১০:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, বেড়েছে আঞ্চলিক উত্তেজনা

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১১:০১:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
  • / 5

ছবি সংগৃহীত

 

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যকার সীমান্ত আবারও ভয়াবহ সংঘর্ষে কেঁপে উঠেছে। দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি গোলাগুলিতে প্রাণহানি ঘটেছে বহুজনের, যা শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নয়—পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন শঙ্কা তৈরি করেছে।

আফগান তালেবান প্রশাসনের দাবি, পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বিমান হামলার প্রতিশোধ হিসেবেই তারা সীমান্তবর্তী এলাকায় পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছে। তালেবান মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানান, অভিযানে পাকিস্তানের অন্তত ৫৮ সেনা নিহত হয়েছে। তবে ইসলামাবাদের দাবি, নিহতের সংখ্যা ২৩, আর পাল্টা অভিযানে তারা ২০০-রও বেশি তালেবান যোদ্ধা ও সহযোগীকে হত্যা করেছে।

বিজ্ঞাপন

৯ অক্টোবর রাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল ও পাকতিয়া প্রদেশে কয়েক দফা বিস্ফোরণের পর থেকেই উত্তেজনার সূচনা। আফগান সরকার অভিযোগ করে, পাকিস্তান তাদের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করে বিমান হামলা চালিয়েছে। যদিও ইসলামাবাদ সরাসরি অস্বীকার না করলেও বিষয়টি নিশ্চিতও করেনি। পাকিস্তানের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, হামলার লক্ষ্য ছিল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদ।

আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে তারা পাল্টা জবাব দিতে বাধ্য হয়েছে। ভবিষ্যতে পাকিস্তান এমন পদক্ষেপ নিলে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে কাবুল।

অন্যদিকে পাকিস্তান সরকারের বক্তব্য, আফগানিস্তান এখন টিটিপি সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। ইসলামাবাদ বলছে, আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করে টিটিপি পাকিস্তানে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর এসব হামলায় দুই হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

তালেবানের মধ্যস্থতায় একসময় টিটিপির সঙ্গে পাকিস্তানের সাময়িক যুদ্ধবিরতি হয়েছিল, কিন্তু ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেটি ভেঙে যায়। এরপর থেকেই সীমান্তে সংঘর্ষ বেড়ে যায়। ইসলামাবাদের দাবি, তাদের বিমান হামলার লক্ষ্য কেবল টিটিপির ঘাঁটিগুলো।

সংঘর্ষ নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ তালেবান বাহিনীর হামলাকে ‘উসকানিমূলক ও আগ্রাসনমূলক’ বলে নিন্দা করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি বলেন, তালেবান বাহিনী বেসামরিক জনগণের ওপরও হামলা চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

প্রতিবাদ জানিয়ে তালেবান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, পাকিস্তানের হামলার কোনও ন্যায্যতা নেই; নিজেদের ভূখণ্ড ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ইরান, কাতার ও সৌদি আরব দুই দেশকেই সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সতর্ক করেছেন, উত্তেজনা প্রশমিত না হলে পুরো অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের সম্ভাবনা আপাতত কম হলেও সীমান্তে সহিংসতা থামার সম্ভাবনা ক্ষীণ। আফগান সরকারের টিটিপি-সম্পর্কিত অবস্থান পরিষ্কার না হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদি সমাধানও অনিশ্চিত থেকে যাচ্ছে।

সূত্র: আল জাজিরা

নিউজটি শেয়ার করুন

পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, বেড়েছে আঞ্চলিক উত্তেজনা

আপডেট সময় ১১:০১:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

 

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যকার সীমান্ত আবারও ভয়াবহ সংঘর্ষে কেঁপে উঠেছে। দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি গোলাগুলিতে প্রাণহানি ঘটেছে বহুজনের, যা শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নয়—পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন শঙ্কা তৈরি করেছে।

আফগান তালেবান প্রশাসনের দাবি, পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বিমান হামলার প্রতিশোধ হিসেবেই তারা সীমান্তবর্তী এলাকায় পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছে। তালেবান মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানান, অভিযানে পাকিস্তানের অন্তত ৫৮ সেনা নিহত হয়েছে। তবে ইসলামাবাদের দাবি, নিহতের সংখ্যা ২৩, আর পাল্টা অভিযানে তারা ২০০-রও বেশি তালেবান যোদ্ধা ও সহযোগীকে হত্যা করেছে।

বিজ্ঞাপন

৯ অক্টোবর রাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল ও পাকতিয়া প্রদেশে কয়েক দফা বিস্ফোরণের পর থেকেই উত্তেজনার সূচনা। আফগান সরকার অভিযোগ করে, পাকিস্তান তাদের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করে বিমান হামলা চালিয়েছে। যদিও ইসলামাবাদ সরাসরি অস্বীকার না করলেও বিষয়টি নিশ্চিতও করেনি। পাকিস্তানের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, হামলার লক্ষ্য ছিল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদ।

আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে তারা পাল্টা জবাব দিতে বাধ্য হয়েছে। ভবিষ্যতে পাকিস্তান এমন পদক্ষেপ নিলে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে কাবুল।

অন্যদিকে পাকিস্তান সরকারের বক্তব্য, আফগানিস্তান এখন টিটিপি সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। ইসলামাবাদ বলছে, আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করে টিটিপি পাকিস্তানে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর এসব হামলায় দুই হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

তালেবানের মধ্যস্থতায় একসময় টিটিপির সঙ্গে পাকিস্তানের সাময়িক যুদ্ধবিরতি হয়েছিল, কিন্তু ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেটি ভেঙে যায়। এরপর থেকেই সীমান্তে সংঘর্ষ বেড়ে যায়। ইসলামাবাদের দাবি, তাদের বিমান হামলার লক্ষ্য কেবল টিটিপির ঘাঁটিগুলো।

সংঘর্ষ নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ তালেবান বাহিনীর হামলাকে ‘উসকানিমূলক ও আগ্রাসনমূলক’ বলে নিন্দা করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি বলেন, তালেবান বাহিনী বেসামরিক জনগণের ওপরও হামলা চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

প্রতিবাদ জানিয়ে তালেবান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, পাকিস্তানের হামলার কোনও ন্যায্যতা নেই; নিজেদের ভূখণ্ড ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ইরান, কাতার ও সৌদি আরব দুই দেশকেই সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সতর্ক করেছেন, উত্তেজনা প্রশমিত না হলে পুরো অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের সম্ভাবনা আপাতত কম হলেও সীমান্তে সহিংসতা থামার সম্ভাবনা ক্ষীণ। আফগান সরকারের টিটিপি-সম্পর্কিত অবস্থান পরিষ্কার না হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদি সমাধানও অনিশ্চিত থেকে যাচ্ছে।

সূত্র: আল জাজিরা