ঢাকা ০৬:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শহুরে রোগ ডেঙ্গু নিস্প্রাণ করছে গ্রামের মানুষকে

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৬:২৩:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
  • / 5

ছবি সংগৃহীত

 

বলা হয়ে থাকে শহরের রোগ। বড়লোকদের বাড়ির এসির পরিস্কার পানিতে জন্ম নেয়া এডিস মশা এখন ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামে। ডেঙ্গু আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষ এখন গ্রামের। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের প্রায় ৮০ শতাংশই ঢাকার বাইরেে গ্রামে। অথচ প্রতিরোধ পরিকল্পনা, জরিপ ও নজরদারি— সবই সীমাবদ্ধ রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য নগর ঘিরে। গ্রামে মানুষ মারা যাচ্ছে শুধু জ্বর হয়ে। কিছু বোঝার আগেই তাজা প্রাণ হয়ে যাচ্ছে নিস্প্রাণ। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে গ্রামীণ এলাকায় ডেঙ্গুর বিস্তার পাঁচগুণ বেড়েছে। তবে, এটি এবার গ্রামে বেশি আতঙ্ক ছড়ালেও প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম এখনও মূলত নগরকেন্দ্রিক, বিশেষ করে ঢাকা শহর ঘিরে। ফলে একদিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ এলেও অন্যদিকে আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল বেড়ে চলেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে ডেঙ্গু রোগীর ভৌগোলিক বিস্তারে পরিবর্তন ঘটেছে। ২০২১ সালেও ডেঙ্গু ছিল মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক— সেবার রোগীর ৮৩.০৭ শতাংশই রাজধানীতে ছিল। সেই চিত্র এখন সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। ২০২২ সালে ঢাকার রোগীর হার কমে দাঁড়ায় ৬২.৮৭ শতাংশ। অন্যদিকে, ঢাকার বাইরের রোগী বেড়ে হয় ৩৭.১৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো রাজধানীর বাইরে রোগীর সংখ্যা ঢাকাকে ছাড়িয়ে যায়। সেবার ঢাকায় ছিল ৩৩.৮৫ শতাংশ, আর ঢাকার বাইরে ছিল ৬৬.১৫ শতাংশ।

২০২৪ সালে এ পার্থক্য আরও বেড়ে দাঁড়ায় ঢাকায় ৩৯.৩০ শতাংশ এবং ঢাকার বাইরে ৬০.৭০ শতাংশ। চলতি বছরের (২০২৫ সাল) ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত (৩০ জুন) দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১০ হাজার ২৯৬ জন। এর মধ্যে আট হাজার ৬২ জন (৭৮.৩ শতাংশ) রোগীই রাজধানী ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগের। রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় শনাক্ত হন দুই হাজার ২৩০ জন (২১.৭ শতাংশ) রোগী।

পরিসংখ্যান বলছে, পাঁচ বছরে ডেঙ্গু রোগী ঢাকার বাইরে পাঁচগুণ বেড়েছে। অথচ ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকারি পরিকল্পনা ও মনোযোগ এখনও ঢাকাকেন্দ্রিক রয়ে গেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি গ্রামীণ বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নেওয়া না হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, চলতি বছর ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের সর্বাধিক সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছেন বরিশাল বিভাগে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগের সিটি কর্পোরেশনের বাইরের এলাকাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চার হাজার ৫৯১ জন রোগী, যা দেশের সব বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের সিটি কর্পোরেশনের বাইরের এলাকা থেকে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৫২৬ জন। ঢাকা বিভাগের বাইরের অংশেও এক হাজার ৮ জন রোগী পাওয়া গেছে।

রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনেও রোগীর সংখ্যা কম নয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এক হাজার ৪০৩ জন, আর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৮৩১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। খুলনা বিভাগের বাইরে ৩৪৩ জন, রাজশাহীতে ৪০১ জন, ময়মনসিংহে ১৩৬ জন, সিলেটে ৩০ জন এবং রংপুর বিভাগে মাত্র ২৬ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে।

গত এক সপ্তাহের পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখা যায়, গত ২৪ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে যথাক্রমে ১৫৭, ১১৮, ৭৪, ১০৭, ১৪১, ১৩৬ ও ১৪৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে গত এক সপ্তাহে যথাক্রমে ৫৮, ৪৩, ৮, ১১, ৪০, ৫৫ ও ৫৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহীতে গত এক সপ্তাহে যথাক্রমে ৪৪, ২৯, ১৮, ৬, ৩৩ ও ৫৪ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া খুলনা বিভাগে ৮, ১৬, ৬, ৪১ ও ২১ জনের; ময়মনসিংহ বিভাগে ৫, ২, ৬ ও জনের; সিলেট বিভাগে ১, ৩, ২ ও ৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।
এছাড়া গত এক সপ্তাহে ঢাকা বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) যথাক্রমে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ৩৫, ৪৩, ৩০, ১২, ১৮, ৪৮ ও ৬১ জনের। সেইসঙ্গে এই সময়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ৫০, ৪৫, ৩২, ৬, ৪০, ২৮ ও ৪৫ জনের এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে যথাক্রমে ৪২, ২৬, ২৪, ১৫, ৮, ৩২ ও ৪২ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।

