ঢাকা ০৮:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
নির্বাচনের অভাবেই দেশে অস্থিরতা, দুর্নীতির সুযোগ নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা: মির্জা ফখরুল সেন্ট মার্টিন রক্ষায় পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনায় জোর দিচ্ছে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা নতুন যুগোপযোগী টেলিকম নীতিমালা প্রণয়নের ঘোষণা, বাতিল পুরনো নীতি: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়ে বোগোটায় বৈঠকে ২০টির বেশি দেশ “দেশ এখনও সম্পূর্ণ ফ্যাসিবাদমুক্ত নয়”: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এখনো একটি অদৃশ্য চক্র সক্রিয়ভাবে ষড়যন্ত্র করছে: তারেক রহমান শুল্কযুদ্ধের ছায়ায় কফি-কমলার বাজার, দুশ্চিন্তায় ব্রাজিল-যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা ২-৩টি আসনের প্রস্তাব ও ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে এনসিপি কেনার সাধ্য কারো নেই: নাহিদ ইসলাম গণতন্ত্রকে বিপথে নিতে সংস্কারের নামে সূক্ষ্ম কারচুপি চলছে: ১২ দলীয় জোট প্রধান ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যা: টিটন গাজীর ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত ২১ জেলার কৃষি, তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন ও ফসলি জমি

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০২:০০:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
  • / 6

ছবি: সংগৃহীত

 

গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে দেশের ২১টি জেলার আউশ, আমন বীজতলা, বোনা আমন, পাট, শাকসবজি, ফলের বাগান, পান ও তরমুজ চাষ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। শুধু কৃষকের ফসল নয়, এই বন্যার পানিতে ভেসে গেছে তাদের ঘরবাড়ি, স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ। এ যেন প্রতি বছরের এক নিষ্ঠুর পুনরাবৃত্তি যেখানে প্রস্তুতির অভাবই রয়ে গেছে চিরচেনা।

প্রতিবারের মতো এবারও ঘাটতি ছিল আগাম প্রস্তুতিতে। ত্রাণের চেয়ে প্রয়োজন ছিল টেকসই সমাধান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মাঠে থাকা প্রায় ৭২ হাজার ৭৬ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। বিষয়টি বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কৃষি মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে।

ক্ষয়ক্ষতির চিত্র

ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে আউশ ধান ৪৪,৬৬২ হেক্টর জমি। আমন বীজতলা তলিয়ে গেছে ১৪,৩৯৩ হেক্টরে, বোনা আমন ২৯৭ হেক্টর, শাকসবজি ৯,৬৭৩ হেক্টর, পান ৩৮৭ হেক্টর, পাট ১৩৫ হেক্টর, কলা ১১৪ হেক্টর, পেঁপে ২৯৩ হেক্টর এবং মরিচ ১০৪ হেক্টর জমিতে। এছাড়া গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষের ২৮১ হেক্টর জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা

জেলা অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুমিল্লা ১১,৫৯০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এখানে। এরপর রয়েছে নোয়াখালী ৭,৮০৬ হেক্টর এবং ফেনী ১,৬৫৫ হেক্টর। অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত জেলার মধ্যে রয়েছে চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালি, বরগুনা, ভোলা ও শরীয়তপুর।

আবহাওয়ার কারণ ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ

এ বৃষ্টিপাতের মূল কারণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা ও উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি লঘুচাপ। এর প্রভাবে ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ৮৫ মিলিমিটার। এরপর গোপালগঞ্জে ৮০ মিলিমিটার, বাঘাবাড়ি (রাজশাহী) ৭৩ মিলিমিটার এবং আরিচায় ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়ার উন্নতির সম্ভাবনা

