ঢাকা ০৭:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
ইউক্রেন যুদ্ধের ড্রোন কৌশল থেকে শিক্ষা নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র – ট্রাম্প ২০২৫ সালে শিল্পের সঙ্গে শিল্পোউদ্যোক্তাদেরও মেরে ফেলা হচ্ছে: বিটিএমএ সভাপতি গঠনমূলক সমালোচনার ওপর জোর দিলেন তারেক রহমান, প্রত্যাশা অবাধ নির্বাচনের আজ বিশ্ব থাইরয়েড দিবস: দ্রুত শনাক্ত করুন, সুস্থ থাকুন ঈদের ছুটিতেও সীমিত পরিসরে ব্যাংক খোলা রাখতে নতুন নির্দেশনা বিএনপি রাজপথে নামলে এই সরকার টিকবে না: গয়েশ্বর বন্দরে অচলাবস্থা: কলম বিরতিতে থেমে গেছে চট্টগ্রাম কাস্টমসের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রথমবারের মতো পুরস্কার জয় করল বাংলাদেশি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আলী’ আলোচনার আশ্বাসে পেট্রোল পাম্প ধর্মঘট প্রত্যাহার বাড়ানো হয়েছে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম

ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি: সম্মানের ভিত্তিতেই চুক্তি চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১২:৪৯:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
  • / 4

ছবি সংগৃহীত

 

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্মানজনক বাণিজ্য চুক্তিতে আগ্রহী ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তবে এই চুক্তি হুমকি দিয়ে নয়, হতে হবে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে বলেছেন ইইউর বাণিজ্য কমিশনার মারোশ সেফকোভিচ।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। তার দাবি, ইউরোপ থেকে আমদানি হওয়া সব পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইইউ জানায়, তারা এখনো আলোচনার টেবিলে আছে এবং দু’পক্ষের জন্য লাভজনক ও ভারসাম্যপূর্ণ সমঝোতা চায়।

সেফকোভিচ বলেন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক অতুলনীয়, এবং তা সম্মানের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়াই উচিত। একই সঙ্গে তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুত। এ প্রসঙ্গে শুক্রবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার ও বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন।

এর আগে একই দিন সকালে ট্রাম্প জানান, ইইউর সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতি না থাকায় তিনি বিরক্ত। ফলে আগামী ১ জুন থেকে বাড়তি শুল্ক কার্যকর হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। সামাজিক মাধ্যমে তিনি লেখেন, “আমি কোনো চুক্তির পেছনে ছুটি না, চুক্তি আমরা ঠিক করেই ফেলেছি।” যদিও পরবর্তীতে ইঙ্গিত দেন, ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো যদি যুক্তরাষ্ট্রে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে, তবে তিনি শুল্ক আরোপে কিছুটা ছাড় দিতে পারেন।

মার্কিন সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ইইউ হলো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার। গত বছর ইইউ যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং আমদানি করেছে ৩৭০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।

ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির কড়া প্রতিক্রিয়া এসেছে ইউরোপ থেকে। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন বলেন, “এই পথে এগিয়ে লাভ নেই, আলোচনাই স্থায়ী সমাধান।” ফ্রান্সের বাণিজ্যমন্ত্রী লরাঁ স্যাঁ-মার্টিন জানান, “আমরা শান্তিপূর্ণ আলোচনায় আগ্রহী, তবে প্রয়োজনে জবাব দিতেও প্রস্তুত।” জার্মান অর্থমন্ত্রী ক্যাথরিনা রাইখে বলেন, “সমাধানে পৌঁছাতে আমাদের সবকিছু করা উচিত।” ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কোফের ভাষ্য, “ইইউর কৌশলের পাশেই আমরা আছি।”

এদিকে ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা এবং হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের গবেষক স্টিফেন মুর জানান, ট্রাম্প সম্ভবত ইউরোপের কয়েকটি দেশকে আলাদা করে আলোচনায় বসতে চাইবেন। তাঁর মতে, ট্রাম্প শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা বিশ্বকে চীনের প্রভাব থেকে আলাদা করতে চান।

উল্লেখ্য, এপ্রিলের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র বেশিরভাগ দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, যার মধ্যে ইইউ থেকে আসা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়। পরে তা স্থগিত করলেও ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখা হয়। চীনের পণ্যে শুল্ক কিছুটা কমানো হলেও ইউরোপের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে ২৫ শতাংশ কর বহাল রয়েছে। জবাবে ইইউ ২০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক দেওয়ার হুমকি দেয়, যদিও সেটি স্থগিত রাখা হয়েছে। বর্তমানে আরও ৯৫ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপের কথা ভাবছে তারা।