চলতি বছর ঢাকার বাইরে তিন সিটি কর্পোরেশন এলাকা এবং ছয় জেলায় ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার উপস্থিতি জানতে জরিপ করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। জরিপে একটি মাত্র জেলা বরগুনার গ্রামাঞ্চলেও এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। অন্য জেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায়ও জরিপ হয়।

বরগুনা জেলার জরিপে পৌর এলাকায় ৩১ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলের ৭৬ শতাংশ বাড়িতে এডিসের লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যায়। এর বাইরে মাগুরার পৌর এলাকায় ৩৫.৫৬ শতাংশ, ঝিনাইদহে ৩২.৯৬ শতাংশ, পটুয়াখালীতে ১৮.১৫ শতাংশ, পিরোজপুরে ১৪.৪৪ শতাংশ এবং কুষ্টিয়ার পৌর এলাকার ৭.২৯ শতাংশ বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়।

লার্ভা পাওয়ার শতকরা হার বা হাউজ ইনডেক্স ১০-এর বেশি হলে মশার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বিবেচনা করা হয়। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘ধারণা করা হয়, আগামী ৩০-৪০ বছর ডেঙ্গু হতে থাকবে। কারণ, ঢাকার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সীমিত আকারে কিছু উদ্যোগ রয়েছে। ঢাকার বাইরে মশার নিয়ন্ত্রণ বা অন্য কোনো ধরনের উদ্যোগ নেই বললেই চলে। এর মধ্যে আবার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিনিধি না থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।’

ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয় ২০০০ সাল থেকে। এরপর গত ২৫ বছরে আমরা ঢাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। আরও যে কত বছর লাগবে সেটাও জানা নেই। ঢাকার বাইরে পাঁচগুণ মানুষ বসবাস করেন। সুতরাং, মশা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে রোগটি আগামী ৩০ বছর থাকবে, এটা খুব সহজে অনুমান করা যায়।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

শহুরে রোগ ডেঙ্গু নিস্প্রাণ করছে গ্রামের মানুষকে

আপডেট সময় ০৬:২৩:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

 

বলা হয়ে থাকে শহরের রোগ। বড়লোকদের বাড়ির এসির পরিস্কার পানিতে জন্ম নেয়া এডিস মশা এখন ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামে। ডেঙ্গু আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষ এখন গ্রামের। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের প্রায় ৮০ শতাংশই ঢাকার বাইরেে গ্রামে। অথচ প্রতিরোধ পরিকল্পনা, জরিপ ও নজরদারি— সবই সীমাবদ্ধ রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য নগর ঘিরে। গ্রামে মানুষ মারা যাচ্ছে শুধু জ্বর হয়ে। কিছু বোঝার আগেই তাজা প্রাণ হয়ে যাচ্ছে নিস্প্রাণ। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে গ্রামীণ এলাকায় ডেঙ্গুর বিস্তার পাঁচগুণ বেড়েছে। তবে, এটি এবার গ্রামে বেশি আতঙ্ক ছড়ালেও প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম এখনও মূলত নগরকেন্দ্রিক, বিশেষ করে ঢাকা শহর ঘিরে। ফলে একদিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ এলেও অন্যদিকে আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল বেড়ে চলেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে ডেঙ্গু রোগীর ভৌগোলিক বিস্তারে পরিবর্তন ঘটেছে। ২০২১ সালেও ডেঙ্গু ছিল মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক— সেবার রোগীর ৮৩.০৭ শতাংশই রাজধানীতে ছিল। সেই চিত্র এখন সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। ২০২২ সালে ঢাকার রোগীর হার কমে দাঁড়ায় ৬২.৮৭ শতাংশ। অন্যদিকে, ঢাকার বাইরের রোগী বেড়ে হয় ৩৭.১৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো রাজধানীর বাইরে রোগীর সংখ্যা ঢাকাকে ছাড়িয়ে যায়। সেবার ঢাকায় ছিল ৩৩.৮৫ শতাংশ, আর ঢাকার বাইরে ছিল ৬৬.১৫ শতাংশ।