আবহাওয়াবিদ তারিফুল নেওয়াজ কবির জানান, পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের লঘুচাপটি দুর্বল হয়ে মৌসুমি অক্ষের সঙ্গে মিশে গেছে। ফলে বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টিপাত কিছুটা কমে এসেছে। শুক্রবার থেকে ধীরে ধীরে আবহাওয়ার উন্নতি হতে শুরু করেছে। তবে শুক্রবারও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া প্রবাহিত হয়েছে। এদিকে উত্তর বঙ্গোপসাগরে ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কা না থাকায় দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরের ওপর থেকে সতর্কতা সংকেত তুলে নেওয়া হয়েছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন নিয়মিত বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই কেবল সাময়িক ব্যবস্থার বদলে দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণের দাবি তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ, ক্ষয়ক্ষতি কমানো না গেলে কৃষক বাঁচবে না, আর কৃষক না বাঁচলে বাঁচবে না দেশ।

বিষয় :

নিউজটি শেয়ার করুন

টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত ২১ জেলার কৃষি, তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন ও ফসলি জমি

আপডেট সময় ০২:০০:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

 

গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে দেশের ২১টি জেলার আউশ, আমন বীজতলা, বোনা আমন, পাট, শাকসবজি, ফলের বাগান, পান ও তরমুজ চাষ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। শুধু কৃষকের ফসল নয়, এই বন্যার পানিতে ভেসে গেছে তাদের ঘরবাড়ি, স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ। এ যেন প্রতি বছরের এক নিষ্ঠুর পুনরাবৃত্তি যেখানে প্রস্তুতির অভাবই রয়ে গেছে চিরচেনা।

প্রতিবারের মতো এবারও ঘাটতি ছিল আগাম প্রস্তুতিতে। ত্রাণের চেয়ে প্রয়োজন ছিল টেকসই সমাধান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মাঠে থাকা প্রায় ৭২ হাজার ৭৬ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। বিষয়টি বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কৃষি মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে।

ক্ষয়ক্ষতির চিত্র

ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে আউশ ধান ৪৪,৬৬২ হেক্টর জমি। আমন বীজতলা তলিয়ে গেছে ১৪,৩৯৩ হেক্টরে, বোনা আমন ২৯৭ হেক্টর, শাকসবজি ৯,৬৭৩ হেক্টর, পান ৩৮৭ হেক্টর, পাট ১৩৫ হেক্টর, কলা ১১৪ হেক্টর, পেঁপে ২৯৩ হেক্টর এবং মরিচ ১০৪ হেক্টর জমিতে। এছাড়া গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষের ২৮১ হেক্টর জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা

জেলা অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুমিল্লা ১১,৫৯০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এখানে। এরপর রয়েছে নোয়াখালী ৭,৮০৬ হেক্টর এবং ফেনী ১,৬৫৫ হেক্টর। অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত জেলার মধ্যে রয়েছে চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালি, বরগুনা, ভোলা ও শরীয়তপুর।

আবহাওয়ার কারণ ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ

এ বৃষ্টিপাতের মূল কারণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা ও উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি লঘুচাপ। এর প্রভাবে ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ৮৫ মিলিমিটার। এরপর গোপালগঞ্জে ৮০ মিলিমিটার, বাঘাবাড়ি (রাজশাহী) ৭৩ মিলিমিটার এবং আরিচায় ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়ার উন্নতির সম্ভাবনা

আবহাওয়াবিদ তারিফুল নেওয়াজ কবির জানান, পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের লঘুচাপটি দুর্বল হয়ে মৌসুমি অক্ষের সঙ্গে মিশে গেছে। ফলে বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টিপাত কিছুটা কমে এসেছে। শুক্রবার থেকে ধীরে ধীরে আবহাওয়ার উন্নতি হতে শুরু করেছে। তবে শুক্রবারও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া প্রবাহিত হয়েছে। এদিকে উত্তর বঙ্গোপসাগরে ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কা না থাকায় দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরের ওপর থেকে সতর্কতা সংকেত তুলে নেওয়া হয়েছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন নিয়মিত বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই কেবল সাময়িক ব্যবস্থার বদলে দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণের দাবি তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ, ক্ষয়ক্ষতি কমানো না গেলে কৃষক বাঁচবে না, আর কৃষক না বাঁচলে বাঁচবে না দেশ।