ঢাকা ০৭:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করলেন প্রধান উপদেষ্টা, শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে তিনদিনব্যাপী আয়োজন ছাত্রশিবিরের খাগড়াছড়িতে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ১ ৫ আগস্ট ইতিহাস কথা বলে জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগই হবে আগামীর বাংলাদেশ রুপরেখা : ড. ইউনূস ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ অনুষ্ঠানে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অংশগ্রহণ কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট খুলবে মঙ্গলবার, বন্দর কর্তৃপক্ষের সতর্কবার্তা ৩৬ জুলাই স্মরণে টেলিটকের বিশেষ অফার সাজিদ হত্যার ইস্যুতে পরিবারের মামলা আদালত চত্ত্বর থেকে পালানো আসামী বরগুনা থানা পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার

জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগই হবে আগামীর বাংলাদেশ রুপরেখা : ড. ইউনূস

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০১:২৭:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫
  • / 10

ছবি: সংগৃহীত

 

‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগ আমরা বৃথা যেতে দেব না। তাঁদের রক্তস্নাত আত্মদানই আমাদের আগামী বাংলাদেশের রূপরেখা। আজকের দিনে এই হোক আমাদের সম্মিলিত শপথ।”

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দেশের প্রতিটি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভিডিওবার্তাটি প্রচার করা হয়।

ড. ইউনূস বলেন, “৫ আগস্ট এখন আর কেবল একটি ক্যালেন্ডারের তারিখ নয়, এটি হয়ে উঠেছে একটি জাতির সংকটের মুখে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের প্রতীক। এটি গণজাগরণ, প্রতিজ্ঞা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের স্মারক।”

তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, “সেই যুদ্ধের আদর্শ ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও দেশের মানুষ বৈষম্য, নিপীড়ন ও গণতন্ত্রহীনতার শিকার হয়েছে।”

‘২০২৪ সালের উত্তাল জুলাই ছিল ১৬ বছরের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ। তরুণ প্রজন্ম, যারা বছরের পর বছর ভালো ফল করেও চাকরির জন্য ক্ষমতাসীনদের দুয়ারে ঘুরেছে, যারা দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে—তাদের কণ্ঠকে রুদ্ধ করা হয়েছিল। সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা ও তদবিরের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেও ফ্যাসিবাদী সরকারের টনক নড়েনি।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারপ্রধানের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা মাফিয়াতন্ত্র পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দেয়। পুলিশ, প্রশাসন, গণমাধ্যম, এমনকি বিচারব্যবস্থা পর্যন্ত স্বৈরাচারের পৃষ্ঠপোষকতায় চলে যায়। যারা প্রতিবাদ করেছে, তাদের ওপর চালানো হয়েছে নির্যাতন, গ্রেপ্তার, গুম। অথচ এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণ ছাত্রসমাজ।”

জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, “২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্রসমাজ, তরুণ প্রজন্ম এবং সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে ফ্যাসিবাদের পতনের আহ্বান জানিয়েছিল। অথচ প্রতিক্রিয়াশীল সরকার গুলি চালিয়ে, ইন্টারনেট বন্ধ করে এবং হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা না দিয়ে সেই আন্দোলন দমন করতে চেয়েছিল। বহু মানুষ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, পঙ্গু হয়ে গেছেন, অনেকে চিরতরে হারিয়ে গেছেন।”

শহীদদের স্মরণে তিনি বলেন, “আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি জুলাই শহীদদের প্রতি। তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। যারা আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন বা চোখের আলো হারিয়েছেন—জাতির পক্ষ থেকে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “গত ডিসেম্বরে শহীদ পরিবার ও আহতদের দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত করা হয়। এখন পর্যন্ত ৮৩৬ শহীদ পরিবারের মধ্যে ৭৭৫ পরিবারকে প্রায় ৯৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও মাসিক ভাতা প্রদান করা হয়েছে। আহত ১৩,৮০০ জন আন্দোলনকারীর মধ্যে তিনটি ক্যাটাগরিতে মোট ১৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। অতি গুরুতর আহত ৭৮ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে এবং এ খাতে ব্যয় হয়েছে ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।”

তিনি জানান, সরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও নির্ধারিত বিশেষায়িত হাসপাতালে জুলাই আহতদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগই হবে আগামীর বাংলাদেশ রুপরেখা : ড. ইউনূস

আপডেট সময় ০১:২৭:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫

 

‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগ আমরা বৃথা যেতে দেব না। তাঁদের রক্তস্নাত আত্মদানই আমাদের আগামী বাংলাদেশের রূপরেখা। আজকের দিনে এই হোক আমাদের সম্মিলিত শপথ।”

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দেশের প্রতিটি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভিডিওবার্তাটি প্রচার করা হয়।

ড. ইউনূস বলেন, “৫ আগস্ট এখন আর কেবল একটি ক্যালেন্ডারের তারিখ নয়, এটি হয়ে উঠেছে একটি জাতির সংকটের মুখে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের প্রতীক। এটি গণজাগরণ, প্রতিজ্ঞা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের স্মারক।”

তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, “সেই যুদ্ধের আদর্শ ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও দেশের মানুষ বৈষম্য, নিপীড়ন ও গণতন্ত্রহীনতার শিকার হয়েছে।”

‘২০২৪ সালের উত্তাল জুলাই ছিল ১৬ বছরের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ। তরুণ প্রজন্ম, যারা বছরের পর বছর ভালো ফল করেও চাকরির জন্য ক্ষমতাসীনদের দুয়ারে ঘুরেছে, যারা দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে—তাদের কণ্ঠকে রুদ্ধ করা হয়েছিল। সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা ও তদবিরের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেও ফ্যাসিবাদী সরকারের টনক নড়েনি।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারপ্রধানের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা মাফিয়াতন্ত্র পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দেয়। পুলিশ, প্রশাসন, গণমাধ্যম, এমনকি বিচারব্যবস্থা পর্যন্ত স্বৈরাচারের পৃষ্ঠপোষকতায় চলে যায়। যারা প্রতিবাদ করেছে, তাদের ওপর চালানো হয়েছে নির্যাতন, গ্রেপ্তার, গুম। অথচ এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণ ছাত্রসমাজ।”

জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, “২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্রসমাজ, তরুণ প্রজন্ম এবং সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে ফ্যাসিবাদের পতনের আহ্বান জানিয়েছিল। অথচ প্রতিক্রিয়াশীল সরকার গুলি চালিয়ে, ইন্টারনেট বন্ধ করে এবং হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা না দিয়ে সেই আন্দোলন দমন করতে চেয়েছিল। বহু মানুষ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, পঙ্গু হয়ে গেছেন, অনেকে চিরতরে হারিয়ে গেছেন।”

শহীদদের স্মরণে তিনি বলেন, “আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি জুলাই শহীদদের প্রতি। তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। যারা আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন বা চোখের আলো হারিয়েছেন—জাতির পক্ষ থেকে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “গত ডিসেম্বরে শহীদ পরিবার ও আহতদের দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত করা হয়। এখন পর্যন্ত ৮৩৬ শহীদ পরিবারের মধ্যে ৭৭৫ পরিবারকে প্রায় ৯৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও মাসিক ভাতা প্রদান করা হয়েছে। আহত ১৩,৮০০ জন আন্দোলনকারীর মধ্যে তিনটি ক্যাটাগরিতে মোট ১৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। অতি গুরুতর আহত ৭৮ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে এবং এ খাতে ব্যয় হয়েছে ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।”

তিনি জানান, সরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও নির্ধারিত বিশেষায়িত হাসপাতালে জুলাই আহতদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।