলফলক অর্জন। ক্লাব এবং আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার মিলিয়ে মাত্র ৩৭০ ম্যাচে তিনি ৩০০ গোলের দেখা পেয়েছেন। এই রেকর্ড গড়তে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর লেগেছিল ৫৫৪টি ম্যাচ, লিওনেল মেসির ৪১৮টি এবং কিলিয়ান এমবাপ্পের ৪০৯টি ম্যাচ। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে গোলের ক্ষেত্রে হালান্ড কতটা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছেন।
ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেওয়ার পর হালান্ড ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে রীতিমতো ঝড় তুলেছেন। ২০২২-২৩ মৌসুমে তিনি ৩৬ গোল করে প্রিমিয়ার লিগের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ভেঙে দেন। এই রেকর্ডটি প্রায় তিন দশক ধরে টিকে ছিল। একই মৌসুমে তিনি ‘বর্ষসেরা ফুটবলার’ এবং ‘বর্ষসেরা তরুণ ফুটবলার’ উভয় পুরস্কার জিতে প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এই জোড়া সম্মান অর্জন করেন। ২০২৩-২৪ মৌসুমেও তিনি ২৭ গোল করে টানা দ্বিতীয়বারের মতো প্রিমিয়ার লিগ গোল্ডেন বুট জিতেছেন।
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও হালান্ডের পারফরম্যান্স অসাধারণ। মাত্র ৩৩ ম্যাচ খেলেই তিনি ৩৭ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন, যা কিলিয়ান এমবাপ্পের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। তার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ যাত্রা প্রমাণ করে, ইউরোপের সেরা মঞ্চেও তিনি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে সক্ষম।
২০২২-২৩ মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে হালান্ড ঐতিহাসিক ট্রেবল জয়ের অংশীদার হন। তারা প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ এবং উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ – এই তিনটি শিরোপাই জিতে নেয়। এটি তার ক্যারিয়ারের অন্যতম বড় অর্জন। এছাড়াও, তিনি ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে উয়েফা সুপার কাপ এবং ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জিতেছেন।
২৪ বছর বয়সে হালান্ড যে গতিতে রেকর্ড ভেঙে চলেছেন, তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। তার সামনে এখনো দীর্ঘ ক্যারিয়ার পড়ে আছে এবং মেসি-রোনালদোর অনেক রেকর্ড ভাঙার সুযোগ তার রয়েছে। অনেকে তাকে ফুটবলের পরবর্তী সুপারস্টার হিসেবে দেখছেন। তার খেলার ধরণ, প্রতি ম্যাচে গোলের জন্য তার ক্ষুধা এবং তার পেশাদারিত্ব তাকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে তুলেছে।
যদিও মেসি এবং রোনালদোর ক্যারিয়ার অনেক দীর্ঘ এবং তারা অসংখ্য ব্যক্তিগত ও দলগত শিরোপা জিতেছেন, তবে হালান্ড তার অল্প বয়সেই যে প্রভাব ফেলেছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। তার উত্থান দেখিয়ে দিচ্ছে যে ফুটবলের নতুন প্রজন্ম নিজেদের ছাপ ফেলার জন্য প্রস্তুত এবং হালান্ড এই পরিবর্তনেরই অন্যতম প্রধান মুখ। তিনি হয়তো ভবিষ্যতে ফুটবলের ইতিহাসের পাতায় নতুন এক অধ্যায় রচনা করবেন, যেখানে তার নামটি মেসি-রোনালদোর পাশাপাশি উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে জ্বলবে।