১১:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম :
নিজামী-মীর কাসেম-সালাউদ্দিন কাদেরকে মিথ্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে: মির্জা ফখরুল ২০২৩ সাল থেকে ইসরায়েলের যুদ্ধের খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৯ থেকে ৬৭ বিলিয়ন ডলার। মার্কিন সেনা ও সিআইএ এজেন্টদের বহিষ্কারের চিন্তা কলম্বিয়া প্রেসিডেন্ট পেত্রোর পেন্টাগনের বড় চুক্তি পেল ট্রাম্পের ছেলের ড্রোন কোম্পানি কেন ট্রাম্প-পুতিনের বুদাপেস্ট বৈঠক বাতিল হলো? হুমকিতে বিশ্বব্যাপী পোলিও টিকাদান কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রকে ভেনেজুয়েলার হুঁশিয়ারি: “আমাদের হাতে ৫ হাজার রুশ ক্ষেপণাস্ত্র” সিইসির সঙ্গে বিএনপির বৈঠক বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, গভীর সমুদ্রে যাত্রা নিষেধ আতলেতিকোর জালে ১৪ মিনিটে ৪ গোল, দাপুটে জয়ে আর্সেনাল

শঙ্কায় অর্থনীতি: বাড়তে পারে চরম দারিদ্র্য, কমবে প্রবৃদ্ধি – বিশ্ব ব্যাংক

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১০:৪৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
  • / 63

ছবি: সংগৃহীত

 

বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ ‘ম্যাক্রো পভার্টি আউটলুক’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের চরম দারিদ্র্যের হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে পারে। মূল্যস্ফীতির চাপে জনজীবন যেখানে নাজেহাল, সেখানে কর্মসংস্থানের সংকট পরিস্থিতিকে আরও দুর্বিষহ করে তুলছে।

বিশ্বব্যাংক মনে করছে, উচ্চমূল্যের বাজার এবং কমে যাওয়া চাকরির সুযোগ স্বল্প আয়ের মানুষদের বড় ধরনের সংকটে ফেলছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে প্রায় ৪ শতাংশ শ্রমিক তাদের চাকরি হারিয়েছেন। একই সময়ে স্বল্প দক্ষ শ্রমিকদের মজুরি কমেছে ২ শতাংশ এবং উচ্চ দক্ষদের ক্ষেত্রে এই হার ০.৫ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

এই প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস, দেশের চরম দারিদ্র্যের হার ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯.৯ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। অর্থাৎ আরও বহু মানুষ দারিদ্র্যের অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই অবস্থায় দেশের আয়ের বৈষম্য আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। জিনি সহগের মাধ্যমে মাপা এই বৈষম্য সূচক চলতি অর্থবছরে ০.৫ পয়েন্ট বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলো তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। অন্যদিকে, দেশের অধিকাংশ পরিবারই জীবিকা নির্বাহে নিজেদের সঞ্চয় ভাঙতে বাধ্য হবে। পাঁচটির মধ্যে তিনটি পরিবার এই কঠিন বাস্তবতায় পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাজস্ব ঘাটতির বিষয়েও নেতিবাচক পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের রাজস্ব ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪.৪ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। সরকারের মূলধন ব্যয় কমলেও এর বাস্তব সুফল খুব একটা মিলবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। ভর্তুকি ও সুদের বাড়তি ব্যয়ের কারণে এই ঘাটতি আরও বাড়তে পারে।

বিশ্বব্যাংকের মতে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৩ শতাংশে নামতে পারে। জানুয়ারিতে এই হার ৪.১ শতাংশ হবে বলে জানানো হলেও নতুন হিসাব আরও হতাশাজনক। তবে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৪.৯ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৮ শতাংশে দাঁড়াবে। এর আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) জানিয়েছিল, প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩.৯ শতাংশ। অর্থাৎ সব দাতা সংস্থার পূর্বাভাসেই প্রবৃদ্ধির নিম্নগতি স্পষ্ট।

