পটুয়াখালীর নদ-নদীতে নাব্যতা সংকট, চরম ভোগান্তিতে উপকূলবাসী
পটুয়াখালী জেলার উপকূলীয় উপজেলা গলাচিপার বিস্তীর্ণ জনপদ জালের মতো ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য নদ-নদী দিয়ে ঘেরা। একসময় প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা এসব নদীপথ এখন নাব্যতা সংকটে হয়ে উঠেছে দুর্গম। নদীর বুকজুড়ে জেগে ওঠা ডুবোচরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নৌচলাচল। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে কয়েক লাখ মানুষ।
গলাচিপা থেকে চরমোন্তাজ রুটে চলাচলকারী লঞ্চ এমভি হামজা-৭ এর চুকানী আলী আক্কাস জানান, ‘চরপাঙ্গাসিয়া, মাঝের চর ও চরনজির এলাকায় ডুবোচরের মাত্রা ভয়াবহ। জোয়ার-ভাটা দেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। কয়েকদিন আগেই চরমোন্তাজের কাছে তিন ঘণ্টা আটকে ছিল লঞ্চ। দীর্ঘপথ ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাতে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই।’
গলাচিপার বাসিন্দা শাহাদাত সোহাগ বলেন, ‘উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদীর নাব্যতা সংকট বর্তমানে চরম আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে চর কাজলের জিনতলা চ্যানেল পলি পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে। গলাচিপা পৌর এলাকার একমাত্র নৌপথ রামনাবাদ চ্যানেলও প্রায় নষ্টের পথে।’
এদিকে, আগুনমুখা নদীর মোহনায় নদীর প্রশস্ততা সংকীর্ণ হয়ে পড়ায় গলাচিপা-চরমোন্তাজ ও উলানিয়া-চরমোন্তাজ রুট প্রায় অচলের পথে। পানির গভীরতা মেপে মেপে নৌযান চলাচল করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে।
পক্ষিয়া গ্রামের বাসিন্দা ফেরদাউস জানান, ‘উপজেলার চারটি বিচ্ছিন্ন ইউনিয়নের অন্তত অর্ধশত চরাঞ্চলে প্রায় তিন লাখ মানুষ বসবাস করেন। যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ, অথচ নদীপথে ডুবোচরের কারণে যাতায়াতে লেগে যায় দীর্ঘ সময়। চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। নদীভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি ও মূল্যবান সম্পদ। অনেক পরিবার হয়ে যাচ্ছে নিঃস্ব।’
এ বিষয়ে পটুয়াখালী নৌবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. জাকি শাহরিয়ার বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা স্থানীয় পর্যায়ে ড্রেজিংয়ের সুপারিশ করি। বড় ধরনের ড্রেজিং প্রয়োজন হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি পাঠানো হয়।’
স্থানীয়রা জানান, বর্ষার আগে নদীগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত ড্রেজিং না করলে সামনের দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাদের।