ইউরোপজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ, রেকর্ড তাপমাত্রায় বিপর্যস্ত জনজীবন

- আপডেট সময় ১০:৪৬:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫
- / 5
ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলে গত কয়েকদিন ধরে চলা প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। জার্মানিতে তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে, যা রেকর্ড ছুঁয়েছে। ইতালি, স্পেন ও গ্রীসের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ইউরোপের বহু অঞ্চলে রাতের তাপমাত্রাও ৩০ ডিগ্রির নিচে নামছে না, যা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে চরমভাবে ব্যাহত করছে।
তীব্র গরমের প্রভাবে বিভিন্ন দেশে নেওয়া হয়েছে সতর্কতা পদক্ষেপ। জার্মানির শহরগুলোতে মানুষের উপস্থিতি কমে গেছে, অনেক স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে বা সময়ের আগেই ছুটি দেওয়া হচ্ছে। নদী, লেকসহ জলাশয়ের ধারে ভিড় বেড়ে চলেছে স্বস্তি খুঁজতে। বিভিন্ন অঞ্চলে জারি করা হয়েছে তাপপ্রবাহ সতর্কতা।
জার্মান আবহাওয়া দফতরের এক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, এই অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহের পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ। বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে শক্তিশালী উচ্চচাপ, দীর্ঘ সময় ধরে সূর্যের প্রখরতা এবং এর উঁচু অবস্থান মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক ধরনের ‘হিট ডোম’ বা গরমের ছাতা। এর ফলে মেঘ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় এবং গরম বাতাস নেমে এসে বাতাসকে আরও বেশি উত্তপ্ত করে তোলে। সাহারা মরুভূমির ধুলাবালু, ঠান্ডা পানির উৎস কিংবা ভেজা মাটির মতো শীতল প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানগুলোর প্রভাব কমে যাওয়াতেও পরিস্থিতি মারাত্মক আকার নিয়েছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে, স্থানভেদে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। বুধবার হতে পারে এই গ্রীষ্মের সবচেয়ে উষ্ণ দিন, তবে বৃহস্পতিবারের পর গরম কিছুটা কমতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইতালিতে ‘কারোন্তে’ নামের একটি শক্তিশালী উচ্চচাপ অঞ্চল তাপপ্রবাহ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। রোম, ফ্লোরেন্স, বোলোনিয়া এবং পেরুজিয়ায় তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রির মধ্যে রয়েছে। ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই ১৭টি শহরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। পুগলিয়া, বেসিলিকাতা ও সিসিলিতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কায় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কৃষি ও নির্মাণকাজে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এদিকে, আফ্রিকা থেকে আসা গরম বাতাসের কারণে স্পেনের তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। গ্রীসেও কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রির বেশি হওয়ার আশঙ্কায় দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সব প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান বন্ধ রাখা হয়েছে।
এই তাপপ্রবাহ ইউরোপের বহু অঞ্চলের মানুষকে চরম দুর্ভোগে ফেলেছে, যার প্রভাব আগামী কয়েকদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।