উর্ধ্বমুখী কিশোর অপরাধ! মাত্র ২ বছরে গ্যাং সংখ্যা বাড়ল ৩৭%

- আপডেট সময় ১১:৩২:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
- / 35
বাংলাদেশে কিশোর গ্যাং এখন আর শুধু মহল্লার আড্ডায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং তারা রীতিমতো সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রে রূপ নিচ্ছে। হত্যা, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে জমি দখলের মতো গুরুতর অপরাধেও যুক্ত হচ্ছে তারা। বিগত দুই বছরে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩৭ শতাংশ, যা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য বড় হুমকি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা ২৩৭টি, যেখানে দুই বছর আগেও ছিল ১৭৩টি। সদস্যসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াই হাজারে, যা পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ।
এই গ্যাংগুলোর সদস্যদের বয়স সাধারণত ১২ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যানিটিজের গবেষণায় উঠে এসেছে, ১২-১৬ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা ছয় বছরে ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। একই ধারায় জেইটিআইআর-এর গবেষণাও বলছে, নগর এলাকায় শিশুদের ৭৫ শতাংশই কোনো না কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
তাদের অপরাধের ধরনও নানাবিধ মাদকাসক্তি, চুরি, অস্ত্র বহন, ধর্ষণ, হত্যা, এমনকি চাঁদাবাজিতেও সক্রিয়। পল্লবী, মিরপুর, তেজগাঁও, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় এদের দৌরাত্ম্য স্পষ্ট। একাধিক কিশোর রয়েছে যাদের নামে একাধিক মামলা, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও অভিযোগ রয়েছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ করে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কিশোররা অনেক সময় অপরাধীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, দরিদ্রতা, পারিবারিক অবহেলা এবং শিক্ষার অভাব তাদের অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান মনে করেন, “এ সমস্যার সমাধানে পরিবার, সমাজ, সরকার এবং বেসরকারি সংগঠনগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। কিশোরদের শাস্তির চাইতে পুনর্বাসনে গুরুত্ব দিতে হবে।”
সরকারি নীতিনির্ধারক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সমাজকেও সচেতন হতে হবে। গবেষণা, পর্যবেক্ষণ ও মনো-সামাজিক সহায়তা বাড়িয়ে কিশোরদের অপরাধ থেকে দূরে রাখাই হতে পারে একমাত্র পথ। নয়তো আজকের এই অবহেলিত কিশোরদের হাতেই তৈরি হবে আগামী দিনের অপরাধজগত।