রমজান: আত্মশুদ্ধি ও ইবাদতের মহিমান্বিত মাস, রমজানের পূর্ণতা অর্জনে আমাদের করণীয় কি?

- আপডেট সময় ০৫:১৬:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫
- / 33
রমজান – রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এ মাস শুধু উপবাসের নয়, বরং এটি আত্মশুদ্ধির এক অনন্য সুযোগ। আল্লাহ আমাদের ওপর রোযাকে ফরজ করেছেন, যেন আমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারি। কিন্তু শুধুমাত্র উপবাস থাকাই যথেষ্ট নয়, বরং রমজানের প্রকৃত হক আদায়ে প্রয়োজন আরও গভীর আত্মউপলব্ধি ও সৎকর্ম। কীভাবে এই মাসকে সর্বোত্তমভাবে কাজে লাগানো যায়, আসুন জেনে নিই।
রমজান আত্মগঠনের মাস। এ সময় শুধু খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকাই রোযার উদ্দেশ্য নয়; বরং চিন্তা, আচরণ ও আত্মার পরিশুদ্ধিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত – ধৈর্য ধারণ, মন্দ থেকে বিরত থাকা এবং কল্যাণকর কাজের অভ্যাস গড়ে তোলা।
ইবাদতের প্রতি গুরুত্বঃ রমজান আমাদের ইবাদতে আরও মনোযোগী হওয়ার শিক্ষা দেয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথভাবে আদায়ের পাশাপাশি তারাবীহ, তাহাজ্জুদ ও নফল নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বিশেষ করে শেষ দশ রাত ইবাদতের মাধ্যমে কাটানো অধিক সওয়াবের কাজ।
কুরআনের সাথে গভীর সম্পর্কঃ রমজান হলো কুরআন নাজিলের মাস। তাই প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করা, এর অর্থ অনুধাবন করা এবং জীবনে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা উচিত।
আত্মসংযম ও উত্তম আচরণঃ রমজানের অন্যতম শিক্ষা হলো আত্মসংযম। শুধু পানাহার থেকে দূরে থাকা যথেষ্ট নয়, বরং রাগ, গীবত, মিথ্যা ও পরনিন্দা থেকে বিরত থাকা জরুরি। উত্তম ব্যবহার ও ধৈর্যের মাধ্যমে প্রকৃত রোযার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে হবে।
দান-সদকার ফজিলতঃ রমজান দানশীলতার মাস। যাকাত ও ফিতরা আদায় করা ছাড়াও দরিদ্রদের সাহায্য করা, অভাবীদের পাশে দাঁড়ানো এবং দান-সদকার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রচেষ্টা করা উচিত।
দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনাঃ রমজান মাগফিরাতের মাস। এ সময় বেশি বেশি দোয়া করা, গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং তওবা করা উচিত। বিশেষ করে ইফতার ও শেষ রাতের দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ সময়গুলো কাজে লাগানো উচিত।
পরিবারের সাথে ইবাদতঃ রমজান আত্মউন্নয়নের পাশাপাশি পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করারও সময়। পরিবারের সবাই মিলে ইবাদত করা, সন্তানদের রোযার প্রতি আগ্রহী করা এবং কুরআন শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা জরুরি।
শাওয়ালের ছয় রোযার ফজিলতঃ রমজানের পর শাওয়ালের ছয়টি নফল রোযা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোযা রাখে এবং এরপর শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখে, সে যেন সারা বছর রোযা রাখল।’ (সহিহ মুসলিম)
রমজান আমাদের আত্মশুদ্ধি ও সৎকর্মের পথ দেখায়। যদি আমরা এই মাসের হক যথাযথভাবে আদায় করতে পারি, তবে এটি আমাদের জীবন বদলে দিতে পারে। আসুন, রমজানের প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে তাকওয়াপূর্ণ জীবন গড়ে তুলি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের ফজিলত অর্জনের তৌফিক দান করুন। আমিন।