ঢাকা ০২:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খরায় হাহাকার হাওড়ে, পানির সংকটে বিপন্ন মৌলভীবাজারের বোরো ফসল

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১১:৩৯:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
  • / 129

ছবি সংগৃহীত

 

অনাবৃষ্টি আর খরার কারণে মৌলভীবাজারের হাইলহাওড়, কাউয়াদিঘি ও হাকালুকিসহ বেশ কয়েকটি হাওড় অঞ্চলের বিল শুকিয়ে গেছে। ফলে হাওড়পারের বিস্তীর্ণ বোরো জমি পড়েছে ভয়াবহ পানি সংকটে। ধান এখন থোড় আসার পর্যায়ে থাকলেও অনেক জমির ধান হলদে হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের ভাষ্য, ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ফসল হুমকির মুখে।

গত বছর বন্যায় আমন ধানের ক্ষতির পর এবছর কৃষকেরা বোরো চাষেই ভরসা রেখেছিলেন। কৃষি বিভাগের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে এবছর চাষ হয়েছে। সরকার বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করায় ৪৭ হাজার কৃষক উপকৃত হন। মনুনদী প্রকল্পের আওতায় কিছু এলাকায় আগেভাগেই সেচের পানি সরবরাহও করা হয়েছিল। মাঠে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়।

তবে মার্চের শেষ ভাগ থেকে বৃষ্টি না থাকায় ধীরে ধীরে জমি ফেটে যেতে থাকে। সেচ দিতে বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক দুই-তিন কিলোমিটার দূর থেকে পাইপে করে পানি টানছেন। কিন্তু এতেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ফল।

শ্রীমঙ্গলের কৃষক সনজিত সূত্রধর বলেন, “বোরোতেই ভরসা ছিল। কিন্তু পানির অভাবে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।” রাজনগরের প্রদীপ নামে এক কৃষক জানান, “৩৫ কিয়ার জমিতে ফসল দিয়েছি। তোড় আসার সময় পানি না থাকায় ধান শুকিয়ে যাচ্ছে।”

কিছু কৃষকের অভিযোগ, উজানে প্রভাবশালীরা কোদালিছড়ার পানি আটকে রাখায় সংকট আরও বাড়ছে। কাসেমপুরের জলিল মিয়া ও আনসার আহমদ জানান, পানি না থাকায় থোড় ভালোভাবে আসছে না, এবার ধান চিঠা হওয়ার আশঙ্কা।

জেলা হাওড় রক্ষা আন্দোলনের নেতা খসরু মিয়া চৌধুরী বলেন, “ইজারাদাররা বিল শুকিয়ে মাছ ধরছে, এতে পানির স্তর কমে ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে।”

জেলা কৃষি কর্মকর্তা নাগিব মাহফুজ জানান, “খরা বড় সমস্যা হলেও বৃষ্টি হলে কিছুটা উপকার হবে।” এদিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসলাম উদ্দিন জানিয়েছেন, “একনেকে অনুমোদিত একটি সারফেস ওয়াটার প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে সেচ সমস্যা অনেকটা কাটবে।”

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলার ৬২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। উৎপাদনের টার্গেট ছিল ২ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন চাল। তবে চলমান খরায় সেই লক্ষ্য অর্জন এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

খরায় হাহাকার হাওড়ে, পানির সংকটে বিপন্ন মৌলভীবাজারের বোরো ফসল

আপডেট সময় ১১:৩৯:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫

 

অনাবৃষ্টি আর খরার কারণে মৌলভীবাজারের হাইলহাওড়, কাউয়াদিঘি ও হাকালুকিসহ বেশ কয়েকটি হাওড় অঞ্চলের বিল শুকিয়ে গেছে। ফলে হাওড়পারের বিস্তীর্ণ বোরো জমি পড়েছে ভয়াবহ পানি সংকটে। ধান এখন থোড় আসার পর্যায়ে থাকলেও অনেক জমির ধান হলদে হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের ভাষ্য, ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ফসল হুমকির মুখে।

গত বছর বন্যায় আমন ধানের ক্ষতির পর এবছর কৃষকেরা বোরো চাষেই ভরসা রেখেছিলেন। কৃষি বিভাগের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে এবছর চাষ হয়েছে। সরকার বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করায় ৪৭ হাজার কৃষক উপকৃত হন। মনুনদী প্রকল্পের আওতায় কিছু এলাকায় আগেভাগেই সেচের পানি সরবরাহও করা হয়েছিল। মাঠে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়।

তবে মার্চের শেষ ভাগ থেকে বৃষ্টি না থাকায় ধীরে ধীরে জমি ফেটে যেতে থাকে। সেচ দিতে বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক দুই-তিন কিলোমিটার দূর থেকে পাইপে করে পানি টানছেন। কিন্তু এতেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ফল।

শ্রীমঙ্গলের কৃষক সনজিত সূত্রধর বলেন, “বোরোতেই ভরসা ছিল। কিন্তু পানির অভাবে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।” রাজনগরের প্রদীপ নামে এক কৃষক জানান, “৩৫ কিয়ার জমিতে ফসল দিয়েছি। তোড় আসার সময় পানি না থাকায় ধান শুকিয়ে যাচ্ছে।”

কিছু কৃষকের অভিযোগ, উজানে প্রভাবশালীরা কোদালিছড়ার পানি আটকে রাখায় সংকট আরও বাড়ছে। কাসেমপুরের জলিল মিয়া ও আনসার আহমদ জানান, পানি না থাকায় থোড় ভালোভাবে আসছে না, এবার ধান চিঠা হওয়ার আশঙ্কা।

জেলা হাওড় রক্ষা আন্দোলনের নেতা খসরু মিয়া চৌধুরী বলেন, “ইজারাদাররা বিল শুকিয়ে মাছ ধরছে, এতে পানির স্তর কমে ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে।”

জেলা কৃষি কর্মকর্তা নাগিব মাহফুজ জানান, “খরা বড় সমস্যা হলেও বৃষ্টি হলে কিছুটা উপকার হবে।” এদিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসলাম উদ্দিন জানিয়েছেন, “একনেকে অনুমোদিত একটি সারফেস ওয়াটার প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে সেচ সমস্যা অনেকটা কাটবে।”

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলার ৬২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। উৎপাদনের টার্গেট ছিল ২ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন চাল। তবে চলমান খরায় সেই লক্ষ্য অর্জন এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।