ঢাকা ১২:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার অস্ত্রবিরতির আলোচনা ইসরায়েলের হামলা ও অবরোধে গাজায় একদিনেই ৭১ জনের প্রাণহানি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হেফাজতের বৈঠক: নীতিগত আলোচনা আবহাওয়ার সতর্কতা: ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস আওয়ামী লীগের আমলে ব্যাংকের ৮০ শতাংশ অর্থ পাচার হয়ে গেছে অর্থ উপদেষ্টা রেলপথ গুলোকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে চায় সরকার আরো ১৪ রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা কুষ্টিয়ায় হত্যা মামলার আসামি ধরতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের ওপর হামলা, এসআই গুরুতর আহত নোয়াখালীতে ৬ হাজার পিস ইয়াবাসহ ২ মাদক কারবারি আটক নিরাপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয় নিশ্চিত করতেই চার্জশীট দিতে দেরী হচ্ছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

অসময়ে ভয়াবহ মধুমতির ভাঙন: লোহাগড়ার চারটি গ্রাম বিলীন, আতঙ্কে এলাকাবাসী

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১২:২৪:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
  • / 64

ছবি সংগৃহীত

 

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর, মাকড়াইল, রামচন্দ্রপুর ও নওখোলা গ্রামের শতাধিক পরিবার এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি। অসময়ে মধুমতি নদীর ভাঙনে ইতোমধ্যে বহু বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, আশ্রয়ণ প্রকল্প ও গ্রামীণ সড়কসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি কম থাকা সত্ত্বেও মধুমতির ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে মূলত অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে। পুরনো বাঁধগুলো নদীতে ধসে পড়ছে, জিও ব্যাগে বাঁধ ঠেকানো যাচ্ছে না। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ৭০ বছর বয়সী ইখতিয়ার খান তাঁর ছোট নাতিকে দেখিয়ে বলেন, “ওখানেই ছিল আমাদের ঘরবাড়ি সব নদী নিয়ে গেছে। এবার মনে হয় শেষ সম্বলটুকুও যাবে।”

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেলা বালুর বস্তা অনেক জায়গায় সরে গিয়ে নদীতে তলিয়ে গেছে, ফলে নতুনভাবে ভাঙছে তীর। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত মাকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরও দুটি স্কুল, কয়েকটি মসজিদ ও সড়কপথ।

কাশিপুর গ্রামের আমিনুর মৃধা বলেন, “অবৈধ বালু তুলেই সব শেষ করে দিলো। আগুনে ভিটে থেকে যায়, কিন্তু নদীতে ভাঙলে মাথা গোঁজার ঠাঁইও থাকে না। বউ-বাচ্চা নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না যদি এমনই চলে। আমরা স্থায়ী বাঁধ চাই, জিও ব্যাগে সান্ত্বনা না।”

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গত দুই অর্থবছরে মধুমতির ভাঙন ঠেকাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে আরও ২০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৮টি পয়েন্টকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার সাহা বলেন, “বালু উত্তোলনের কারণে পূর্বের তীর রক্ষা বাঁধ নদীগর্ভে চলে গেছে। ইজারা বন্ধ করা হয়েছে। আমরা আপৎকালীন বরাদ্দ চেয়ে রেখেছি এবং বর্ষা মৌসুমের আগেই যতটা সম্ভব রক্ষা কাজ করতে চাই।”

স্থানীয়দের দাবি, স্থায়ী ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ ছাড়া এই দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়া অসম্ভব। সরকার যেন দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই আশায় বুক বেঁধে আছে মধুমতির পাড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো।

নিউজটি শেয়ার করুন

অসময়ে ভয়াবহ মধুমতির ভাঙন: লোহাগড়ার চারটি গ্রাম বিলীন, আতঙ্কে এলাকাবাসী

আপডেট সময় ১২:২৪:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫

 

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর, মাকড়াইল, রামচন্দ্রপুর ও নওখোলা গ্রামের শতাধিক পরিবার এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি। অসময়ে মধুমতি নদীর ভাঙনে ইতোমধ্যে বহু বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, আশ্রয়ণ প্রকল্প ও গ্রামীণ সড়কসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি কম থাকা সত্ত্বেও মধুমতির ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে মূলত অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে। পুরনো বাঁধগুলো নদীতে ধসে পড়ছে, জিও ব্যাগে বাঁধ ঠেকানো যাচ্ছে না। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ৭০ বছর বয়সী ইখতিয়ার খান তাঁর ছোট নাতিকে দেখিয়ে বলেন, “ওখানেই ছিল আমাদের ঘরবাড়ি সব নদী নিয়ে গেছে। এবার মনে হয় শেষ সম্বলটুকুও যাবে।”

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেলা বালুর বস্তা অনেক জায়গায় সরে গিয়ে নদীতে তলিয়ে গেছে, ফলে নতুনভাবে ভাঙছে তীর। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত মাকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরও দুটি স্কুল, কয়েকটি মসজিদ ও সড়কপথ।

কাশিপুর গ্রামের আমিনুর মৃধা বলেন, “অবৈধ বালু তুলেই সব শেষ করে দিলো। আগুনে ভিটে থেকে যায়, কিন্তু নদীতে ভাঙলে মাথা গোঁজার ঠাঁইও থাকে না। বউ-বাচ্চা নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না যদি এমনই চলে। আমরা স্থায়ী বাঁধ চাই, জিও ব্যাগে সান্ত্বনা না।”

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গত দুই অর্থবছরে মধুমতির ভাঙন ঠেকাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে আরও ২০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৮টি পয়েন্টকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার সাহা বলেন, “বালু উত্তোলনের কারণে পূর্বের তীর রক্ষা বাঁধ নদীগর্ভে চলে গেছে। ইজারা বন্ধ করা হয়েছে। আমরা আপৎকালীন বরাদ্দ চেয়ে রেখেছি এবং বর্ষা মৌসুমের আগেই যতটা সম্ভব রক্ষা কাজ করতে চাই।”

স্থানীয়দের দাবি, স্থায়ী ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ ছাড়া এই দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়া অসম্ভব। সরকার যেন দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই আশায় বুক বেঁধে আছে মধুমতির পাড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো।