ঢাকা ০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পবিত্র ঈদুল আযহায় স্বাস্থ্যসচেতনতা: সুস্থ থাকুন, নিরাপদে ঈদ করুন আর্জেন্টিনার জয় চিলিতে, গোল আলভারেজের ঈদুল আজহা উপলক্ষে ওমানে ৬৪৫ কারাবন্দিকে ক্ষমা দিলেন সুলতান হাইথাম দুবাইয়ে ঈদুল আজহার নামাজ সম্পন্ন, ঈদগাহে মুসল্লিদের ঢল বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ বিলিয়ন ডলারে ফের অন্তঃসত্ত্বা ‘দৃশ্যম’ অভিনেত্রী ঈশিতা দত্ত, প্রকাশ্যে বেবি বাম্প বেলুন, রশি আর জেদ, এই তিন দিয়েই ডুবন্ত যুদ্ধজাহাজ তুলল উত্তর কোরিয়া 🕋 পবিত্র হজ আজ পুলিশের জন্য কেনা হচ্ছে ২০০ গাড়ি

আলুচাষির আর্তনাদ: হিমাগার সিন্ডিকেটের ফাঁদে কৃষকের করুণ পরিণতি

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০১:১৮:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
  • / 23

ছবি: সংগৃহীত

 

বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে সাড়ে সতেরো কোটি মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করা প্রতিটি সরকারের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, মূল্যস্ফীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সব প্রতিকূলতার মাঝেও দেশের মানুষের খাদ্যসংস্থান সম্ভব হয়েছে কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে। অথচ নীতিনির্ধারকদের কাছে বারবার অবহেলার শিকার হচ্ছেন এই কৃষকেরাই।

এবার আলুচাষিরা যে ভয়াবহ সংকটে পড়েছেন, তা যেন কৃষকদের প্রতি নীতিনির্ধারকদের উদাসীনতার চরম উদাহরণ। উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় তারা মারাত্মক লোকসানের মুখে। হিমাগারের মালিকদের সিন্ডিকেট করে ভাড়া বাড়ানো, সংরক্ষণের অনুমতিপত্র নিয়ে জটিলতা সব মিলিয়ে কৃষকেরা যেন এক ভয়ঙ্কর দুষ্টচক্রে আটকে পড়েছেন।

এ বছর আমন ধান কম উৎপাদন হওয়ায় চালের দাম বেড়েছে, কিন্তু শীতকালীন সবজি, পেঁয়াজ ও আলুর উৎপাদন ভালো হওয়ায় সাময়িকভাবে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। কিন্তু কৃষকের দুর্দশা কাটেনি, বরং তাঁদের লোকসান আরও বেড়েছে। বিশেষ করে আলুচাষিরা উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না।

প্রথম থেকেই অনুমান করা হচ্ছিল যে এবার আলুর উৎপাদন বেশি হবে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হিমাগারের মালিকেরা সিন্ডিকেট করে ভাড়া বাড়িয়ে দেন। কৃষকেরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে মানববন্ধন করলেও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। সরকার কিছুটা হিমাগার ভাড়া কমালেও, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে কৃষকের চেয়ে ব্যবসায়ীরা সংরক্ষণে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। কৃষকেরা যখন হিমাগারে আলু রাখতে পারছেন না, তখনই মাঠ পর্যায়ে আলুর দাম নেমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে।

বর্তমানে এক কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ ২২ থেকে ২৫ টাকা, অথচ বাধ্য হয়ে তাঁরা মাঠ থেকে মাত্র ১৪ টাকায় বিক্রি করছেন। এই বিশাল লোকসান কীভাবে তাঁরা সামলাবেন?

হিমাগার সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকেরা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অথচ এর স্থায়ী সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। সরকার যদি একের পর এক ফসলে কৃষকের এই ভয়াবহ লোকসানের দিকটি উপেক্ষা করে, তবে সাময়িকভাবে বাজারের জন্য স্বস্তির হলেও দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য উৎপাদন সংকটে পড়বে।

অতএব, কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা, হিমাগার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা, এবং কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে সংরক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করা এখন সময়ের দাবি। অন্যথায়, কৃষকদের টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে, যা ভবিষ্যতে দেশের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আলুচাষির আর্তনাদ: হিমাগার সিন্ডিকেটের ফাঁদে কৃষকের করুণ পরিণতি

আপডেট সময় ০১:১৮:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫

 

বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে সাড়ে সতেরো কোটি মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করা প্রতিটি সরকারের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, মূল্যস্ফীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সব প্রতিকূলতার মাঝেও দেশের মানুষের খাদ্যসংস্থান সম্ভব হয়েছে কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে। অথচ নীতিনির্ধারকদের কাছে বারবার অবহেলার শিকার হচ্ছেন এই কৃষকেরাই।

এবার আলুচাষিরা যে ভয়াবহ সংকটে পড়েছেন, তা যেন কৃষকদের প্রতি নীতিনির্ধারকদের উদাসীনতার চরম উদাহরণ। উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় তারা মারাত্মক লোকসানের মুখে। হিমাগারের মালিকদের সিন্ডিকেট করে ভাড়া বাড়ানো, সংরক্ষণের অনুমতিপত্র নিয়ে জটিলতা সব মিলিয়ে কৃষকেরা যেন এক ভয়ঙ্কর দুষ্টচক্রে আটকে পড়েছেন।

এ বছর আমন ধান কম উৎপাদন হওয়ায় চালের দাম বেড়েছে, কিন্তু শীতকালীন সবজি, পেঁয়াজ ও আলুর উৎপাদন ভালো হওয়ায় সাময়িকভাবে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। কিন্তু কৃষকের দুর্দশা কাটেনি, বরং তাঁদের লোকসান আরও বেড়েছে। বিশেষ করে আলুচাষিরা উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না।

প্রথম থেকেই অনুমান করা হচ্ছিল যে এবার আলুর উৎপাদন বেশি হবে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হিমাগারের মালিকেরা সিন্ডিকেট করে ভাড়া বাড়িয়ে দেন। কৃষকেরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে মানববন্ধন করলেও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। সরকার কিছুটা হিমাগার ভাড়া কমালেও, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে কৃষকের চেয়ে ব্যবসায়ীরা সংরক্ষণে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। কৃষকেরা যখন হিমাগারে আলু রাখতে পারছেন না, তখনই মাঠ পর্যায়ে আলুর দাম নেমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে।

বর্তমানে এক কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ ২২ থেকে ২৫ টাকা, অথচ বাধ্য হয়ে তাঁরা মাঠ থেকে মাত্র ১৪ টাকায় বিক্রি করছেন। এই বিশাল লোকসান কীভাবে তাঁরা সামলাবেন?

হিমাগার সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকেরা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অথচ এর স্থায়ী সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। সরকার যদি একের পর এক ফসলে কৃষকের এই ভয়াবহ লোকসানের দিকটি উপেক্ষা করে, তবে সাময়িকভাবে বাজারের জন্য স্বস্তির হলেও দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য উৎপাদন সংকটে পড়বে।

অতএব, কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা, হিমাগার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা, এবং কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে সংরক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করা এখন সময়ের দাবি। অন্যথায়, কৃষকদের টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে, যা ভবিষ্যতে দেশের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।