সবশেষে, ট্রাম্প অ্যাপলসহ অন্যান্য স্মার্টফোন নির্মাতাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন না করলে অন্তত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।

ট্রাম্পের ঘোষণার পর শুক্রবার ইউরোপের বাজারে পতন দেখা যায়। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক কমে যায় ০.৭ শতাংশ, জার্মানির ড্যাক্স ও ফ্রান্সের কাক ৪০ সূচক পড়ে যায় ১.৫ শতাংশের বেশি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি: সম্মানের ভিত্তিতেই চুক্তি চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন

আপডেট সময় ১২:৪৯:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

 

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্মানজনক বাণিজ্য চুক্তিতে আগ্রহী ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তবে এই চুক্তি হুমকি দিয়ে নয়, হতে হবে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে বলেছেন ইইউর বাণিজ্য কমিশনার মারোশ সেফকোভিচ।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। তার দাবি, ইউরোপ থেকে আমদানি হওয়া সব পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইইউ জানায়, তারা এখনো আলোচনার টেবিলে আছে এবং দু’পক্ষের জন্য লাভজনক ও ভারসাম্যপূর্ণ সমঝোতা চায়।

সেফকোভিচ বলেন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক অতুলনীয়, এবং তা সম্মানের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়াই উচিত। একই সঙ্গে তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুত। এ প্রসঙ্গে শুক্রবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার ও বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন।

এর আগে একই দিন সকালে ট্রাম্প জানান, ইইউর সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতি না থাকায় তিনি বিরক্ত। ফলে আগামী ১ জুন থেকে বাড়তি শুল্ক কার্যকর হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। সামাজিক মাধ্যমে তিনি লেখেন, “আমি কোনো চুক্তির পেছনে ছুটি না, চুক্তি আমরা ঠিক করেই ফেলেছি।” যদিও পরবর্তীতে ইঙ্গিত দেন, ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো যদি যুক্তরাষ্ট্রে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে, তবে তিনি শুল্ক আরোপে কিছুটা ছাড় দিতে পারেন।

মার্কিন সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ইইউ হলো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার। গত বছর ইইউ যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং আমদানি করেছে ৩৭০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।

ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির কড়া প্রতিক্রিয়া এসেছে ইউরোপ থেকে। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন বলেন, “এই পথে এগিয়ে লাভ নেই, আলোচনাই স্থায়ী সমাধান।” ফ্রান্সের বাণিজ্যমন্ত্রী লরাঁ স্যাঁ-মার্টিন জানান, “আমরা শান্তিপূর্ণ আলোচনায় আগ্রহী, তবে প্রয়োজনে জবাব দিতেও প্রস্তুত।” জার্মান অর্থমন্ত্রী ক্যাথরিনা রাইখে বলেন, “সমাধানে পৌঁছাতে আমাদের সবকিছু করা উচিত।” ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কোফের ভাষ্য, “ইইউর কৌশলের পাশেই আমরা আছি।”

এদিকে ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা এবং হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের গবেষক স্টিফেন মুর জানান, ট্রাম্প সম্ভবত ইউরোপের কয়েকটি দেশকে আলাদা করে আলোচনায় বসতে চাইবেন। তাঁর মতে, ট্রাম্প শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা বিশ্বকে চীনের প্রভাব থেকে আলাদা করতে চান।

উল্লেখ্য, এপ্রিলের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র বেশিরভাগ দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, যার মধ্যে ইইউ থেকে আসা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়। পরে তা স্থগিত করলেও ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখা হয়। চীনের পণ্যে শুল্ক কিছুটা কমানো হলেও ইউরোপের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে ২৫ শতাংশ কর বহাল রয়েছে। জবাবে ইইউ ২০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক দেওয়ার হুমকি দেয়, যদিও সেটি স্থগিত রাখা হয়েছে। বর্তমানে আরও ৯৫ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপের কথা ভাবছে তারা।

সবশেষে, ট্রাম্প অ্যাপলসহ অন্যান্য স্মার্টফোন নির্মাতাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন না করলে অন্তত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।

ট্রাম্পের ঘোষণার পর শুক্রবার ইউরোপের বাজারে পতন দেখা যায়। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক কমে যায় ০.৭ শতাংশ, জার্মানির ড্যাক্স ও ফ্রান্সের কাক ৪০ সূচক পড়ে যায় ১.৫ শতাংশের বেশি।