মানিকগঞ্জে কারাগারে তৈরি নকশিকাঁথা পৌঁছাবে বাণিজ্য মেলায়

- আপডেট সময় ০৬:১৭:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
- / 5
গ্রামীণ ঐতিহ্যের কুটির শিল্প “নকশিকাঁথা” এখন মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারের নারী বন্দীদের নতুন জীবনের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। জেলা প্রশাসন ও কারা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে কারাগারে শুরু হয়েছে নকশিকাঁথা তৈরির প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। এখানকার নারী কয়েদিরা বন্দি জীবনেই শিখে নিচ্ছেন আত্মনির্ভরশীলতার পাঠ।
সোমবার (৭ জুলাই) মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে প্রীতি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা (যুগ্ম সচিব) বলেন, “নারী কয়েদিদের হাতে তৈরি নকশিকাঁথা ঢাকার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা সহ বিভিন্ন বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বিক্রির জন্য নেওয়া হবে। এসব পণ্যের বিক্রিত অর্থের লভ্যাংশ কয়েদিদের নিজ নিজ একাউন্টে জমা রাখা হবে, যাতে তারা মুক্তির পর সেই অর্থ কাজে লাগাতে পারেন।”
দুপুরে জেলা প্রশাসক কারাগারের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি নারী কয়েদিদের তৈরি করা নকশিকাঁথার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ঘুরে দেখেন ও তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
একজন নারী কয়েদি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “জেলা প্রশাসক স্যার, জেল সুপার ও জেলার স্যারের উৎসাহে আমি নকশিকাঁথা সেলাই শিখেছি। এখন আমি পুরোপুরি এটা তৈরি করতে পারি। জেল থেকে বের হয়ে এই কাজ চালিয়ে যেতে চাই এবং অন্য নারীদেরও শেখাতে চাই, যাতে তারাও সাবলম্বী হতে পারে।”
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, বন্দীদের জন্য পুনর্বাসনমূলক কর্মসূচির আওতায় নারীদের নকশিকাঁথা, পুরুষদের ফার্নিচার তৈরি ও উভয়ের জন্য কম্পিউটার প্রশিক্ষণসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মাধ্যমে কয়েদিরা শুধুমাত্র কর্মদক্ষতা অর্জনই করছেন না, বরং তারা বন্দি জীবনের মাঝেও আশা খুঁজে পাচ্ছেন।
নকশিকাঁথা বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্প। এর দেশি-বিদেশি বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বন্দীরা যদি এ শিল্পে দক্ষ হয়ে ওঠে, তবে তারা মুক্তির পর আত্মনির্ভরশীলভাবে সমাজে পুনর্বাসিত হতে পারবেন বলেন জেলা প্রশাসক।
পরিদর্শন শেষে তিনি কারাগারের লাইব্রেরি, কম্পিউটার ল্যাব ও ফার্নিচার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন এবং বিভিন্ন প্রকল্পে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। উপস্থিত ছিলেন জেলা সুপার, জেলার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, চিকিৎসকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
এই কার্যক্রমের মাধ্যমে কারাগারের নারী বন্দীদের হাতে তৈরি নকশিকাঁথা শুধুমাত্র বাণিজ্যিক মানেই পাবে না, বরং তাদের জীবনের নতুন সম্ভাবনার দুয়ারও খুলে দেবে।