কিউবার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, উত্তপ্ত হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক

- আপডেট সময় ০৫:১৮:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
- / 4
যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াস-কানেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। শুক্রবার ঘোষিত এই পদক্ষেপে জানানো হয়, কিউবান জনগণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নে প্রেসিডেন্ট দিয়াস-কানেল ‘গুরুতর ভূমিকা’ পালন করেছেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় শুরু হওয়া কিউবা-বিরোধী নীতিরই ধারাবাহিকতা।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ জানান, কিউবার প্রেসিডেন্টসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ২০২১ সালের জুলাইয়ে কিউবায় সংঘটিত সরকারবিরোধী বিক্ষোভের চার বছর পূর্তিতে।
ঐতিহাসিক ওই বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষ খাদ্য, ওষুধ, পানি ও বিদ্যুৎ সংকটের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। এতে এক ব্যক্তি নিহত হন এবং বহু মানুষ আহত হন। সরকার শত শত বিক্ষোভকারীকে আটক করে। এটি ছিল ১৯৫৯ সালের ফিদেল কাস্ত্রোর বিপ্লবের পর দেশটিতে সবচেয়ে বড় জনরোষ।
যুক্তরাষ্ট্র জানায়, ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগে প্রেসিডেন্ট ছাড়াও কিউবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলভারো লোপেজ মিয়েরা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লাজারো আলবার্তো আলভারেজ কাসাসকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে।
একইসঙ্গে বিচার বিভাগ ও কারাগার বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যারা ২০২১ সালের বিক্ষোভে বেআইনি আটক ও নির্যাতনে যুক্ত ছিলেন।
রুবিও বলেন, “কিউবান জনগণ যখন খাদ্য, পানি ও ওষুধের সংকটে ভোগে, তখন শাসকগোষ্ঠী বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে।” তিনি আরও দাবি করেন, বিরোধী দল ইউএনপিএসিইউ-এর নেতা হোসে ড্যানিয়েল ফেরেরের উপর নির্যাতন চলছে এবং তার জীবিত থাকার প্রমাণও দাবি করেন।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্যে, ২০২১ সালের বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার দায়ে এখনো ৩৬০ থেকে ৪২০ জন বন্দি রয়েছেন, যদিও যুক্তরাষ্ট্র বলছে এই সংখ্যা প্রায় ৭০০। তবে গত জানুয়ারিতে ভ্যাটিকানের মধ্যস্থতায় কিছু বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। একই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কিউবার নাম সন্ত্রাসে পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্রের তালিকা থেকে বাদ দেন।
তবে চলতি বছরের এপ্রিলে ফেরেরের প্যারোল বাতিল হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। ট্রাম্প ফের ক্ষমতায় ফিরে কিউবাকে ওই তালিকায় পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
এছাড়া হাভানার ‘টরে কে’ নামে একটি নতুন ৪২ তলা বিলাসবহুল হোটেলকেও নিষিদ্ধ তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে, যাতে মার্কিন মুদ্রা কিউবার ‘দমন-পীড়নে’ ব্যবহার না হয়।
এদিকে কিউবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রদ্রিগেজ এক্স-এ বলেন, “এই নিষেধাজ্ঞা কিউবান জনগণের মনোবল নষ্ট করতে পারবে না।” দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মার্কো রুবিওকে ‘গণনির্বাসন ও বন্দিত্বের পৃষ্ঠপোষক’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অবরোধের মাঝে নতুন এই নিষেধাজ্ঞা কিউবা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।