২০২৪ সালে এ পার্থক্য আরও বেড়ে দাঁড়ায় ঢাকায় ৩৯.৩০ শতাংশ এবং ঢাকার বাইরে ৬০.৭০ শতাংশ। চলতি বছরের (২০২৫ সাল) ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত (৩০ জুন) দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১০ হাজার ২৯৬ জন। এর মধ্যে আট হাজার ৬২ জন (৭৮.৩ শতাংশ) রোগীই রাজধানী ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগের। রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় শনাক্ত হন দুই হাজার ২৩০ জন (২১.৭ শতাংশ) রোগী।

পরিসংখ্যান বলছে, পাঁচ বছরে ডেঙ্গু রোগী ঢাকার বাইরে পাঁচগুণ বেড়েছে। অথচ ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকারি পরিকল্পনা ও মনোযোগ এখনও ঢাকাকেন্দ্রিক রয়ে গেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি গ্রামীণ বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নেওয়া না হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, চলতি বছর ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের সর্বাধিক সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছেন বরিশাল বিভাগে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগের সিটি কর্পোরেশনের বাইরের এলাকাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চার হাজার ৫৯১ জন রোগী, যা দেশের সব বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের সিটি কর্পোরেশনের বাইরের এলাকা থেকে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৫২৬ জন। ঢাকা বিভাগের বাইরের অংশেও এক হাজার ৮ জন রোগী পাওয়া গেছে।

রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনেও রোগীর সংখ্যা কম নয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এক হাজার ৪০৩ জন, আর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৮৩১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। খুলনা বিভাগের বাইরে ৩৪৩ জন, রাজশাহীতে ৪০১ জন, ময়মনসিংহে ১৩৬ জন, সিলেটে ৩০ জন এবং রংপুর বিভাগে মাত্র ২৬ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে।

গত এক সপ্তাহের পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখা যায়, গত ২৪ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে যথাক্রমে ১৫৭, ১১৮, ৭৪, ১০৭, ১৪১, ১৩৬ ও ১৪৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে গত এক সপ্তাহে যথাক্রমে ৫৮, ৪৩, ৮, ১১, ৪০, ৫৫ ও ৫৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহীতে গত এক সপ্তাহে যথাক্রমে ৪৪, ২৯, ১৮, ৬, ৩৩ ও ৫৪ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া খুলনা বিভাগে ৮, ১৬, ৬, ৪১ ও ২১ জনের; ময়মনসিংহ বিভাগে ৫, ২, ৬ ও জনের; সিলেট বিভাগে ১, ৩, ২ ও ৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।
এছাড়া গত এক সপ্তাহে ঢাকা বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) যথাক্রমে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ৩৫, ৪৩, ৩০, ১২, ১৮, ৪৮ ও ৬১ জনের। সেইসঙ্গে এই সময়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ৫০, ৪৫, ৩২, ৬, ৪০, ২৮ ও ৪৫ জনের এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে যথাক্রমে ৪২, ২৬, ২৪, ১৫, ৮, ৩২ ও ৪২ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।

চলতি বছর ঢাকার বাইরে তিন সিটি কর্পোরেশন এলাকা এবং ছয় জেলায় ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার উপস্থিতি জানতে জরিপ করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। জরিপে একটি মাত্র জেলা বরগুনার গ্রামাঞ্চলেও এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। অন্য জেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায়ও জরিপ হয়।

বরগুনা জেলার জরিপে পৌর এলাকায় ৩১ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলের ৭৬ শতাংশ বাড়িতে এডিসের লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যায়। এর বাইরে মাগুরার পৌর এলাকায় ৩৫.৫৬ শতাংশ, ঝিনাইদহে ৩২.৯৬ শতাংশ, পটুয়াখালীতে ১৮.১৫ শতাংশ, পিরোজপুরে ১৪.৪৪ শতাংশ এবং কুষ্টিয়ার পৌর এলাকার ৭.২৯ শতাংশ বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়।

লার্ভা পাওয়ার শতকরা হার বা হাউজ ইনডেক্স ১০-এর বেশি হলে মশার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বিবেচনা করা হয়। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘ধারণা করা হয়, আগামী ৩০-৪০ বছর ডেঙ্গু হতে থাকবে। কারণ, ঢাকার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সীমিত আকারে কিছু উদ্যোগ রয়েছে। ঢাকার বাইরে মশার নিয়ন্ত্রণ বা অন্য কোনো ধরনের উদ্যোগ নেই বললেই চলে। এর মধ্যে আবার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিনিধি না থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।’

ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয় ২০০০ সাল থেকে। এরপর গত ২৫ বছরে আমরা ঢাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। আরও যে কত বছর লাগবে সেটাও জানা নেই। ঢাকার বাইরে পাঁচগুণ মানুষ বসবাস করেন। সুতরাং, মশা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে রোগটি আগামী ৩০ বছর থাকবে, এটা খুব সহজে অনুমান করা যায়।