হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি: জ্বালানি সংকটে বিপদে বাংলাদেশ

- আপডেট সময় ০১:১৬:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫
- / 5
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত নতুন করে উত্তেজনা বাড়িয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। এই উত্তেজনার ছায়া ইতোমধ্যেই পড়েছে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে। বিশেষ করে ইরান হুমকি দিয়েছে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্যপথ হরমুজ প্রণালি বন্ধের যা জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রণালি বন্ধ হলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিশ্বজুড়ে গ্যাস ও তেলের জোগান। বাংলাদেশও থাকবে না এই সংকটের বাইরে। কারণ, দেশের এলএনজি আমদানির প্রধান উৎস কাতার ও ওমান, এবং অধিকাংশ কার্গোই আসে হরমুজ প্রণালি হয়ে।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে কাতার থেকে ৪০টি এলএনজি কার্গো আসার কথা, যার মধ্যে ৩৪টি ইতোমধ্যে দেশে পৌঁছেছে। ওমান ও কাতারের সঙ্গে রয়েছে যথাক্রমে ১০ ও ১৫ বছরের আমদানি চুক্তি। কিন্তু হরমুজ প্রণালির বর্তমান পরিস্থিতি ভবিষ্যতের সরবরাহ ব্যবস্থায় অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।
জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত সরবরাহে কোনো ব্যাঘাত হয়নি এবং কাতারের সরবরাহকারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে বিকল্প ভাবনা জরুরি হয়ে পড়বে।
এলএনজিনির্ভর শিল্প খাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে। বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে জাহাজ পরিচালনায় ঝুঁকি বাড়বে। এতে বীমা খরচও আকাশছোঁয়া হবে, যার ফলে এলএনজির দাম বেড়ে যাবে।
ইতোমধ্যেই বিশ্ববাজারে এর প্রভাব স্পষ্ট। ইরান-ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলার কারণে একদিনের ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ, ব্যারেলপ্রতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৮.৫ ডলারে। চলমান সংকট অব্যাহত থাকলে তেলের দাম ১০০ থেকে ১৩০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশে গ্যাসের বড় অংশ ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে। এলএনজির দাম বাড়লে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে, পণ্যের দাম বাড়বে, আর বিদেশি ক্রেতারাও অর্ডার কমাতে পারেন যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দিতে পারে।
উল্লেখ্য, কাতার, সৌদি আরব, আমিরাতসহ পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর জ্বালানি রপ্তানির প্রধান পথ হরমুজ প্রণালি। প্রতিদিন এই রুট দিয়ে যায় প্রায় ২ কোটি ব্যারেল তেল ও বিপুল পরিমাণ এলএনজি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ভারত, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং বাংলাদেশ এই রুটের ওপর নির্ভরশীল।