“ঢাকায় ১৫০ কোটি ডলারের আমদানি: নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন”

- আপডেট সময় ১১:৩৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
- / 13
পাল্টা শুল্ক কমানোর কৌশলগত উদ্যোগ হিসেবে বাংলাদেশ আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অন্তত ১৫০ কোটি ডলারের অতিরিক্ত পণ্য আমদানি করার প্রতিশ্রুতি দিতে যাচ্ছে। সরকারের আশাবাদ, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস পাবে এবং পাল্টা শুল্কের হার প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় কম থাকবে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে নীতিতে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন, সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ তার অবস্থানকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই আমদানি তিন বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
এই লক্ষ্য সামনে রেখে বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি সরকারি প্রতিনিধি দল গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছে। প্রতিনিধি দলে রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী। ওয়াশিংটনে ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (USTR) কার্যালয়ের সঙ্গে তিন দিনের আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন তারা, যেখানে পারস্পরিক বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। আলোচনার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য বাংলাদেশের পণ্যের ওপর বিদ্যমান ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক হ্রাসের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করানো।
বর্তমানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮৭০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, বিপরীতে আমদানি হয়েছে মাত্র ২৭০ কোটি ডলারের পণ্য। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬০০ কোটি ডলারে। এই ঘাটতি কমাতে সরকার যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানি থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা নিয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঁচ বছরের জন্য প্রতি বছর সাত লাখ টন গম আমদানির জন্য একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) সই হয়েছে। এছাড়া এলএনজি ও সামরিক সরঞ্জামসহ বিভিন্ন খাতেও আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তাতে করে আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার বাড়বে। তবে আলোচনায় আপাতত দেড় বিলিয়ন ডলার বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ভিয়েতনামের মতো একটি দেশ ১২৩ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি নিয়েও পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছে। সেখানে বাংলাদেশের ঘাটতি মাত্র ছয় বিলিয়ন ডলার, যা খুব সহজেই কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই আশা করা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ওপর শুল্কহার ভিয়েতনামের চেয়েও কম হতে পারে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র শুল্ককে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তার অংশ হিসেবে বিবেচনা করছে। তাদের মতে, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এখন জাতীয় নিরাপত্তার অপরিহার্য উপাদান। তাই আলোচনায় এই দৃষ্টিভঙ্গি মাথায় রেখেই কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে।
সরকারি পর্যায়ের আলোচনার পাশাপাশি দেশের ব্যবসায়ীদের একটি বেসরকারি প্রতিনিধি দলও নিজ উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র সফর করছে। বিশেষ করে তুলা, সয়াবিন ও গম আমদানির বিষয়ে ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেলের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার ঢাকা ছেড়েছে। তারা ন্যাশনাল কটন কাউন্সিলের (NCC) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। জানা গেছে, তিন বছর আগে বাংলাদেশ ১.৮ বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করত। সেই অবস্থানে ফিরতে পারলে প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি কমে যাবে।
এছাড়া গম ও সয়াবিন আমদানির লক্ষ্যে দেশীয় ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন এবং আরও কিছু প্রতিনিধি সরাসরি কিংবা অনলাইনে আলোচনা করবেন। এই বৈঠকগুলোর মাধ্যমে নতুন আমদানি চুক্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে আরও ভারসাম্যপূর্ণ করে তুলতে সহায়ক হতে পারে।