গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে বস্ত্র ও পোশাক শিল্পে সংকটের শঙ্কা
দেশের বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা নতুন করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই রপ্তানি বাজারে স্থবিরতা বিরাজ করছে, উৎপাদন ব্যয় ক্রমাগত বাড়ছে। এই অবস্থায় গ্যাসের মূল্য প্রতি ঘনমিটারে ৭৫ টাকা করা হলে শিল্প খাতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক খাতের সংকট, শ্রম অসন্তোষ ও নিরাপত্তাজনিত নানা সমস্যায় বাংলাদেশের শিল্প খাতের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হলে বছরে অতিরিক্ত ১৭ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে, যা শিল্পের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহের বড় একটি অংশ শিল্প খাতে ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে ৩০% যায় পোশাক শিল্পে। গ্যাসের মূল্য যদি প্রতি ঘনমিটারে ৪৫ টাকা বাড়ানো হয়, তাহলে পোশাক খাতের বার্ষিক ব্যয় প্রায় ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বাড়বে। একইভাবে, টেক্সটাইল শিল্পের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর খরচ বছরে ১১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে পোশাক খাতে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি প্রায় ৯% কমেছে, আর বস্ত্র খাতে কমেছে ১৮%। এমন পরিস্থিতিতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি বিনিয়োগে আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং শিল্পকে সংকটে ঠেলে দেবে।
বস্ত্র ও পোশাক শিল্প দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি। এটি শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অনবদ্য ভূমিকা রেখে চলেছে। গত পাঁচ বছরে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ডিজেলের মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, যা উৎপাদন খরচ প্রায় ৫০% বৃদ্ধি করেছে।
বৈশ্বিক বাজারে পোশাক রপ্তানিতে মন্দাভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বে পোশাক আমদানি ৫% কমতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির মূল্যও হ্রাস পেয়েছে।