বিশ্বব্যাংক সতর্ক করে বলেছে, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা বিনিয়োগ ও রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল এবং পেমেন্ট ঘাটতি কিছুটা কমেছে, যা পরিস্থিতির সামান্য ইতিবাচক দিক।

বাংলাদেশের অর্থনীতির সামনে তাই এক অনিশ্চিত পথচলার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সংকট মোকাবিলায় কার্যকর নীতি গ্রহণ না করলে দারিদ্র্য ও বৈষম্যের দুষ্টচক্র থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

নিউজটি শেয়ার করুন

শঙ্কায় অর্থনীতি: বাড়তে পারে চরম দারিদ্র্য, কমবে প্রবৃদ্ধি – বিশ্ব ব্যাংক

আপডেট সময় ১০:৪৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

 

বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ ‘ম্যাক্রো পভার্টি আউটলুক’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের চরম দারিদ্র্যের হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে পারে। মূল্যস্ফীতির চাপে জনজীবন যেখানে নাজেহাল, সেখানে কর্মসংস্থানের সংকট পরিস্থিতিকে আরও দুর্বিষহ করে তুলছে।

বিশ্বব্যাংক মনে করছে, উচ্চমূল্যের বাজার এবং কমে যাওয়া চাকরির সুযোগ স্বল্প আয়ের মানুষদের বড় ধরনের সংকটে ফেলছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে প্রায় ৪ শতাংশ শ্রমিক তাদের চাকরি হারিয়েছেন। একই সময়ে স্বল্প দক্ষ শ্রমিকদের মজুরি কমেছে ২ শতাংশ এবং উচ্চ দক্ষদের ক্ষেত্রে এই হার ০.৫ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

এই প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস, দেশের চরম দারিদ্র্যের হার ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯.৯ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। অর্থাৎ আরও বহু মানুষ দারিদ্র্যের অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই অবস্থায় দেশের আয়ের বৈষম্য আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। জিনি সহগের মাধ্যমে মাপা এই বৈষম্য সূচক চলতি অর্থবছরে ০.৫ পয়েন্ট বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলো তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। অন্যদিকে, দেশের অধিকাংশ পরিবারই জীবিকা নির্বাহে নিজেদের সঞ্চয় ভাঙতে বাধ্য হবে। পাঁচটির মধ্যে তিনটি পরিবার এই কঠিন বাস্তবতায় পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাজস্ব ঘাটতির বিষয়েও নেতিবাচক পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের রাজস্ব ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪.৪ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। সরকারের মূলধন ব্যয় কমলেও এর বাস্তব সুফল খুব একটা মিলবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। ভর্তুকি ও সুদের বাড়তি ব্যয়ের কারণে এই ঘাটতি আরও বাড়তে পারে।

বিশ্বব্যাংকের মতে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৩ শতাংশে নামতে পারে। জানুয়ারিতে এই হার ৪.১ শতাংশ হবে বলে জানানো হলেও নতুন হিসাব আরও হতাশাজনক। তবে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৪.৯ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৮ শতাংশে দাঁড়াবে। এর আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) জানিয়েছিল, প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩.৯ শতাংশ। অর্থাৎ সব দাতা সংস্থার পূর্বাভাসেই প্রবৃদ্ধির নিম্নগতি স্পষ্ট।

বিশ্বব্যাংক সতর্ক করে বলেছে, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা বিনিয়োগ ও রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল এবং পেমেন্ট ঘাটতি কিছুটা কমেছে, যা পরিস্থিতির সামান্য ইতিবাচক দিক।

বাংলাদেশের অর্থনীতির সামনে তাই এক অনিশ্চিত পথচলার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সংকট মোকাবিলায় কার্যকর নীতি গ্রহণ না করলে দারিদ্র্য ও বৈষম্যের দুষ্টচক্র থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।